সাড়ে ৪ বছরেও মেহেরপুর বাসটার্মিনাল নির্মাণ শেষ হয়নি!

মহাসিন আলী: সাড়ে চার বছর অতিবাহিত হলেও মেহেরপুরের নির্মাণাধীন বাস টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। এতে একদিকে শহরে যেমন যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে; তেমনি একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। বাস মালিক-শ্রমিকরা বলছেন- পৌর কর্তৃপক্ষের গাফিতলির কথা। আর আর্থিক সংকটের মুখে নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছে না দাবি পৌর কর্তৃপক্ষের।

বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি ও মোটরশ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে মেহেরপুর জেলায় দূরপাল্লার পরিবহন ৬০টি এবং লোকাল বাসের সংখ্যা ৮০টি। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলা বাসমালিকদের লোকাল বাসের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার মালিকদের পরিবহন মেহেরপুরে আসা-যাওয়া করে। মেহেরপুরে বাসটার্মিনাল না থাকায় শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ওপর ও যত্রতত্র যানবাহন রাখায় অহরহ ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। তাই মেহেরপুরের নির্মাণাধীন বাস টার্মিনালের নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ হওয়া জরুরি মনে করেন তারা।

মেহেরপুর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, শহরের উপকণ্ঠ মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের দক্ষিণপাশে ৮ দশমিক ৪০ একর জমির ওপর ইউজিআই প্রকল্পের অধীনে মেহেরপুরের বাসটার্মিনাল নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে মাটি ভরাট এবং ২০১০ সালের ১৫ জুনে শুরু হওয়া এক কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বিল্ডিং নির্মাণকাজ শেষ হয়। বিল্ডিঙের ভেতরে দরজা-জানালা ফিটিং, বিদ্যুতায়ন ও লাইটিঙের কাজ বাকি রয়েছে। ওই কাজ শেষ করতে প্রায় এক কোটি টাকা প্রয়োজন। পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে ২৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ব্যয়ে বাসটার্মিনালের সম্মুখভাগে সীমানা পাঁচিল নির্মাণকাজ করা হয়েছে। এছাড়া ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা ব্যয়ে পুলিশ বক্স ও রেস্টুরেন্টের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ মুহূর্তে ইয়ার্ড সম্পন্ন করতে ২ কোটি, সারফেস ড্রেন করতে ৩৪ লাখ ও লাইটিং করতে ৩১ লাখসহ বাকি সমস্ত কাজ শেষ করতে প্রায় ৫ কোটি টাকা দরকার। যা পৌরসভার পক্ষে ব্যয় করা সম্ভব নয়।

মেহেরপুর জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম রসুল এ ব্যাপারে বলেন, মেহেরপুরের জন্য বাসটার্মিনাল খুবই জরুরি। এটা মালিক-শ্রমিকদের কাছে যতোটা গুরুত্বপূর্ণ পৌর কর্তৃপক্ষ ততোটা মনে করছে না। আমরা জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় এ বিষয়টি তুলে ধরেছি। কোনো কাজ হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন- পৌরসভা অপ্রয়োজনীয় গেট নির্মাণে লাখ লাখ টাকা খরচ করছে। অথচ বাসটার্মিনাল নির্মাণ প্রায় ৫ বছর ঝুলে রয়েছে। সেদিকে পৌর কর্তৃপক্ষের খেয়াল নেই। তিনি আরো বলেন, তার জানামতে বাসটার্মিনাল নির্মাণকাজের জন্য এমপি প্রফেসর ফরহাদ হোসেনের মাধ্যমে সরকার ৫০ লাখ টাকা মেহেরপুর পৌর কর্তৃপক্ষকে দিয়েছে। সে টাকার একটি টাকাও বাসটার্মিনালের জন্য খরচ করা হয়নি।

মেহেরপুর জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আহসান হাবিব সোনা বলেন, প্রায় এক বিঘা জমির ওপর যুগযুগ ধরে মেহেরপুরের বাসস্ট্যান্ড হিসেবে কাজ চলছে। এতোটুকু জায়গায় ওপর মেহেরপুর মালিকদের প্রায় দেড়শ গাড়িসহ বাইরের জেলার মালিকদের আসা বাস পার্কিং করা সম্ভব হয় না। মেহেরপুরে বাসটার্মিনাল না থাকায় শ্রমিকরা কষ্টের মধ্যে আছেন। রাস্তার ওপরসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে বাস রাখতে হয়। এতে প্রশাসনসহ অনেকে আপত্তি করে। ছোট-বড় দুর্ঘটনার জন্য মোটরশ্রমিকদের দায়ী করা হয়। তাই বাসটার্মিনাল মোটরশ্রমিকদের দীর্ঘদিনের দাবি। প্রায় ৫ বছর আগে মেহেরপুরে বাসটার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তা আজও শেষ হয়নি। টার্মিনাল নির্মাণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা না হলে মেহেরপুর জেলার মোটরশ্রমিকরা বৃহৎ আন্দোলনের কর্মসূচি দেবেন।

মেহেরপুর পৌর মেয়র মো. মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু বলেন, আর্থিক সংকটের কারণে বাসটার্মিনাল নির্মাণের বাকি কাজ ঝুলে ছিলো। অর্থ সংগ্রহে অনেক স্থানে ধরনা দেয়া ও লেখালেখি করা হয়েছে। টাকার সংস্থান হতে চলেছে। ইতোমধ্যে টেন্ডার হয়ে গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজের আদেশ দেয়া হয়েছে। আশা করা যায় অল্প সময়ের মধ্যে আবারও মেহেরপুরের নির্মাণাধীন বাসটার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হবে।