সার্কের ১৯তম শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত

 

স্টাফ রিপোর্টার: পাকিস্তানে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের ১৯তম শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে না। গতকাল মঙ্গলবার বিবৃতি দিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে সার্ক সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দেয়ার পর একে একে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও ভুটানও একই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। সার্কের সনদ অনুযায়ী সদস্যভুক্ত ৮টি দেশের মধ্যে যে কোনো একটি দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান না গেলে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত হয়ে যায়। এরপর গতকাল সকালে নেপালের সংবাদপত্র দি কাঠমাণ্ডু পোস্ট জানায়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী ৯ ও ১০ নভেম্বর ইসলামাবাদে অনুষ্ঠেয় সার্ক শীর্ষ সম্মেলন স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থগিত হয়ে গেছে।

এদিকে গতকাল দুপুরে এক প্রেসব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, বাংলাদেশে চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ইস্যুতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করায় পাকিস্তানে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অন্য কোনো দেশের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে নয়, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কারণেই পাকিস্তানে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যাচ্ছে না বাংলাদেশ। এছাড়া পাকিস্তানকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, সার্কের সদস্য দেশগুলোর উন্নয়ন, কানেকটিভিটি, সমন্বয়তার মত মতাদর্শের সাথে একটি দেশ অসহযোগিতা করে আসছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নেপালে সার্ক সচিবালয়কে লেখা চিঠিতে সার্কের ১৯তম শীর্ষ সম্মেলন বাংলাদেশের না যাওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে। সার্কের প্রতিষ্ঠাতা দেশ হিসেবে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রতি বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। কিন্তু একটি দেশ আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার প্রতিবাদে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। নতুন পরিবেশে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হলে বাংলাদেশ এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনা পর্যালোচনা করে। আমরা এখন বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক পর্যালোচনা করছি। আগামী ৯ ও ১০ নভেম্বর পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে সার্কের ১৯তম শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিলো। এ সম্মেলনে বাংলাদেশের না যাওয়ার বিষয়টি সার্ক চেয়ারম্যান নেপালের প্রধানমন্ত্রী এবং সার্ক সচিবালয়কে আমরা মঙ্গলবার জানিয়ে দিয়েছি। এছাড়া ভারত, আফগানিস্তান ও ভুটান শীর্ষ সম্মেলনে যাবে না বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত নিজস্ব উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যাবে না এটি বাংলাদেশের নিজস্ব সিদ্ধান্ত এবং এখানে অন্য কোনো দেশের সিদ্ধান্তের প্রভাব নেই। তিনি আরো বলেন, আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে, বঙ্গবন্ধু প্রশ্নে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার প্রক্রিয়া ও পরবর্তীতে তাদের ফাঁসি কার্যকরের প্রশ্নে কখনো আপোস করিনি, কখনো করবোও না।

উল্লেখ্য, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের বিরূপ মন্তব্য করায় এবং এ নিয়ে তাদের সংসদে একটি নিন্দা প্রস্তাব পাস করায় বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়। এছাড়া গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরিতে সেনা ব্রিগেডে হামলায় ১৮ জন ভারতীয় সেনা নিহতের ঘটনায় নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। এই হামলার ঘটনায় পাকিস্তানের হাত রয়েছে এবং এ বিষয়ে প্রমাণ আছে বলে দাবি করে ভারত। বিষয়টি নিয়ে দু দেশের সীমান্তে এখনো যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। এই উত্তেজনার মধ্যেই ভারত ঘোষণা দেয় তারা পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে একঘরে করে ফেলবে। এরপরই পাকিস্তানে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যায়।