সারাদেশে ছাত্র ধর্মঘট আজ : পুলিশ বরখাস্ত

 

স্টাফ রিপোর্টার: নববর্ষে নারী লাঞ্ছণার প্রতিবাদে ছাত্র ইউনিয়নের ডাকে ডিএমপি কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে এক নারী কর্মীকে অমানবিক লাঠিপেটার ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া বিভাগ থেকে নায়েক মো. আনিসকে বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্য আনিস মিরপুর পিওএমে (পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট) কর্মরত ছিলেন। রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতর এলাকায় নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত ফোর্সের সঙ্গে তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন। এদিকে নারী কর্মীকে নিপীড়ন ও নির্দয় আচরণের ঘটনায় সোমবার হাইকোর্টে রিট হয়েছে। সোমবার বিকালে রিটটি করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউনুস আলী আকন।

এ ঘটনা তদন্তে পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরমধ্যে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন্স) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন, পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (ক্রাইম-মেট্রো কাজী জিয়া উদ্দিন ও ডিএমপি সদর দফতরের উপ-পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে গঠিত কমিটির প্রধান হচ্ছেন যুগ্ম কমিশনার (লজিস্টিক ও প্রকিউরমেন্ট) ওয়াইএম বেলালুর রহমান। এ কমিটির অন্য দুই সদস্য গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় এবং অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আসমা সিদ্দিকা মিলি। দুটি কমিটিকেই আগামী ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।

ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানান, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত ছবিতে ওই পুলিশ সদস্যকে এক নারী কর্র্মীর সঙ্গে অমানবিক আচরণ করতে দেখা গেছে। প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়।

এদিকে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যৌন হয়রানির ঘটনায় দায়ীদের শাস্তি দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে। সোমবার দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানায় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন। জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি ও যৌন নিপীড়নকালীন সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের বিচার ও যৌন নিপীড়কদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে আজ দেশব্যাপী ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে প্রগতিশলী ছাত্র জোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য।

গতকাল সোমবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে ডিএমপি কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের হামলা এবং বর্ষবরণে নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারসহ ৬ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। সংগঠনটির সভাপতি হাসান তারেকের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক লাকী আক্তারের পরিচালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ঢাবি শাখার সভাপতি লিটন নন্দী, সাধারণ সম্পাদক তুহিন কান্তি, ঢাকা মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক অনিক রায় প্রমুখ। সংহতি প্রকাশ করেন, যুব ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান, ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ ছাত্র নেতারা।

সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে আজকের ধর্মঘট সমর্থনে একটি মশাল মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহীদ মিনার ঘুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে দুটি জোটের ১৩টি সংগঠনের দেড় শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেয়। এর আগে দুপুরে হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে প্রগতিশলী ছাত্র জোট।

রোববার ছাত্র ইউনিয়নের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের অমানবিক হামলার তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করে বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। ওই ঘটনায় আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য। এছাড়া শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে লেখক-শিক্ষক-শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মী-পেশাজীবী-রাজনৈতিক কর্মীদের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।

টিআইবির নিন্দা: ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের নির্লজ্জ অমানবিক হামলায় তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করে বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি। সোমবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ দাবি জানান।

পেশাজীবীদের প্রতিবাদ সমাবেশ: যৌন সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার এবং নির্যাতক পুলিশের শাস্তির দাবিতে আজ রাজধানীর শাহবাগে প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে লেখক-শিক্ষক-শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মী-পেশাজীবী-রাজনৈতিক কর্মীরা। রোববার অরূপ রাহী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সমাবেশে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক আহমেদ কামাল, মানবাধিকার কর্মী খুশি কবীর, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, অধ্যাপক নাসিম আখতার হুসাইন, অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, শিল্পী অরূপ রাহী, অমল আকাশ, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অধ্যাপক তানজিম উদ্দীন খান, অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, কথা সাহিত্যিক রাখাল রাহাসহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, লেখক, বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক সংগঠকসহ বিশিষ্ট নাগরিকরা বক্তব্য রাখবেন।

গণফোরাম: ছাত্র ইউনিয়নের ডিএমপি কর্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের বর্বরতম হামলার নিন্দা জানিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু।

নাগরিক ঐক্য: আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদ ও শস্তির দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে নাগরিক ঐক্য। বিবৃতিতে বলা হয়, পুলিশের এমন আচরণ মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সংবিধান, প্রচলিত আইন, কিছুই সমর্থন করে না।

নারী সংহতি: পুলিশের হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে বর্ষবরণে যৌন সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন নারী সংহতির সভাপতি শ্যামলী শীল এবং সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা দেব। সোমবার এক বিবৃতিতে তারা এ দাবি জানান।

এছাড়া এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), জাতীয় নারী জোট, পেশাজীবী নারী সমাজ। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করেছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি।

বর্ষবরণের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নারী লাঞ্ছনাকারীদের বিচারের দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রোববার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কার্যালয় ঘেরাও করতে যান বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা।