সাফল্যে চাই সততা, পরিশ্রম

 

স্টাফ রিপোর্টার: বিশ্বের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় ঢাকার সোনারগাঁ হোটেলে প্রবেশ করতেই বিপুল হর্ষধ্বনি ও করতালিতে তাকে স্বাগত জানালেন শিক্ষার্থী ও অতিথিরা। মিসাইলম্যান বক্তব্য শুরু করলেন তখন গোটা কক্ষ জুড়ে শুধু তার বক্তব্যেরই অনুরণন।

শিক্ষার্থীদের জন্য এমন একটি সন্ধ্যা ও উপলক্ষ তৈরি করে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)। নিজেদের ১১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এপিজে আবদুল কালামের সাথে যুব সংলাপ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এমসিসিআই।

নিজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, এ দেশের সব জায়গাতেই পানির প্রাচুর্য রয়েছে। যেখানে গিয়েছি সেখানেই দেখেছি উর্বর ভূমি ও মেধাবী তরুণদের। এ দেশের মোট নাগরিকের অর্ধেকের বেশিই তরুণ। এ তরুণদের মধ্যে রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে যথার্থ পরিকল্পনা করতে হবে। থাকতে হবে বড় স্বপ্ন। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মনোভাব ও উদার মানসিকতা নিয়ে জীবন পথ চলতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে সাফল্য দেখিয়েছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নেও সাফল্য এসেছে। তবে এখনও এ দু খাতে উন্নয়ন করাই এ দেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, ভারত এবং বাংলাদেশ একই ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক। দু দেশের ভৌগলিক অবস্থার মধ্যে মাটির মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। দু দেশের জনগণই দেশপ্রেমের দারুণ নজির স্থাপন করেছে। সর্বোচ্চ ত্যাগ করেছে, জীবন দিয়েছে দেশের স্বাধীনতার জন্য। দু দেশই বিশ্বের বুকে উদার ও শক্তিমান রাষ্ট্র হিসেবে ভূমিকা রাখতে চায়। আমাদের উন্নয়ন লক্ষ্যের সূচকগুলোও প্রায় একই। উভয় দেশ এক সাথে কাজ করলে, অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথ সহজ ও গতিশীল হবে।

আবদুল কালাম বলেন, বিজ্ঞানের চর্চা দারুণ সুখ ও উত্তেজনা তৈরি করে। সৃষ্টির সাফল্যের অনুভূতি বর্ণনাতীত। জগতে যতো বড় উদ্ভাবন-সৃষ্টি দেখা যায়, তার পেছনে ততো বড় কল্পনা ও স্বপ্ন রয়েছে। নিজের চারপাশের সৃষ্টির পেছনের প্রশ্ন খুঁজতে হবে। প্রশ্নের উত্তরের জন্য পরিশ্রম করতে হবে। সাফল্য লাভের জন্য চাই সততা ও কঠোর পরিশ্রম।

ইগনাইটেড মাইন্ডস বইয়ের লেখক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, জীবনের লক্ষ্য অনেক বড় হতে হবে। স্বপ্ন হতে হবে বিশাল। ছোট লক্ষ্য থাকা অপরাধ। সাফল্য ও ব্যর্থতার ব্যবস্থাপনা করতে শিখতে হবে। এর চর্চা করতে হবে। বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের যেকোনো প্রক্রিয়ার পরিকল্পনা, সমন্বয় এবং ব্যবস্থাপনার ধারণা থাকতে হয়। জীবনের ক্ষেত্রেও তা-ই। মানব কল্যাণের জন্য, জনগণের হাসির জন্য পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। চূড়ান্ত সাফল্য আসে ব্যর্থতার পথ ধরেই। তাই ব্যর্থতার সময়ে এবং বিষয়ে ব্যবস্থাপনা করতে পারাটা জরুরি। একজন সত্যিকারের নেতা তার দলের ব্যর্থতা নিজের ঘাড়ে তুলে নেন। পুরো দলকে নিয়ে সমস্যার সমাধান তৈরি করেন। পরে যখন সাফল্য আসে তখন দলভুক্ত অন্যদের সাফল্যের বর্ণনার জন্য সামনে নিয়ে আসেন।

এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি পরমাণু বিষয়টিকে নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখি। পারমাণবিক অস্ত্র আমাদের জন্য শঙ্কা তৈরি করেছে। আমেরিকা ও রাশিয়া ২০২৫ সালের মধ্যে তাদের ৩০ ভাগ পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস করতে সম্মত হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানও এমন একটি সমঝোতায় পৌঁছুতে পারে। অনেকের মতো আমি বিজ্ঞানের মাধ্যমে মানুষের হাসি দেখতে চাই, কান্না নয়। পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্বের স্বপ্ন আমরা দেখতেই পারি।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- এমসিসিআইর সভাপতি রোকেয়া আফজাল রহমান। বক্তৃতাপর্ব সঞ্চালনা করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- এমসিসিআইর সহসভাপতি আনিস এ খান, তাবিথ আওয়াল।