সাত সকালে ডাকাত সন্দেহে তিনজনকে ধরে বেদম প্রহর

জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়ার বাজারে বহিরাগতদের দেখে আটক করে কয়েকজন

আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি: জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়ায় ডাকাত সন্দেহে ৩ জনকে পাকড়াও করে পিটুনি দেয়া হয়েছে এবং অপর একজন পালিয়ে গেছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে আন্দুলবাড়িয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ আহত অবস্থায় ৩ জনকে উদ্ধার করে স্থানীয় চিকিৎসকের নিকট নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থানা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে। পুলিশ বলেছে, প্রাথমিক তদন্তে আটককৃতদের বিরুদ্ধে ডাকাতির সাথে সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ মেলেনি। ওরা ফেনসিডিল চোরাচালানের সাথে জডিত। আরও কোনো অপরাধের সাথে জড়িত আছে কি-না তা তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামের মৃত আকবার আলীর ছেলে সুমন (৪০), জয়নাল আবেদীনের ছেলে চান্দু (৪৫), বজলুর রহমানের ছেলে ওয়াসিম (৩৯) ও অজ্ঞাত অপর সঙ্গীয় একজন গতকাল মঙ্গলবার ভোর পৌনে ৬টার দিকে আলমসাধুযোগে আন্দুলবাড়িয়া সড়কপথ দিয়ে সন্তোষপুর অভিমুখে ফিরছিলো। পথিমধ্যে আন্দুলবাড়িয়া বাজারে পৌঁছুলে আন্দুলবাড়িয়া মাঠপাড়ার মৃত ওমর আলী ম-লের পালিত ছেলে কাশেম আলী, আলী হোসেন ও তার ছেলে আবুল হাশেম আলমসাধু থেকে ৩ জনকে নামিয়ে তাদের বাড়িতে ডাকাতি করার অভিযোগ তুলে আটকে শারীরিক নির্যাতন চালায়। সঙ্গীয় অপর একজন অবস্থা বেগতিক দেখে এ সময় আলমসাধু ফেলে পালিয়ে যায়।
পুলিশ ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীগণ জানান, ডাকাতির অভিযোগ তুলে ৩ জনকে নির্যাতন করাকালে তাদের নিকট থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত কোনো দেশীয় ধারালো অস্ত্র, মালামাল উদ্ধার ও তাদের জাড়িত থাকার কোনো স্বীকারোক্তি মেলেনি। এতো ভোরে কেন? উৎসুক জনতার এ প্রশ্নের উত্তরে আটককৃতরা বলছে- আমরা ডাকাত নয়, ফেনসিডিল পাচারকারী। নিজেদেরকে ফেনসিডিল বহনকারী পরিচয় দিয়ে বলেছে, ফেনসিডিল পাচার করে বাড়ি ফিরছিলাম। পথিমধ্যে ডাকাত সন্দেহে আটক করে নির্যাতন চালায়। পুলিশ এসে উদ্ধার করে। গৃহকর্তা কাশেম আলী ও তার ছেলে আলমসাধু চালক আলী হোসেন দাবি করেছেন, গত সোমবার রাত দেড়টার দিকে ৬ জনের ডাকাতদল তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে দেশীয় ধারালো অস্ত্রের মুখে দু জোড়া সোনার দুল, ২ হাজার টাকা ও র্টচলাইট ডাকাতি করে। হারদাপাড়ার মৃত আব্দুল শেখের ছেলে ভ্যানচালক শাহাজান আলী অভিন্ন ভাষায় দাবি করেন, তার বাড়ি থেকে ডাকাতদল একজোড়া সোনার দুল ও নগদ টাকা ডাকাতি করে তাদের অনুসরণ করে আন্দুলবাড়িয়া বাজার থেকে আটক করা হয়। খবর পেয়ে জীবননগর থানার অফিসার ইনর্চাজ ইনামুল হকের নির্দেশে ওসি (তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন, শাহাপুর ক্যাম্প ইনর্চাজ এসআই ওয়ালিয়ার রহমান ও টআইসি রাহাত হোসেন সঙ্গীয় ফোর্সসহ ডাকাত সন্দেহে নির্যাতনের শিকার ৩ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের নিকট থেকে উদ্ধার করেন। স্থানীয় চিকিৎসকের নিকট নিয়ে ৩ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থানা হেফাজতে নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।
জীবননগর থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন মাথাভাঙ্গাকে বলেন, আটককৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে ডাকাতির সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকার কোনো প্রমাণ মেলেনি। তারা ফেনসিডিল পাচারকারীর হিসেবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আর অন্য কোনো অপরাধের সাথে জড়িত আছে কি-না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে চোর, ডাকাতির অভিযোগ তুলে কাউকে নির্যাতন করা অপরাধ। আটককৃতরা ফেনসিডিল চোরাচালানীর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে। আটককৃতদের গ্রেফতার দেখিয়ে ওই মামলায় আজ বুধবার আদালতে সোর্পদ করা হতে পারে। অপরদিকে মিথ্যা অভিযোগ তুলে নির্যাতন করায় নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইননুাগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।