সাত খুনে র‌্যাবের সম্পৃক্ততা তদন্তে কমিটি গঠনে আদেশ

কমিটি হবে জনপ্রশাসনের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে:র‌্যাব এ হত্যামামলা তদন্ত করতে পারবে না

 

স্টাফ রিপোর্টার: নারায়ণগঞ্জেরপ্যানেল মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণ ও হত্যারঘটনায় র‌্যাবের সম্পৃক্ততাসহ পুরো ঘটনা তদন্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজনঅতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করতেবলেছে হাইকোর্ট। একই সাথের‌্যাবকে বিভাগীয় তদন্ত করতে বলা হয়েছে। এসংক্রান্ত আদেশে বলা হয়, এ ঘটনায় র‌্যাবের যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে এসেছে, তারা কোনোভাবে জড়িত ছিলো কি-না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। তবেঅপহরণ ও হত্যা সংক্রান্ত যে মামলা হয়েছে তাতে র‌্যাবকে সম্পৃক্ত না করতেনির্দেশ দেয়া হয়েছে। সাত খুনের ঘটনা তদন্ত করতে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি)পাশাপাশি সিআইডিকেও দায়িত্ব দিয়েছে হাইকোর্ট। এদিকে বাহিনীর কর্মকর্তাদেরবিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে ইতোমধ্যে র‌্যাব চার সদস্যের একটি কমিটি করেছে, যার প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত মহাপরিচালক আফতাব উদ্দিন আহমেদকে।

প্যানেলমেয়র নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম র‌্যাবের বিরুদ্ধে ৬ কোটি টাকানিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটানোর অভিযোগ উত্থাপনের পরদিন গতকাল সোমবারহাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ নির্দেশ দেয়। নজরুলেরশ্বশুরের বক্তব্য নিয়ে দৈনিক ইত্তেফাকসহ কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিতপ্রতিবেদন বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরেরডিভিশন বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শামীম সরদার। প্রতিবেদনউপস্থাপনের পর হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ নির্দেশ দেন। এছাড়া সাতসদস্যের কমিটিতে কারা থাকবেন তাও ঠিক করে দিয়েছে আদালত।

এসংক্রান্ত আদেশে বলা হয়েছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দুজন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দুজন এবং আইন মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তাকে নিয়ে এ কমিটিকরতে হবে, যার নেতৃত্ব দেবেন জনপ্রশাসনের একজন অতিরিক্ত সচিব। কমিটিরসদস্যদের কেউ উপ-সচিব পদমর্যাদার নিচে হবেন না। আদেশ পাওয়ার সাতদিনের মধ্যেএ কমিটিকে কাজ শুরু করে তা আদালতকে জানাতেও বলা হয়েছে। আদেশে আরো বলা হয়, তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন, ক্ষতিগ্রস্ত, সাক্ষী, প্রত্যক্ষদর্শীসহ প্রয়োজনীয় সকলের সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন। এ ঘটনায় যারাসাক্ষী রয়েছেন, তাদের নিরাপত্তা দিতেও পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি)নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এসময় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি এটর্নি জেনারেলঅ্যাডভোকেট এএসএম নাজমুল হক উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৭ এপ্রিলনারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যানদীতে শরীরে ইটবাঁধা অবস্থায় তাদের ছয় জনের এবং পরদিন আরও একজনের লাশ পাওয়াযায়। এ অপহরণ ও হত্যার জন্য র্যাবকে দায়ী করে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলামরবিবার সাংবাদিকদের বলেন, সিটি করপোরেশনের আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেন ৬কোটি টাকা দিয়ে র্যাবের মাধ্যমে তার জামাতাকে হত্যা করেছে। লিংক রোড থেকেনজরুলদের তুলে নেয়ার সময় কয়েকজন বালু শ্রমিক র্যাব-১১ লেখা গাড়ি দেখেছিলেনবলে জানান তিনি। এছাড়া এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অ্যাডভোকেট চন্দনকেও অপহরণকরে নিয়ে হত্যা করা হয়।

নজরুল পরিবার প্রথমেই ৪ নম্বর ওয়ার্ডেরকাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নূর হোসেনের দিকেঅভিযোগ তুলেছিলেন। মামলায় প্রধান আসামিও করেছিলেন তাকে। শহীদুল দাবি করেন, তারা র্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও পুলিশের ‘বাধায়’ মামলায়তাদের আসামি করতে পারেননি।

পুলিশকে কেন ঘটনা জানালেন না? এ প্রশ্নকরা হলে শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘অপহরণের ঘটনার পরদিন আমি র্যাব-১১-এর সিও, মেজর জাহাঙ্গীর, মেজর রানা এবং নূর হোসেন, ইয়াসিনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধেমামলা করতে পুলিশ সুপারের কাছে যাই। কিন্তু পুলিশ সুপার আমাকে বলেন, সরকারিকর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিলে মামলা হালকা হয়ে যাবে। এরপর তারা ছয়জনআসামির নাম বাদ দিতে বললে আমরা সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দিই।’