সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনী-অবরোধকারী সংঘর্ষ গুলিবিদ্ধ ৩

স্টাফ রিপোর্টার: অশান্ত সাতক্ষীরা। ঘটেছে গুলির ঘটনা। এ সময় পুলিশের গুলি ও জামায়াত-শিবিরের ইটপাটকেল নিক্ষেপে ৩ জামায়াতকর্মী গুলিবিদ্ধসহ এএসপি মনিরুজ্জামানসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে জামায়াত-শিবিরের ৬ নেতাকর্মীকে। আটককৃতরা হলেন জেলা শহরের রইচপুর এলাকার আলমগীর হোসেন (৩০), আশরাফুল সরদার (২৫), শাহিন সরদার (২৫), আবুল হোসেন (২৬), শওকত আলী সরদার (৩৩), আমিনুর রহমান লাভলু (৪০)। পুলিশ গুলিবিদ্ধ লাভলুকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছে। গুলিতে লাভলুর বাম পা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ডাক্তাররা তা কেটে বাদ দিয়েছে। তাকে পুলিশ গ্রেফতার দেখিয়েছে। আটককৃতদেরকে সাতক্ষীরা সদর থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এ নিয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত ৪ দিনে যৌথবাহিনী মোট ৪৮ জন জামায়াত-বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ চলাকালে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি’র সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর সদস্যরা বুলডোজার নিয়ে জেলা সদরের রইচপুরে অভিযান চালায়। এর আগেই যৌথবাহিনীর বুলডোজার অভিযানের খবর পেয়ে এলাকায় প্রবেশের বেশ কয়েকটি সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও রাস্তা কেটে সড়ক অবরোধ করা হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে যৌথবাহিনীর সদস্যরা সড়কে ফেলে রাখা গাছের গুঁড়ি অপসারণের উদ্যোগ নেয়। একই সাথে যৌথবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত অবরোধকারীদের ওপর বেধড়ক লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় তাদের সাথে যৌথবাহিনীর সংঘর্ষ ঘটে। প্রথমে লাঠিচার্জ ও পরে যৌথবাহিনীর সদস্যরা অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায়। গুলির জবাবে অবরোধকারীরা পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় অবরোধকারীরা। ইটের আঘাতে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের এএসপি মনিরুজ্জামান ও কনস্টেবল ইকবাল হোসেন আহত হন।

অপরদিকে যৌথবাহিনীর ছোড়া গুলিতে জামায়াত-শিবিরের ৩ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ গ্রামে ঢুকে নারী-পুরুষকে নির্বিচারে লাঠিপেটা করে বলে জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান জানান। এ সময় গুলিবিদ্ধ শিবিরকর্মী লাভলু রহমানকে আটক করে পুলিশ। পুলিশ বলছে, রইচপুর সড়কে অবরোধ সৃষ্টিকারীদের বেশির ভাগ জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী। ১৮ দলের অবরোধের শেষ দিনে গতকাল সকাল থেকে রইচপুর প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় জামায়াত-শিবিরের কয়েক শ’ নেতাকর্মী। যাদের  মধ্যে শতাধিক নারীকর্মীও ছিলেন। অবরোধকারীরা এ সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও রাস্তা খুঁড়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। ফলে এই সড়কে সব রকমের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে যৌথবাহিনীর সদস্যরা ওই সড়ক মুক্ত করার জন্য অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে। জেলা পুলিশ সুপার মঞ্জুরুল কবির জানান, যৌথবাহিনীর সদস্যরা অবরুদ্ধ রইচপুর সড়ক থেকে ফেলে রাখা গাছের গুঁড়ি অপসারণে গেলে জামায়াত-শিবিরের কয়েক শ’ নারী-পুরুষ ও শিশুরা যৌথবাহিনীর ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ এ সময় নিজেদের রক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে।

জামায়াতকর্মীরা জানিয়েছেন, অভিযানের সাথে সাথে পুলিশ বুলডোজার নিয়ে গ্রামে ঢুকেছে। তাদের আশঙ্কা গত দিনগুলোর মতো এ গ্রামের কারও কারও বাড়িতে হয়তো বুলডোজার চালানো হতে পারে। এদিকে যৌথবাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে এরই মধ্যে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে রইচপুর গ্রাম। সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করলে পথিমধ্যে যৌথবাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তার অজুহাতে সেখানে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান অভিযোগ করেন, যৌথবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে গ্রামের নিরীহ অসহায় মানুষরা দৌড়ে পালাবার চেষ্টা করে। এ সময় তারা তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে জামায়াত নেতা আমিনুর রহমান লাভলু গুলিবিদ্ধ হন।