সাগরে নির্মম নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা

রেক্রসের সহযোগিতায় অবশেষে চুয়াডাঙ্গায় ফিরলো কিশোর শফিকুল

 

স্টাফ রিপোর্টার: দিনে এক দুবেলা ২শ গ্রাম করে পানি আর এক মুঠো ভাতসহ দুটি ঝাল বা মরিচ খেয়েই কেটেছে প্রায় দু-দুটি মাস। ভেসেছে সাগরে। মারপিট করে বলেছে বাড়িতে ফোন করে ৫০ হাজার টাকা দিতে। এ টাকা না দিলে মেরে সাগরে ফেলে দেয়া হবে। ভগ্যিস মায়ানমারের পোশাক পরা একটি নেভিদল উদ্ধার করেছে। না হলে আর বাড়ি ফেরা হতো না।

গতরাত সাড়ে ১১টার দিকে রেডক্রিসেন্টের একটি মাইক্রোবাসযোগে ১৭ বছরের কিশোর শফিকুল ইসলাম। সে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের তিতুদহ ইউনিয়নের গবরগাড়ার আব্দুর বর ফরাজীর ছেলে। বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্টের চুয়াডাঙ্গা ইউনিট নেতৃবৃন্দ তাকে গ্রহণ করে তার ভাই সাইফুল ইসলামের নিকট তুলে দেয়। এ সময় পাচারের শিকার শফিকুল ইসলাম উপরোক্ত বর্ণনা দিয়ে বলে, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার স্বপ্নে গ্রামেরই বাহাদুরের নিকট থেকে চট্টগ্রাম কক্সবাজারের এক পাচারকারীর মোবাইলফোন নম্বর নিয়ে নিজেই সেখানে গিয়েছিলাম। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার স্বপ্নে বাড়ি থেকে ২ হাজার টাকা নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল বের হই। প্রথমে চুয়াডাঙ্গা শহরে। তারপর আলমসাধু যোগে ডাকবাংলায় যায়। সেখান থেকে কেয়া পরিবহনের টিকেট কেটে সাড়ে ৫টার গাড়ি ধরে কক্সবাজারে পৌঁছায়। সেখানে যাওয়ার পর মোবাইলফোনে পৌঁছে গেছি জানালে, আমাকে ওরা লিংরোডের সাউদিয়া কাউন্টারে দাঁড়াতে বলে। সেখান থেকে নিয়ে যায় একজন। এরপরই বুঝি বন্দি হয়ে গেছি। কিছুই করার ছিলো না। সোনাপাড়ার একটি বাড়িতে নিয়ে আটকে রাখার পরদিন তোলে নৌকায়। তারপর উঠতে হয় জাহাজে। সেখানে আমার মতো প্রায় তিনশ জন ছিলো। তার মধ্যে বাংলাদেশি প্রায় দুশ। চুয়াডাঙ্গা উজলপুরের মোফাজ্জেল, আলমডাঙ্গার শিলু ওরফে সবুজ ও আরিফুল নামের দুজনের সাথে পরিচয় হয়। ওদের যে অবস্থা, আমারও। সাগরে নিয়ে দিনের পর দিন কাটতে থাকে। খাবার বলতে দেয়া হতো দুশো গ্রাম করে পানি আর একশো গ্রাম ভাতসহ দুটি মরিচ। পিপাসায় বুক ফেটে গেলেও পানি দিতো না। চাইলেই করা হতো নির্মম নির্যাতন। পায়খানা প্রসাবেরও তেমন সুযোগ দিতো না। যেখানে ১০ জন থাকা যায়, সেখানো রাখা হতো ৫০ জনকে। ঠাসাঠাসি করে বসে থাকলেও কথা বলার সুযোগ দিতো না। কক্সবাজারের একজন আর মিয়ানমারের কয়েকজন মারধর করতো। থাইল্যান্ডেরও কয়েকজন অপহরককারীদের দলে ছিলো।

সাগরে নির্মম নির্যাতনের সময় মাঝে মাঝে মিয়ানমারের নেভীর জাহাজ এলেও উদ্ধার না করে ফিরে যেতো। আজ থেকে ১৮দিন আগে একদল নেভী এসে আমাদের উদ্ধার করে মিয়ানমারে নেয়। সেখান থেকে গত ৮ জুন বাংলাদেশে নেয়া হয়। দেড়শ জনকে দেশে নেয়ার মধ্যে যাদের বয়স ১৭ বছর, তাদেরকে রেডক্রিসেন্টের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। অন্যদের নিজেদের মতো করে বাড়ি ফিরতে বলা হয়েছে। উজলপুর আর আলমডাঙ্গার দুজনও গতকাল কক্সবাজার থেকে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হয়েছে বলে শুনেছি।

গতকাল শফিকুলকে কক্সবাজার থেকে রেডক্রিসেন্টের সহকারী পরিচালক সেলিম আহম্মেদ ও বন্ধুত্বের বিভাগীয় প্রধান আব্দুল্লাহ গাড়িযোগে তাকে চুয়াডাঙ্গায় আনেন। এদেরকে স্বাগত জানান চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান, সদস্য হুমায়ুন কবীর মালিক, আজাদ মালিতা, ইউনিট লেবেল অফিসার ফজলুল করিম, সিনিয়র এসিওয়াই মাবুদ সরকার ও যুব প্রধান উবাইদুল ইসলাম তুহিন।