সহিংসতা ও সংলাপ এক সাথে চলবে না

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলকে আওয়ামী লীগ

 

সমাধানের উপায় জানতে চেয়েছে প্রতিনিধি দলটি

 

স্টাফ রিপোর্টার: ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সফররত প্রতিনিধি দলকে আওয়ামী লীগ বলেছে, বিএনপি-জাময়াত জোট আন্দোলনের নামে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যাসহ সারাদেশে সহিংস কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। আর সহিংসতা ও সংলাপ এক সাথে চলতে পারে না। চলমান নাশকতা বন্ধ না হলে বিএনপি জোটের সাথে কোনো আলোচনা হবে না। এ সময় ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলটি চলমান উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধানের উপায় কী তা জানতে চান।

জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের বৈঠক হয়। তাদেরকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিএনপি-জামায়াত জোটের তাণ্ডবের চিত্র সম্বলিত নথি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলের কাছে দেয় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল।

বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বিএনপি জোটের সাথে সংলাপের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা ইপরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলকে জানিয়ে দিয়েছি, বিএনপি জোট দেশে আন্দোলনের নামে সহিংসতা চালাচ্ছে। তারা যদি সহিংসতা পরিহার করে তাহলে সংলাপের বিষয়টি ভেবে দেখবে সরকার। সন্ত্রাস ও সংলাপকে এক করা যাবে না। সংলাপের আগে সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওদের (ইইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দল) কিছু প্রশ্ন ছিল। আমরা তাদের উত্তর দিয়েছি। তারা আমাদের সাথে একমত হয়েছেন।

গওহর রিজভী বলেন, উপরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলকে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, নির্বাচনের সময় আসলে নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার বিষয়ে আলোচনা করা যাবে। যদি নতুন ধরনের ইনস্টিটিউশন দরকার হয় তা নিয়েও আলোচনা হতে পারে। তবে সে আলোচনা গণতান্ত্রিক পন্থা অনুযায়ী এবং সংবিধানসম্মত হতে হবে। আর এই মুহূর্তে সন্ত্রাস ও সহিংসতা বন্ধ করা ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করা যাবে না বলেও প্রতিনিধিদলকে জানানো হয়। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় এবং সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য যা দরকার তা করা হবে।

গওহর রিজভী বলেন, সহিংসতা বন্ধে সরকার কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশের অবস্থা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। শিগগিরই পরিস্থিতি আরো স্বাভাবিক হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী আগেই বলেছেন যে, নির্বাচনের সময় যখন আসবে, তখন সবার সঙ্গেই কথা বলা যাবে, আলোচনা হবে। আমরা চাই দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু একটি নির্বাচন হোক। সে নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে।

বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের মধ্যে গওহর রিজভীর সাথে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক উপ-কমিটির উপপ্রধান ক্রিশ্চিয়ান দান প্রেদা। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন ক্যারন কারস্কি, জোসেফ উইডেনহোলজার, মারসিন গ্যাসিউইক, লেভেনটি ক্যাসাজি ও ব্রিগিটটি বাটেইলি। বৈঠকের বিষয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এ প্রতিনিধি দলের কেউ কোনো কথা সাংবাদিকদের বলেননি। বিএনপি-জামায়াত জোটের লাগাতার আন্দোলনের মধ্যে সোমবার ঢাকায় আসা এ প্রতিনিধি দলটি গত মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক করে। গত বুধবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সাথে বৈঠক করেন তারা।