সহিংসতায় নিহত ৫১ গাড়ি চালকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেবে সরকার

চুয়াডাঙ্গা থেকে সবজি নিয়ে ঢাকার পথে মানিকগঞ্জে নিহত ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারের নাম তালিকায় নেই

 

স্টাফ রিপোর্টার: সহিংসতায় নিহত ৫১ জন গাড়িচালক ও সহযোগীর (হেলপার) পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেবে সরকার। এরই মধ্যে নিহতদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন আর্থিক সহায়তা দেয়ার এ কার্যক্রম গুছিয়ে এনেছে। ইতোমধ্যেই নিহতদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই তালিকা থেকে পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগের ঠিকানা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরপর আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ঠিক করা হবে। তালিকায় অবরোধ চলাকালে সবজি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে মানিকগঝেঞ্জ পেট্রোল বোমায় নিহত হন চুয়াডাঙ্গা জীবনগর আন্দুলবাড়িয়ার ট্রাকচালক আনিছ ও হেলপার মহিদুল। এদের নাম অবশ্য প্রাথমিক পর্যায়ে চূড়ান্ত করা তালিকায় নেই। এরা গত ২ ডিসেম্বর রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হন।

নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের চলমান আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতায় ২০১১ সালে একজন, ২০১২ সালে দুজন, ২০১৩ সালে ৪২ জন, ২০১৪ সালে ছয়জন বাসচালক ও তাদের সহযোগী নিহত হন। এ তালিকার তথ্যে জানা যায়, সহিংসতায় ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে মার যান প্রশিক্ষণার্থী ড্রাইভার আরিফ। ইসলামী ছাত্রশিবির হাতবোমা মেরে তাকে হত্যা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১২ সালের ২১ এপ্রিল রাতে রাজধানীর কাকরাইলে ঈগল পরিবহনের বাসচালক বদর আলীকে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মারা হয়। তিনি বাসে ঘুমিয়ে ছিলেন। তার পরের দিন ঢাকার অদূরে সাভারে প্রাইভেটকারচালক আ. রশিদকে হরতালকারীরা ইট মেরে মাথায় আঘাত করে এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

২০১৩ সালে সবচেয়ে বেশি ৪০ জন গাড়িচালক ও তাদের সহযোগী অবরোধ ও হরতালকারীদের হাতে নিহত হন। তারমধ্যে ১৬ জানুয়ারি নেত্রকোনায় বাসচালক সোলায়মানকে হত্যা করে হরতালকারীরা, ২৮ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর দত্তেরহাটে বাসচালকের সহযোগী মো. খোকন হরতালকারীদের গুলিতে মারা যান, ১৮ মার্চ ফেনীতে ট্রাকচালক নূর মোহাম্মদ ইটের আঘাতে মারা যান, ২৫ মার্চ চট্টগ্রামে অটোরিকশাচালক মূসা অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৬ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন, ২৮ এপ্রিল বগুড়ায় ট্রাকচালকের সহযোগী শহিদুল ইসলাম খোকন পিকেটারদের হামলায় নিহত হন, ৬ এপ্রিল অটোরিকশাচালক মো. মুসাকে পিকেটাররা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে, ৫ মে হেফাজতের অবরোধে কাঁচপুরে বাসচালক বাবুল গাজী, বাসচালকের সহযোগী জসিমউদ্দিন ও ট্রাকচালক মিজানুল হক, বাসচালক জুয়েল ও সালাউদ্দিন নিহত হন, ৯ মে বগুড়ায় হরতালকারীদের হামলায় বাসচালক খোকন মারা যান, ১৮ মে শুক্কুর আলী নামে আরেক ড্রাইভার নিহত হন, ২৫ জুলাই ফেনীতে হরতালকারীদের গুলিতে বাসচালক আবুল হোসেন নিহত হন, ১৮ সেপ্টেম্বর জামায়াত-শিবিরের হরতালে বগুড়ায় বাসচালক শামসুল হককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, পরেরদিন গাজীপুরে বাসচালক নজরুল ইসলাম আগুনে পুড়ে মারা যান, ২৮ অক্টোবর চাঁদপুরে হরতালকারীদের ছোঁড়া পাথরের আঘাতে বাসচালক ওয়াসিম মারা যান, ২৬ নভেম্বর রাজধানীর হাতিরপুলে অটোরিকশাচালক ছাবেত আলী পিকেটারদের হামলায় নিহত হন, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায় সিএনজিচালক রুবেল নিহত হন, একই দিনে ফেনীতে সিএনজিচালক দুলাল মিয়া হামলায় মারা যান, পরেরদিন পটিয়ায় টেম্পোচালক এরশাদ মারা যান, ২৮ ডিসেম্বর লেগুনাচালক মোজাম্মেল হক রামপুরার বনশ্রীতে নিহত হন, ১ ডিসেম্বর ফেনীতে বাসচালক ইসমাইল হোসেন মারা যান, ২ ডিসেম্বর চকরিয়ায় ট্রাকচালকের সহযোগী রমজান আলী নিহত হন, একই দিনে লালমনিরহাটের পাটগ্রামে চালক মুমিনুর রহমান নিহত হন, পরেরদিন সাভার ইপিজেড এলাকায় কাভার্ডভ্যানচালক মাহবুব হোসেন ও তার সহযোগী মিজান গাড়ি উল্টে নিহত হন, একই দিনে চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকায় কাভার্ডভ্যানচালক মহিবুর নিহত হন, ৫ ডিসেম্বর রাজধানীর সায়েদাবাদে বাসচালকের সহযোগী হাসান আগুনে পুড়ে মারা যান, পরেরদিন ফরিদপুরে ট্রাকচালক মেহেদী হাসান আগুনে পুড়ে হাসপাতালে মারা যান, ৯ ডিসেম্বর কুমিল্লায় ট্রাকচালক আবদুর রহমান ও তার সহযোগী মুজিবুর রহমান আগুনে পুড়ে মারা যান, ১২ ডিসেম্বর ফেনীতে কাভার্ডভ্যানচালক মাহবুব আলম ইটের আঘাতে মারা যান, ১৫ ডিসেম্বর টেকেরহাটে ট্রাকচালক জাহাঙ্গীর আলম অবরোধকারীদের আঘাতে প্রাণ হারান, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিন চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে অটোরিকশাচালক আবদুল আজিজ আগুনে পুড়ে মারা যান, ১৮ ডিসেম্বর গাজীপুরের বাসচালক আল-আমিন নিহত এবং ২২ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে ট্রাকচালক আহসান উল্লাহ হামলার শিকার হয়ে মৃত্যবরণ করেন।

চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি দিনাজপুরের হাকিমপুরে ট্রাকচালক শাহ নেওয়াজ অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান, পরেরদিন কালিয়াকৈরে ট্রাকচালক নূরুজ্জামান অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান, ৬ জানুয়ারি ফেনিতে কাভার্ডভ্যানচালক শাহ আলম হামলার শিকার হয়ে মারা যান, ৭ জানুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে কাভার্ডভ্যানচালক আলী আজগর মুন্সি মারা যান। ৮ জানুয়ারি ফেনীতে অটোরিকশাচালক শাহাবুদ্দিন অগ্নিদগ্ধ হয়ে চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতলে প্রাণ হারান।