সহপাঠিসহ এলাকাবাসীর বিক্ষোভ : হুমায়ুন বাঙ্গাল আত্মগোপন করলেও পুলিশ কাস্টডিতে তার স্ত্রী

নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের : এজাহারে বলা হয়েছে রুবিনাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে ঘটনা ধামাচাপা দিতে মেতে ওঠে হুমায়ুনের লোকজন

স্টাফ রিপোর্টার: স্কুলছাত্রী রুবিনাকে হত্যার অনেক আগে থেকেই হুমায়ুন বাঙাল তাকে দিয়ে গা টিপিয়ে নিতো। কিছুদিন আগে গা টেপানোর সময় রুবিনার চরমভাবে শ্লীলতাহানি করে হুমায়ুন বাঙাল। রুবিনা তার অসহায় দরিদ্র মা চায়না খাতুনকে বললে, তিনি জোর প্রতিবাদ জানিয়ে হুমায়ুন বাঙালের স্ত্রীসহ নিকটজনদের জানিয়েও প্রতিকার পাননি। বরঞ্চ উল্টো খারাপ আচরণ সহ্য করতে হয়।

রুবিনার মা চায়না খাতুন বাদী হয়ে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় দায়েরকৃত মামলার একাংশে উপরোক্ত বর্ণনাও দেয়া হয়েছে। এ মামলার মূল আসামি হুমায়ুন বাঙালের স্ত্রী ৪ নম্বর আসামি আরজিনাকে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানা কাস্টডিতে নেয়া হয়েছে। পুলিশ বলেছে, আরজিনাকে থানায় নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

অপরদিকে এলাকার সাধারণ নারী-পুরুষ কিশোর কিশোরীসহ রুবিনার সহপাঠিরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হাজির হন। তারা জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে হুমায়ুন বাঙালসম্পর্কে নানা তথ্য দিয়ে স্কুলছাত্রী রুবিনা ধর্ষণ ও হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচারের লক্ষে প্রয়োজনীয় পদেক্ষেপ আশা করেন। মিছিলটি জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্টেশন হয়ে দক্ষিণ গোরস্থানপাড়ায় ফেরে। সেখানে আসামিদের পক্ষে পুলিশকে প্রভাবিত করা হয়েছে বলে কে বা কারা প্রচার করলে উত্তেজনা দানা বাধে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না নিলে বড়ধরণের ভাঙচুরের ঘটনা ঘটতো। এরকমই তথ্য দিয়ে স্থানীয়রা বলেছে, রুবিনাকে ধর্ষণ ও হত্যার পর প্রতাপশারী সুদখোর হুমায়ুন নানাভাবে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে। এখন সে ও তার লোকজন টাকা দিয়ে সব কিছু কিনতে চাইছে। এলাকার সাধারণ মানুষ তা হতে দেবে না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থঅ করেই ছাড়বে। দুপুরে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি এলাকার সাধারণ মানুষের সাথেও কথা বলে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান। এ সময় স্থানীয়দের সামনে তিনি ন্যায় বিচারের লক্ষে প্রয়োজনীয় সকল প্রকারের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের হকপাড়া সংলগ্ন দক্ষিণ গোরস্থানপাড়ার রবিউল ইসলাম রবির মেয়ে রিজিয়া খাতুন প্রভাতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র ছিলো। রুবিনার পিতা ঢাকা কুনাবাড়িতে থাকেন। গামেন্টেসে চাকরি করেন। রুবিনার মা চায়না খাতুন গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। প্রতিবেশী হুমায়ুন কবিরসহ এলাকার ব্যাঙ্কার শরিফুল ইসলাস বেবির বাড়ির গৃহপরিচারিকা। গত মঙ্গলবার বেবির বাড়ি গৃহপরিচারিকার কাজ করতে যান চায়না খাতুন। দুপুরে বাড়ির ওঠোনের আমগাছে গামছা দিয়ে বাধা ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে হুমায়ুনের বাড়ির লোকজনই প্রচার করতে থাকে। চয়নাকে হুমায়ুনের মেয়েই প্রথমে মোবাইলফোনে জানায়।

চায়না খাতুনের দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, রুবিনার গায়ে যে জামা পরানো ছিলো সেটা রুবিনার নয়। তাছাড়া এলাকার অনেকেই দেখেছেন, হুমায়ুন কবিরের বাড়ি থেকে রুবিনাকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে আমাদের বাড়িতে নিয়ে রাখতে। পরে হুমায়ুন কবিরের স্ত্রীসহ তার জামাই মেয়েসহ অন্যরা হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করে। রুবিনাকে হত্যার আগে ধর্ষণও করা হয়েছে। তার আলামতও পাওয়া গেছে বলে রুবিনার মা দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ কলেছেন।

অপরদিকে লাশ উদ্ধারের পরদিন বুধবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত করা হয়। এ রিপোর্ট গতকাল পর্যন্ত পুলিশের হস্তগত হয়নি। তবে সূত্র বলেছে, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পুলিশের হাতে দেয়া হবে। ময়নাতদন্তেও হত্যা ও ধর্ষণের আলাম পাওয়া গেছে বলে সূত্র জানালেও দায়িত্বশীল কোনসূত্র এর সত্যতা নিশ্চিত করেনি। তবে সূত্র বলেছে, খুব দ্রুতই রিপোর্ট পুলিশের কাছে দেয়া হবে। পুলিশ বলেছে, লাশ উদ্ধারের পর আইনগতভাবেই ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে। রুবিনার মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলো- মৃত আব্দুল মালৈকের ছেলে হুমায়ুন বাঙ্গাল (৫২) তার মেয়ে সীমা খাতুন (২০), জামাই সাদ্দাম (২৭), হুমায়ুন বাঙ্গালের স্ত্রী আরজিনা খাতুন (৪৫) ও জাহিদ হোসেনর ছেলে মানিক (২৫)। গতকাল এ মামলা দায়েরের সময় রুবিনার পিতা রবি, মানবতা ফাউন্ডেশনে নির্বাহী পরিচারক অ্যাড. মানি খন্দকার, অ্যাড. মসলেম উদ্দীন-২, অ্যাড. জিল্লুর রহমান জালাল, জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর, মাহফুজা আক্তার জুথিসহ অনেকেই উপস্থিত ছিরেন। মামলা গ্রহণ করেন সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর তোজাম্মেল হক। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়েরকৃত মামলার আসামিদের মধ্যে আরজিনা খাতুনকে গতকাল সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় নেয়া হয়। হুমায়ুন বাঙ্গাল লাশ উদ্ধারের পর থেকেই আত্মগোপন করেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়ে বলেছে, সে আড়ালে বসে কলকাঠি নাড়ছে। গতপরশু মধ্য রাতে বাড়ি থেকে মূল্যবান সব মালামাল সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কয়েকটি আসবাবপত্র ছাড়া বাড়িতে তেমন কিছুই রাখা হয়নি।

রুবিনার মা চায়না খাতুন বলেছেন, হুমায়ুন বাঙাল শুধু সুদখোরই নয়, নারী ও শিশু পাচারকারী হিসেবেও এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে। রুবিনাকে যে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়েছে তার আলামত শরীরে থাকলেও লাশ ময়নাতদন্ত করালে মেয়ে কষ্টপাবে বলে ভয়দেখিয়ে হুমায়ুনের স্ত্রী আরজিনা ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলো বলেই প্রথমে চয়না খাতুন সে বিষয়ে মুখ খোলেননি। এখন তিনি তার মেয়ের ধর্ষণ ও হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার প্রত্যাশী।