সরকারি ছুটির দিনে কাজ না করায় শোকজ ॥ গাংনীতে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম অবরুদ্ধ

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির গাংনী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের (ডিজিএম) ওপর বিক্ষুদ্ধতাঁর অধীনস্থ কর্মচারীরা। বিধি বর্হিভূতভাবে কয়েকজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) করার অভিযোগে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। এর জেরে গতকাল শনিবার সকালে নিজ কার্যালয়ে ডিজিএম ফকর উদ্দীনকে অবরুদ্ধ করেন মিটার রিডার ও ম্যাসেঞ্জাররা।
ভুক্তভোগীরা জানান, গত ১৪ আগস্ট জন্মাষ্টমী ও ১৫ আগস্ট জাতির জনকের শাহাদত বার্ষিকীতে শোক দিবস পালনে সরকারি ছুটি ছিলো। সরকারি ছুটির নির্দেশনা লঙ্ঘণ করে ওই দুদিন কাজ করার জন্য কর্মচারীদের নির্দেশ দেন ডিজিএম। নির্দেশ অমান্য করার কয়েকজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন ডিজিএম। যেখানে অন্যান্য দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটি ভোগ করেছেন, সেখানে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটিভোগে বাঁধা দেয়ায় ক্ষোভ শুরু হয়। এর জের ধরে গতকাল সকাল ৯টার দিকে গাংনী জোনাল অফিসে কর্মরত চুক্তিভিক্তিক মিটার রিডার-ম্যাসেঞ্জারবৃন্দ প্রতিবাদ জানান। বিধি বর্হিভূতভাবে চাকুরি থেকে বরখাস্তের নীল নকশা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা। এক পর্যায়ে ডিজিএমকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করেন বিক্ষুদ্ধ কর্মচারীরা। ডিজিএম ফখর উদ্দীনের সাথে তাদের বাকযুদ্ধ শুরু হয়। কিন্তু ‘সরকারি ছুটি বুঝি না, কাজ করতে হবে’ এমন কথা জানিয়ে নিজের অবস্থানেই অনড় ছিলেন ডিজিএম ফখর উদ্দীন। শেষ পর্যন্ত মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিষয়টি আলোচনার মধ্যদিয়ে সমাধানের দিকে গড়ায়। অবরুদ্ধ করার খবর পেয়ে গাংনী থানা পুলিশের একটি দল সেখানে পৌঁছে। তীব্র বাকবিত-ারয় উত্তপ্ত পরিস্থিতি হলেও পুলিশের হস্তক্ষেপে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় ছিলো।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ডিজিএম ফখর উদ্দীন বঙ্গবন্ধুর শাহাদত বার্ষিকী পালন করেননি। মন্ত্রীপরিষদের সিদ্ধান্ত অর্থাত সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারাদেশে সরকারি ছুটি ও জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে। সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতির জনকের শাহাদত বার্ষিকী পালনের সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু ডিজিএম ফখর উদ্দীন রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শোক দিবস পালন তো দূরে থাক ওইদিন কর্মচারীদের কাজ করার নির্দেশ দেন। জন্মষ্টামীর দিনেও তিনি একই নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সরকারি ছুটির নির্দেশনার বিষয়ে তিনি কটাক্ষ করেছেন। এছাড়াও কথায় কথায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হচ্ছে। যার ফলে সবাই এক প্রকার চাকরি খোয়ানোর আতঙ্ক নিয়ে কাজ করছেন। অধীনস্থ কর্মচারীদের মানসিক নির্যাতনে ফেলে বাড়তি কাজ করতে বাধ্য করছেন। শোক দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন না করে কর্মচারীদের কাজ করতে বাধ্য করার বিষয়ে ডিজিএমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ডিজিএম ফখর উদ্দীন বলেন, কাজ থাকলে অবশ্যই ছুটির দিনেও কাজ করতে হয়। আমি শোক দিবসের কর্মসূচি পালনে সহযোগিতা করেছি। শোক দিবস পালনের যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিধিবদ্ধভাবেই কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
জানতে চাইলে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার রেজাউল করিম বলেন, বিষয়টির দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে খবর পেয়ে সমাধানের উদ্যোগ নেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ-উজ-জামান। তিনি বলেন, ছুটির দিনে তিনি (ডিজিএম) কিভাবে কর্মচারীদের কাজ করতে বাধ্য করছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে যা যা করণীয় সে বিষয়ে ছাড় দেবে না উপজেলা প্রশাসন। তবে আজ বিকেলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে শোক দিবস পালন না করে কর্মচারীদের কাজ করতে বাধ্য করার ঘটনার বিষয়টি ফাঁস হলে বিভিন্ন মহলে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। স্থানীয়দের মাঝেও ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে কঠোর অবস্থানের কথা জানালেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডিজিএম যদি শোক দিবসকে অস্বীকার করে থাকেন তাহলে কঠিন মূল্য দিতে হবে। বিষয়টি যদি সত্যি হলে তা অত্যান্ত দুঃখজনক। অভিযোগকারীদের কথা ঠিক থাকলে তিনি (ডিজিএম) স্বাধীনতা বিরোধী মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন। তার বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে খোঁজ নেয়া হচ্ছে।