সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দূর হোক জনদুর্ভোগ : উচ্ছেদ হোক অবৈধ সব কিছু

চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনশৃৃঙ্খলা কমিটিসহ বিরতিহীন ১২টি সভায় বহু বিষয়ে বিষদ আলোচনা

স্টাফ রিপোর্টার: ‘এসএসসি পরীক্ষার শুরুর ৩ দিন আগে থেকেই সকল কোচিং সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে। পরীক্ষা চলাকালে কাথাও কোনো ওয়াজ মাহফিলের অনুমোদন দেয়া হবে না। উচ্চস্বরে গানবাজনারও সুযোগ নেই। পরীক্ষা বলে কথা নয় অন্য সময়েও অনুমোদনহীন মাইক প্রচার চলবে না। সড়কের ধারে অবৈধ স্থাপনা যে কোনো মূল্যে উচ্ছেদ করা হবে। সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবির প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে রাস্তা তৈরির পাশাপাশি রাতের অন্ধকার তাড়াতে সোলার লাইট স্থাপনের যাবতীয় পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটিসহ বিরামহীন ১২টি সভায় উপরোক্ত বিষয়গুলোসহ বহু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিজিবি ৬ ব্যাটালিয়নের পরিচালক, পুলিশ সুপার প্রতিনিধি, সিভিল সার্জন প্রতিনিধি ও পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু, সদরসহ ৪ উপজেলার নির্বাহী অফিসার, থানার অফিসার ইনচার্জসহ কমিটিসমূহের সদস্যরা তথা জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দফতরের প্রধান কর্মকর্তা বা তার প্রতিনিধি উপস্থিত থেকে সিদ্ধান্ত পেশ করার পাশাপাশি পূর্বের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অর্জিত সফলতারও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তুলে ধরেন। সভায় নদীতে কোমরসহ বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি যেমন পুনরায় তুলে ধরা হয়, তেমনই চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রধান সড়ক তথা শহীদ আবুল কাশেম সড়কের রেল লেবেলক্রসিঙের পাশের পুলের নিচ দিয়ে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেলসহ পথচারীদের চলাচলের ব্যবস্থা করার জন্য পৌর মেয়রের পুনঃদৃষ্টি আর্কষণ করা হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহর থেকে শুরু করে সর্বস্তরে যেখানে সেখানে ঝুলিয়ে রাখা বিভিন্ন ব্যক্তি ও দাওখানার বিলবোর্ড দ্রুত অবসারণেরও কথা জানানো হয়। বলা হয়, যেহেতু অনুমোদনহীন ক্লিনিকগুলোকে ১ মাসের সময় দিয়ে অনুমোদন নেয়ার জন্য বলা হয়েছিলো। শর্ত মেনে অনুমোদন নিতে না পারা ক্লিনিকগুলো অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পদক্ষেপ নেবে। তবে সিভিল সার্জনকে এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। বিদ্যালয় চলাকালে কোনো কোচিং চলবে না। যদি কোনো কোচিং এ নির্দেশনা মানছে না বলে প্রতিয়মান হয় তা হলে সেই কোচিংয়ের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া শ্যালোইঞ্জিন চালিত অবৈধ যান প্রধান প্রধান সড়ক থেকে উচ্ছেদে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করার পাশাপাশি সামাজিক নেতৃবৃন্দের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়টিও উঠে আসে আলোচনা সভায়।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত সভাগুলোর মধ্যে ছিলো জেলা পর্যায়ে সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটির সভা, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের নির্ভুল পরিসংখ্যান প্রণয়ন কমিটির সভা, জেলা চোরাচালান নিরোধ সমন্বয় কমিটির সভা, অনিষ্পন্ন চোরাচালন মামলা নিষ্পত্তি ত্বরান্বিত করণার্থে সভা, জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভা, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও প্রচারণা কমিটির সভা, এসিড নিয়ন্ত্রণ কমিটির সভা, নারী ও শিশু পাচার ভিকটিমদের উদ্ধার ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত সভা, কারাগারে শিশু কিশোরের অবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে গঠিত জেলা টাস্কফোর্সের সভা এবং জেলার চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক মামলা প্রর্যালোচনা কমিটির সভা। সভায় গত ২৮ ডিসেম্বর কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বার্চন সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে সম্পন্ন করতে পরায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। জেলার আইনশৃঙ্খলার ক্রমোন্নতিতে সন্তোষ প্রকাশ করা হলেও সড়কে গাছ ফেলে দীর্ঘ সময় ধরে ডাকাতির ঘটনাটির বিষয়ে খতিয়ে দেখার জন্য পুলিশ সুপারকে আরও বেশি বেশি আন্তরিক হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। এছাড়া জেলা শহরের প্রধান সড়কটি পুনঃমেরামতের কাজ যাতে দ্রুত সম্পন্ন করা যায় সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারসহ তদারক কর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়, জনসাধারণের দুর্ভোগ যতো দ্রুত দূর করা যায় ততোই ভালো। ফলে আমাদের এ দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে নিশ্চয় সব কিছুই আমরা ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারবো। যেমন সম্ভব হয়েছে এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদখ্যাত জেলার সন্ত্রাস দমন। তারই সুফল-এখন নির্বিঘেœর উন্নয়ন মেলায় প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতে পারছেন সাধারণ মানুষ।