সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের পথে ॥ সপ্তাহের মধ্যে চুড়ান্ত প্রতিবেদন

জীবননগরের দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া এলসি স্টেশনের বাণিজ্য সম্ভাবনা খতিয়ে দেখলেন প্রতিনিধিদল

জীবননগর ব্যুরো: উদ্বোধনের ৪ বছর পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরের নির্দেশে দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া এলসি স্টেশনটি সরেজমিনে পরিদর্শন পূর্বক তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে বাণিজ্য সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে কাস্টমস কমিশনারেটের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। যশোর কাস্টমস কমিশনারেটের অতিরিক্তি কমিশনার শেখ আবু ফয়সাল মুরাদের নেতৃত্বে ৫ সদস্যর প্রতিনিধি দলটি গতকাল সোমবার দুপুরে দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া এলসি স্টেশন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। প্রতিনিধিদলটি এ সময় নোম্যান্সল্যা-ে দাড়িয়ে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় করেন। প্রতিনিধি দলটি এ সময় এলসি স্টেশন এলাকায় নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনা ও জমি ঘুরে দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। পরে প্রতিনিধিদলটি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। প্রতিনিধি দলের নেতা অতিরিক্ত কমিশনার শেখ আবু ফয়সাল মো. মুরাদ সাংবাদিকদের ব্রিফকালে বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শন ও উভয় দেশের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে যতোটুকু জানতে পেরেছি এ এলসি স্টেশনটি চালুর বিষয়ে উভয় দিকে প্রস্তুতি রয়েছে। এ এলসি স্টেশনের বিভিন্ন সুবিধাজনক দিক আমাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এখন পর্যালোচনা করে বিষয়টি দেখতে হবে। বাণিজ্যের বিষয়টি সুবিধাজনক হবে কি-না সেদিক খতিয়ে দেখে সপ্তাহের মধ্যে চুড়ান্ত প্রতিবেদন এনবিআরে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
বেলা ১১টার দিকে যশোর কাস্টমস কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার শেখ আবু ফয়সাল মো. মুরাদের নেতৃত্বে চুয়াডাঙ্গা কাস্টমস এক্সসাইজ অ্যান্ড ভ্যাট বিভাগের ডেপুটি কমিশনার রোখসানা খাতুন, যশোর কমিশনারেটের সহকারী কমিশনার হাবিবুর রহমান, রাজস্ব কর্মকর্তা তুষার কান্তি ঘোষ ও দর্শনা স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জীবননগর পৌরসভার সীমান্ত বাঁকায় এসে পৌঁছুলে জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেলিম রেজা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোর্তুজা, পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়েশা সুলতানা লাকি তাদেরকে অর্ভ্যথনা জানান। এ সময় তাদেরকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় বিশাল মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা সহকারে পরিদর্শন দলটিকে দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া শুল্ক স্টেশন এলাকায় নিয়ে পৌঁছুলে সেখানে উপস্থিত উপজেলা বিএনপির সভাপতি আক্তারুজ্জামান, পৌর বিএনপির সভাপতি শাহজাহান কবীর, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল কাদের প্রধান, শাখাওয়াত হোসেন ফরজ, সীমান্ত ইউপি চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন ময়েন, উথলী ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান, চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান লাভলু, প্রেসক্লাব সভাপতি আনোয়ারুল কবির, সাধারণ সম্পাদক এমআর বাবু, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জিএ জাহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক সালাউদ্দিন কাজল, ফয়সাল মাহতাব মানিক, মিঠুন মাহমুদ, দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মজিবর রহমান বাবলু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক তাদেরকে স্বাগত জানান। এ সময় পরিদর্শন টিমের সকলকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ আরিফুজ্জামান, সদস্য আব্দুস সামাদ, শান্ত, খলিলুর রহমান, পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ইকতিয়ার উদ্দিন, সীমান্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল মালেক মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম শুকুর, উথলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন খান, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম ঈশা, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পৌর কাউন্সিলর সোয়েব আহমেদ অঞ্জন, সাধারণ সম্পাদক পৌর কাউন্সিলর ওয়াসিম রাজা, পৌর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম মানিক, যুবলীগ নেতা খায়রুল বাশার শিপলু, সালাহ উদ্দিন কবির, মজিবর রহমান, জীবননগর বাস-ট্রাক মালিক সমিতিরি সভাপতি হাসানুজ্জামান বাবুল, সাধারণ সম্পাদক ইসাবুল ইসলাম মিল্টন, মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কাশেম, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজা, ব্যবসায়ী জহিরুর ইসলাম, মুন্সী খোকন, আব্দুস সবুর, ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজেদুর রহমান লিটন, হ্যান্ডেলিং সমিতির সভাপতি হায়দার আলী, সাধারণ সম্পাদক মোসাব কাক্কা, ইয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন প্রমূখসহ বিপুল সংখ্যক জনতা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রতিনিধি দলটি দৌলৎগঞ্জ স্থল বন্দরের স্থাপনা ও অবকাঠামো পরিদর্শন শেষে নোম্যান্সল্যান্ডে যান। এ সময় সেখানে অবস্থানরত ভারতের জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে ভাজনঘাট-টুঙ্গি পঞ্চায়েত প্রধান গারগি ঘোষ চৌধুরী, ব্যবসায়ী চিত্ত ঘোষ, অনিমীর, জয়ন্ত কুমার, মানিক সাহা, ঝন্টু, বিতিশ কুমারসহ উপস্থিত প্রতিনিধি দলের সাথে কথা বলেন। এ সময় তারা ভারতীয় অংশে তাদের প্রস্তুতির বিভিন্ন দিক প্রতিনিধি দলের সামনে তুলে ধরেন। প্রতিনিধি দল প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার শেখ আবু ফয়সাল মো. মুরাদ উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে বলেন, সম্ভ্যাব্য স্থান ও উভয় দেশের জনপ্রতিনিধি এবং ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে তাদের মতামত পেয়েছি। স্থল বন্দর হিসেবে এটি চালু হলে উভয় দেশ ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন বলে জেনেছি। এটি যাতে দ্রুত চালু হয় সে ব্যাপারে চুড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পাঠানো হবে বলে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ১৯৫২ সালে দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া চেকপোস্ট হিসেবে চালু করা হয়। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় এটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলেও ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে তাদেরকে অন্য স্থানে সংযুক্ত করা হয়। এটি পুনরায় চালু করতে ১৯৯৩ সাল থেকে এলাকাবাসী আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। আন্দোলনের ফলে দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া এলসি স্টেশন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ সরকার গেজেট প্রকাশ করে। ২০০৮ সালে এ স্থলবন্দরটি পুররায় চালু করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় এবং ২০১৩ সালের ২৪ আগস্ট নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এ স্থলবন্দরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে গত ৪ বছরের এটি অলোর মুখ দেখেনি।
উল্লেখ্য, এ স্থলবন্দর চালু হলে সড়ক পথে দেশের অন্য যেকোনো স্থলবন্দরের তুলনায় এ বন্দরের দুরত্ব অনেক কম হবে। ভারতের ৩৪ নম্বর জাতীয় মহাসড়ক হতে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরের দূরত্ব ১৭০ কিলোমিটার, সোনা মসজিদের দূরত্ব ৪শ কিলোমিটার আর সেখানে জীবননগরের দৌলৎগঞ্জ স্থলবন্দরের দুরত্ব হবে মাত্র ৪৪ কিলোমিটার। যে কারণে দৌলৎগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর চালু হলে উভয় দেশের আমদানী ও রফতানি পরিবহন খরচ অনেক কম পড়বে এবং পচনশীল দ্রব্য জীবননগর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে অল্প সময়ের মধ্যে সরবরাহ করা সম্ভব হবে এবং একই সাথে দেশের বৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দরের ওপর চাপও কমবে। এদিকে পরিদর্শন টিমটিকে সকল প্রকার সহযোগিতাসহ মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী ও উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল।