সমন্বয়ের অভাব ১৪ দলে

 

স্টাফ রিপোর্টার: টানাপড়েনের মধ্য দিয়েই চলছে আওয়ামী লীগেরনেতৃত্বাধীন ১৪ দলের কার্যক্রম। আদর্শিক লক্ষ্য নিয়ে এ জোটের যাত্রা শুরুহলেও এখন বলতে গেলে কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ এর কার্যক্রম। নিয়ম রক্ষার বৈঠকহলেও গৃহীত কোন সিদ্ধান্তই আলোর মুখ দেখে না। এমন রাষ্ট্র এবং সরকারপরিচালনায় এ জোট নেতাদের পরামর্শ নেয়া হয় কালেভদ্রে। এ নিয়ে জোটের শরিকদেরমধ্যে অসন্তোষ ছিল বিগত সরকারের সময় থেকেই। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেজোটের শরিকরা সক্রিয় হলেও নির্বাচনের পর ফের ঝিমিয়ে পড়ে তারা। এদিকে বিরোধীজোটের আন্দোলন কর্মসূচিকে সামনে রেখে নতুন কোন চিন্তা নেই সরকারি এ জোটে।আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সামনের করণীয় নিয়ে এখন পর্যন্ত যোগাযোগ করা হয়নি ১৪দলের অন্য শরিকদের সঙ্গে। যদিও নেতারা বলছেন, বিএনপির নেতৃত্বাধীনজোট আন্দোলনের নামে মাঠে নামলে ১৪ দলও করণীয় ঠিক করে মাঠে নামবে। তবে এনিয়ে এখন পর্যন্ত শরিকদের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি বলে নেতারাজানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, শোকের এআগস্ট মাসে আমরা ব্যস্ত বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে। বিএনপির আন্দোলন করারবিষয়ে চিন্তার সময় এখনও আসেনি। আমি মনে করি, তারা যতো হুমকি ও হুঙ্কার দিকনা কেন আন্দোলন করার মতো রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ভিত্তি তাদের নেই। তাছাড়াঘোষণা ও নির্দেশ দিয়ে কখনও আন্দোলন হয় না। দেশের জনগণ আর ৫ জানুয়ারিরপূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে চায় না। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন করানৈতিক অধিকার। তবে তা হতে হবে নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক। বিএনপি যদিআন্দোলনের নামে পূর্বের মতো অরাজকতা সৃষ্টি করে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা দেখবে। ১৪ দল যেকোনো অগণতান্ত্রিকআন্দোলন রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে।

জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টিরসভাপতি রাশেদ খান মেনন জানিয়েছেন, ১৪ দলে কোনো সমস্যা নেই। বিরোধীদলেরআন্দোলন মোকাবেলায়ও ১৪ দল প্রস্তুত। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিককোন সিদ্ধান্ত হয়নি।১৪ দলের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিকদল-জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, বিএনপির আন্দোলন হুমকিরবিপরীতে ১৪ দলের কোনো কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়নি। যেহেতু বিএনপি আন্দোলনেরহুমকি দিচ্ছে তাই আওয়ামী লীগ তা মোকাবেলার চিন্তা করছে। জোটগত কোনোসিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, বিএনপি আন্দোলন করতেই পারে। কিন্তু আন্দোলনেরনামে যদি সহিংসতা বা দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করে, তবেপ্রশাসন তা কঠোরভাবে দমন করবে। গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুররহমান সেলিম বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনভুক্ত যেকোনো রাজনৈতিক দলআন্দোলন করতেই পারে। কিন্তু বিএনপি যে আন্দোলনের কথা বলছে, তা এখনও বিএনপিচেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে এবং দলের নেতাদের বক্তব্যেই সীমাবদ্ধ।তিনি বলেন, বিরোধী জোটের কোনো আন্দোলন নিয়ে ১৪ দল ভাবছে না। এ নিয়ে কোনআলোচনাও হয়নি। জোটের প্রধান আওয়ামী লীগ প্রয়োজন মনে করলে তারা শরিকদের নিয়েআলোচনা করতে পারে।

সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধের বিচার, আইনশৃঙ্খলাপরিস্থিতি, ব্যাংকের অর্থ লুট, গুম খুনের ঘটনায় ১৪ দলের শরিকদের মধ্যেঅসন্তোষ রয়েছে। ১৪ দলের নিয়মিত বৈঠকে এসব বিষয়ে নিজেদের অসন্তোষের কথাজানিয়েছেন শরিক দলের নেতারা। এসব বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নেবে বলে আওয়ামী লীগনেতা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা আশ্বাস দিলেও এ পর্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ দেখাযায়নি। শরিক দলের নেতারা জানিয়েছেন, সরকারের শরিক হিসেবে এ ঘটনার দায়শরিকদের ওপর পড়ে। দায় দায়িত্ব নিতে হয়। সূত্র জানায়, ওয়াকার্স পার্টি ওজাসদ ছাড়া ছোট দলগুলোর সরকারে অংশিদারিত্ব নেই। তাই পাওয়া না পাওয়ারপ্রশ্নে এসব দলের নেতারা বেশি অসন্তুষ্ট। এ নিয়ে অন্য শরিকদের সঙ্গে তাদেরদুরত্বও রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শরিক দলের একজন নেতা জানান, সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে ১৪ দলের শরিকদের কোনো ভূমিকা নেই। সব সিদ্ধান্তআওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেই নেয়া হয়। যখন প্রয়োজন হয় তখন শরিকদের ডাকা হয়।আন্দোলনের বিষয়ে প্রয়োজন হলে ১৪ দলের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এটিও নির্ভরকরছে আওয়ামী লীগের ওপর।