সব শিক্ষকেরই খাতা দেখা বাধ্যতামূলক হচ্ছে : বাড়ছে সম্মানী

 

স্টাফ রিপোর্টার: শিক্ষকদের এসএসসি-এইচএসসিসহ পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। শিক্ষা বোর্ড যাকে চাইবে, তাকেই পরীক্ষক হতে হবে। খাতা দেখতে না চাইলে বা ভুলের জন্য বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ আছে। এর মধ্যে পুরস্কার এবং তিরস্কার দুটির ব্যবস্থাই থাকবে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।

এছাড়া ভুল-ভ্রান্তি এড়াতে এখন থেকে মোট উত্তরপত্রের ১২ শতাংশ দু’বার মূল্যায়ন করা হবে। প্রধান পরীক্ষক র‌্যানডমলি (যেকোনো) মোট খাতা থেকে তা নির্বাচন করবেন। পাশাপাশি প্রধান পরীক্ষক পুনঃমূল্যায়ন করা খাতার রোল নম্বরসহ প্রতিবেদন দেবেন। এসব নির্দেশনা লঙ্ঘন করলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। রোববার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ। মঙ্গলবার রাতে তিনি বলেন, বিভিন্ন বোর্ডের উত্তরপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নানা দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয়েছে। তার ভিত্তিতে প্রশ্নপত্র এবং খাতা মূল্যায়নের মান উন্নয়নে কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশেষ করে এ কাজে আগ্রহ বাড়াতে প্রশ্ন প্রণয়ন ও খাতা দেখায় সম্মানী বাড়ানো হবে।

শিক্ষাবোর্ডের একজন চেয়ারম্যান জানান, সৃজনশীল পদ্ধতির ওপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের বেশির ভাগই শহরকেন্দ্রিক এবং নামিদামি স্কুলের। অথচ তাদের অনেকেই রাষ্ট্রীয় কাজে আসছেন না। নামি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অনেকেই খাতা দেখার চেয়ে কোচিং বা প্রাইভেটে সময় ব্যয় করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এরফলে অপ্রশিক্ষিত বা কম প্রশিক্ষণ পাওয়া শিক্ষক দিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট (বেডু) গবেষণায় পেয়েছে, কোনো প্রশ্নের উত্তরে নম্বর দেয়া যায় না, কিন্তু নম্বর দেয়া হয়েছে। আবার সঠিক উত্তরেও নম্বর না দেয়ার ঘটনা পেয়েছি। আমরা এসব বন্ধ করতে চাই।

এ প্রসঙ্গে ঢাকার একটি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে হিন্দু ধর্ম বিষয়ের খাতা যথাযথভাবে মূল্যায়ন হয়নি। পরীক্ষকদের ভুলের কারণে ১৯৯৪ জন শিক্ষার্থী ফেল করে। ওই ঘটনায় হৃদয় ঘোষ নামে একজন ছাত্র সাত তলা ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করে। চট্টগ্রাম বোর্ডেও পরীক্ষকদের ভুলে এবারের এসএসসিতে বেশ কিছু শিক্ষার্থী অনাহুত ফেল করে। এ ঘটনায় ওই বোর্ডে বিক্ষোভ হয়। উভয় বোর্ডই ফল প্রকাশের তিন দিনের মাথায় খাতা মূল্যায়ন করে পুনরায় ফল প্রকাশ করে। এছাড়া সম্প্রতি বেশি করে জিপিএ-৫ প্রাপ্তি বা পাসের অভিযোগও উঠছে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে। এমন নানা অভিযোগ আমলে নিয়েই প্রশ্ন প্রণয়ন, পরীক্ষা অনুষ্ঠান ও উত্তরপত্র নিরীক্ষাসহ সভায় মোট সাতটি সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে- যৌক্তিক কারণ ছাড়া কেউ উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজ থেকে বিরত থাকতে পারবেন না। বোর্ডে শিক্ষকের ডাটাবেজ করা হয়েছে। সেটা দেখে বোর্ড উত্তরপত্র দেবে। পরীক্ষক বাড়লে এবং দক্ষ পরীক্ষক পেলে উত্তরপত্র যথাযথ মূল্যায়ন হবে। প্রধান পরীক্ষক এখন থেকে র‌্যানডমলি ১২ শতাংশ উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়ন করবেন। একই সাথে কোনো ১২ শতাংশ মূল্যায়ন করলেন তা প্রতিবেদন আকারে দাখিল করতে হবে। নইলে তিনি যেমন সম্মানী পাবেন না, তেমনি তার উত্তরপত্রও বোর্ড গ্রহণ করবে না। বর্তমানে ১০ শতাংশ উত্তরপত্র মূল্যায়নের ব্যবস্থা আছে। তবে সবাই খাতা দেখেন না বলে অভিযোগ আছে।

বর্তমানে একজন পরীক্ষক ৫০০ থেকে ৬০০ খাতা দেখেন। এখন থেকে দিন হিসাব করে খাতা দেয়া হবে। প্রধান পরীক্ষকও বেশি খাতা পান। তাদেরকেও খাতা কমিয়ে দেয়া হবে। চলতি বছর জেএসসিতে উত্তরপত্র প্রতি মূল্যায়ন সম্মানী ১২ থেকে বাড়িয়ে ১৫ টাকা করা হয়েছে। এসএসসি-এইচএসসির ক্ষেত্রেও সম্মানী বাড়ানো হবে। প্রশ্ন প্রণেতা ও শুদ্ধকারীর সম্মানী বাড়ানো হবে। কারও তৈরিকৃত প্রশ্নের সাথে গাইডের প্রশ্নের মিল পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সৃজনশীল প্রশ্নের প্রত্যেক অংশের উত্তরে আলাদা নম্বর দিতে হবে।

এসব বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, উল্লিখিত সিদ্ধান্তগুলো বিশেষজ্ঞ শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে গঠিত শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষা উন্নয়নবিষয়ক পরামর্শক কমিটিতে আলোচনার পর বাস্তবায়ন করা হবে। এ লক্ষ্যে ২৫ নভেম্বর কক্সবাজারে আবাসিক কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।