সব নেতাকে জেলে নিলেও শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবো না

স্টাফ রিপোর্টার: দলের স্থায়ী কমিটির তিনজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং একজন উপদেষ্টা ও নিজের বিশেষ সহকারীকে গ্রেফতার, সারাদেশে নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়, নেতা-কর্মীদের তার কাছে ঘেঁষতে না দেয়াসহ নানামুখি সমীকরণ ও চাপ সত্ত্বেও নিজ অবস্থানে অনড় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গত কয়েকদিনে যারা তার সাথে দেখা করতে গেছেন, তাদের সাথে আলাপকালে তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন যদি আমার দলের সব নেতাকেও জেলে নেয়া হয়, তারপরেও শেখ হাসিনার অধীনে আমি কোনো নির্বাচনে যাবো না। নির্দলীয় ব্যক্তির অধীনেই নির্বাচন হতে হবে, নয়তো দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। এতে যা হবার হবে।

খালেদা জিয়ার সাথে সোমবার রাতে তার গুলশানের বাসায় দেখা করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান। গতকাল মঙ্গলবার তাদের দুজনের সাথেই পৃথকভাবে কথা বলে বিরোধী দলীয় নেতার এই অনড় অবস্থানের কথা জানা যায়।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, প্রায় আধাঘণ্টার আলাপে আমি একটা বিষয় বুঝলাম-বিএনপি নেত্রী তার অবস্থান থেকে নড়চড় করবেন না। শুধু নেতা-কর্মীদের কেন, স্বয়ং তাকেও গ্রেফতার করলে তিনি নির্বাচনে যেতে রাজি হবেন- তার সঙ্গে কথা বলে এমনটি আমার একবারও মনে হয়নি। তিনি খোলাসা করেই বলেছেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে যাবেন না। সুতরাং আমার কাছে যে বিষয়টি পরিষ্কার, তা হচ্ছে-খালেদা জিয়াকে ভয় দেখিয়ে কিছু করা যাবে না।

তিনি জানান, নিজের অনড় অবস্থানের বিষয়টি জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন অবশ্য একথাও বলেছেন যে, তিনি শান্তি চান, গণতন্ত্র চান। এরজন্য আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার জন্য যে কোনো ছাড় দিতে কিংবা ত্যাগ স্বীকারে তিনি প্রস্তুত রয়েছেন। মেজর (অব.) মান্নান গতকাল বলেন, হরতালের বিকল্প ভাবার জন্য আমরা বিএনপি চেয়ারপারসনকে অনুরোধ করেছি। এসময় তিনি আমাদের বলেছেন, হরতাল তো আমিও চাই না, আমাদের কারণেও হরতাল হচ্ছে না। হরতালের কারণ তো প্রধানমন্ত্রী, তার কারণেই তো হরতাল হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বার বার শান্তির কথা বলছেন, শান্তি চাইলে তার উচিত পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।

বিকল্পধারার মহাসচিব আরও জানান, খালেদা জিয়া তাদের বলেছেন দেশে যে সমস্যার উদ্ভব হয়েছে, এরজন্য পুরোপুরি দায়ী প্রধানমন্ত্রী। আমরা তো বলছি না যে, আমাদেরকে ক্ষমতা দিয়ে দিন। আমরা চাচ্ছি নির্বাচনে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকতে হবে। সেটা করতে হলে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হবে। তিনি পদ ছাড়লে বাকিটা কোনো সমস্যা নয়। তখন হরতালও থাকবে না।

জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে বাইরে রেখেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে তাতে অন্য কোনো কোনো দল অংশ নিতে পারে, বিএনপি চেয়ারপারসনের সাথে এই দুই নেতার আলাপকালে সে বিষয়টিও উঠে আসে। বিশেষ করে, জাতীয় পার্টি (জাপা) এবং দলটির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয়। এসময় কাদের সিদ্দিকী ও মেজর (অব.) মান্নানকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন ভালো মনে করলে আপনারাও নির্বাচনে যেতে পারেন, কিন্তু আমরা যাবো না। এ সরকার কতদূর যেতে পারবে, তা আমার জানা আছে।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার বিকেলে ১৮ দলের পক্ষে প্রথমে টানা ৭২ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করার কিছু সময় পরেই খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সদস্য। একই সময়ে রাজধানীর কাওরান বাজার থেকে গ্রেপ্তার হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য- ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। ওই রাতেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বাসায় দেখা করে বের হওয়ার পর গ্রেফতার হন তার উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। শুক্রবার প্রায় রাতভর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির উল্লেখযোগ্য অনেক নেতার বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালায়। গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দেন বিএনপি নেতারা।

এদিকে, ১৮ দলের টানা ৮৪ ঘণ্টার হরতাল শেষে খালেদা জিয়া আজ বুধবার রাতে তার গুলশান কার্যালয়ে যেতে পারেন। গ্রেফতার আতঙ্কে গত কয়েকদিন আত্মগোপনে থাকা দলের নেতা-কর্মীদেরও আজ দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। সূত্র মতে, প্রয়োজনে গ্রেফতার হবেন- এমনটি জেনেই আজ খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে গুলশান কার্যালয়ে যাওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন অনেক নেতা।

জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন তার স্বাভাবিক চলাচলে সরকার কোনো বাধা সৃষ্টি করে কি-না, তা বোঝার জন্য আজ নিজ কার্যালয়ে যাবেন বলে ব্যক্তিগত স্টাফ ও কয়েকজন নেতাকে জানিয়ে রেখেছেন। কার্যালয়ে গেলে তিনি ৮৪ ঘণ্টার হরতাল পরবর্তী করণীয় নিয়েও আলোচনা করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।