সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আর পার পাওয়া যাবে না : আইজিপি

স্টাফ রিপোর্টার: অবরোধকারীরা জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। বাসে আগুন দিয়ে মানুষ মারছে। তবে যতোই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করুক না কেন, এবার আর পার পাওয়া যাবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক। রংপুরের মিঠাপুকুরে চলন্ত বাসে পেট্রোলবোমা ছোড়ায় পাঁচজন মারা যাওয়ার পর গতকাল শুক্রবার রংপুরে মতবিনিময়কালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি এ হুঁশিয়ারি দেন।

মিঠাপুকুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময়কালে রংপুর জেলা প্রশাসক ফরিদ আহাম্মদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ৱ্যাবের ডিজি বেনজীর আহম্মেদ, বিভাগীয় কমিশনার দিলোয়ার বখত, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি (ভারপ্রাপ্ত) হুমায়ুন কবির, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোজাম্মেল হক মিন্টু মিয়া, সেক্রেটারি জাকির হোসেন সরকার প্রমুখ।

পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, বড় বড় রাজনীতিবিদরা সংবিধানের মৌলিক অধিকার নিয়ে মিথ্যাচার করছেন। সংবিধানের কোথাও অবরোধ-হরতালের কথা নেই। এটা সংবিধানবিরোধী। শুক্রবার রংপুরের মিঠাপুকুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময়কালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি এসব কথা বলেন।

পুলিশ প্রধান বলেন, অনেকেই বলেন আমার বক্তব্য রাজনৈতিক বক্তব্য হয়ে যায়। আমিও তো মতামত দিতে পারি। আমিও দেশের নাগরিক। আমিও ট্যাক্স দিই। আমিও মতামত দিতে পারি। এটা আমার অধিকার। তিনি বলেন, হরতাল অবরোধকারীরা জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সেই যুদ্ধে মিঠাপুকুরের মহিলাদের ব্যবহার করা হচ্ছে।

যুদ্ধাপরাধী শক্তির উত্থান জাতির জন্য ভয়ঙ্কর মন্তব্য করে আইজিপি বলেন, যানবাহনে আগুন দেয়া, পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা সত্যিকারের রাজনৈতিক দলের কাজ নয়। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতেই রাজনীতির নামে নৈরাজ্য, নাশকতা এবং মানুষ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। যারা পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখেন, যারা বাংলাদেশ চায় না তারাই দেশজুড়ে নাশকতা আর নৈরাজ্য সৃষ্টি করে একটি অকার্যকর রাষ্ট্র বানাতে চায়। জনগণকে সাথে নিয়ে শিগগিরই এ নাশকতা ও সন্ত্রাস বন্ধ করা হবে বলেও উল্লেখ করেন শহীদুল হক।

৫ জানুয়ারি বিএনপি বেআইনিভাবে সমাবেশ করতে চেয়েছিলেন দাবি করে আইজিপি বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকলে তারা ওই জোর করে সমাবেশ করার কথা বলতেন না। সংবিধানে লেখা আছে জোর করে সমাবেশ করা যাবে না। পুলিশকে সংবিধানে ক্ষমতা দেয়া আছে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে অনুমতি দেয়া যাবে না।

শহিদুল হক বলেন, এসব বিষয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় অসত্য তথ্য পরিবেশন করা হয়। এসব কথায় কান দেবেন না। এসব কথা এজন্য বলা যে, আপনাদেরকে অনেকেই ভুল বোঝাতে পারেন। তাদের কথায় কান দেবেন না।

বিএনপি-জামায়াত জোটকে উদ্দেশ্য করে পুলিশ প্রধান বলেন, ভোটের অধিকার কে প্রতিরোধ করেছে? জনগণকে আপনারাই ভোটকেন্দ্রে আসতে দেননি। সরকার সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিলো। কিন্তু আপনারাই আসতে দেননি। মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন। ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছেন। প্রিসাইডিং অফিসারকে মেরে ফেলেছেন।

তিনি বলেন, শুধু পুলিশ নয়, জনগণকেই পুলিশের ভূমিকা পালন করতে হবে। এ সরকারের আমলেই ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগ করা হবে। মিঠাপুকুরে তদন্ত কেন্দ্র করা হবে। আমরা আপনাদের পাশে আছি। অসাংবিধানিক শক্তি, জনগণের বিপক্ষের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তিকে আর আসতে পারবে না। তাদের শক্তহাতে মোকাবেলা করা হবে। এর আগে আইজিপি ও ৱ্যাব ডিজি হেলিকপ্টারে শঠিবাড়িতে আসেন। সেখানে তারা মিঠাপুকুরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃতদের পরিবারের কাছে ৫০ হাজার করে এবং আহতদের ১০ হাজার করে অনুদানের টাকা দেন।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাতে ৩০টি যাত্রীবাহী বাসের বহর রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে পুলিশ-বিজিবির পাহারায় রওনা হয়। এ সময় রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের মিঠাপুকুরে উলিপুর থেকে ঢাকাগামী খলিল এন্টারপ্রাইজের একটি বাসে পেট্রলবোমা ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। এতে পাঁচজন নিহত ও ১১ জন গুরুতর আহত হয়।