সন্তান খুন হওয়ার ৯ দিনের মাথায় মায়ের মৃত্যু : পাশাপাশি দাফন

চুয়াডাঙ্গা দৌলাতদিয়াড় কোরিয়াপাড়ায় শোকের ছায়া : সান্তনা খুঁজে পাচ্ছে না পরিবারের সদস্যরা

স্টাফ রিপোর্টার: সন্তান নৃশংসভাবে হত্যার ৯ দিনের মাথায় মারা গেলেন মা পারুলা খাতুন (৪০)। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে তিনি মারা গেলে প্রতিবেশীদের মধ্যেও যেনো বিষন্নতা ভর করে। মা পারুলা মারা যাওয়ার সময় রেখে গেছেন মাত্র ৭ মাস বয়সী সন্তান। তাকে নিয়ে অথৈয় সাগরে গৃহকর্তা পাখিভ্যান চালক আব্দুস সালাম।
গতকালই সন্ধ্যায় পারুলা খাতুনের মৃতদেহ দৌলাতদিয়াড় কোরিয়াপাড়া কবরস্থানে ছেলের কবরের পাশেই দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। অপরদিকে তার ছেলে ভাড়ায় নেয়া অটোরিকশা চালক কামরুল ইসলাম রাসেল হত্যার সাথে জড়িত তেমন কাউকে গত ৯ দিনে ধরতে পারেনি পুলিশ। তবে ঘটনার পরদিনই ৩০ আগস্ট মেহেরপুরের একটি অটোগ্যারেজ থেকে অটোটি উদ্ধার করা হয়েছে। অটো উদ্ধারের সময় দুজনকে ধরে মেহেরপুর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলেও অটো চালক রাসেলকে হত্যা করে তার নিকট থেকে ছিনতাইকারীদের হদিস করতে পারেনি। মামলার তদন্তকারী কমর্কতা আলমডাঙ্গা থানার এসআই মিজানুর রহমান এ বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।
চুয়াডাঙ্গা শহরতলী দৌলাতদিয়াড় কোরিয়াপাড়ার আব্দুস সালামের ছেলে কামরুল ইসলাম রাসেল একেক সময় একেকজনের অটো ভাড়ায় নিয়ে চালাতো। রাসেল অটো চালিয়ে এবং তার পিতা আব্দুস সালাম পাখিভ্যান চালিয়ে যা আয় হতো তার সিংহভাগই চলে যেতো পারুলা খাতুনের চিকিৎসার জন্য। কারণ, রাসেলের মা পারুলা খাতুন দীর্ঘদিন ধরেই ক্যান্সার আক্রান্ত। গত ২৮ আগস্ট সকালে গ্রামেরই মুক্তার হোসেনের অটো নিয়ে ভাড়ার উদ্দেশে রাস্তায় বের হয় রাসেল। সারাদিন বাড়ি না ফিরলে সন্ধ্যায় পিতা আব্দুস সালাম তার ছেলে রাসেলের মোবাইালফোনে কথা বলে। তখন রাসেল ছিলো আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া এলাকায়। সেখানে রাসেলের সাথে মামার দেখাও হয়। রাত ৮টার দিকে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরদিন সকালে আলমডাঙ্গার যাদবপুর শ্যামপুর জিকে ক্যানাল থেকে উদ্ধার করা হয় লাশ। মামলা হয়। আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ তদন্তে নেমেই মেহেরপুর সদর থানা পুলিশের সহযোগিতায় উদ্ধার করে অটো। একটি অটোগ্যারেজ থেকে অটো উদ্ধার করার পাশাপাশি গ্যারেজের দুজনকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে। গ্যারেজের মালিকপক্ষ জানায়, অপরিচিত লোক অটো রেখে আসছি বলে চলে গেছে। অটোটি তারা বিক্রিও করতে চেয়েছিলো বলে জানা গেছে।
অটো উদ্ধার হলেও খুনি ছিনতাইকারীকে গত ৮ দিনে ধরতে পারেনি পুলিশ। ছেলেকে হত্যা করে যারা অটো ছিনিয়ে নিয়ে গেছে তাদের গ্রেফতারের অপেক্ষায় দিন কাটছিলো পিতা আব্দুস সলাম ও মা পারুলা খাতুনের। এরই মাঝে গতকাল দুপুর ২টার দিকে মারা গেলেন মা পারুলা খাতুন। ছেলের পাশেই গতকাল সন্ধ্যায় কোরিয়াপাড়া কবরস্থানে মা পারুলার দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে ছেলে ও স্ত্রীকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন হতদরিদ্র পাখিভ্যানচালক আব্দুস সালাম। তিনি বলেছেন, আমার মতো অভাগা আর নেই। এ শোক আমি সইবো কীভাবে? পারুলা রেখে গেছে ৭ মাসের শিশু কন্যা। এছাড়াও রয়েছে দু ছেলে আকাশ ও পারভেজ। পারভেজের বয়স ৬ বছর, আর আকাশ ভোকেশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৯ম শ্রেণির ছাত্র।