সদ্যপ্রসূতি কন্যাসন্তান রেখে সটকে পড়েছে প্রসূতিসহ দু’বৃদ্ধা

ডায়রিয়া রোগী সেজে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তির পর প্রসূতি ওয়ার্ডে স্থানান্তর

স্টাফ রিপোর্টার: ডায়রিয়া রোগী বলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে প্রসূতি ওয়ার্ডে কন্যাসন্তান প্রসবের পর ভোররাতে পালিয়েছে প্রসূতিসহ তার সাথে থাকা দুবৃদ্ধা। গতকাল ভোরে নবজাতক রেখে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত নবজাতকের ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালেরই সিনিয়র স্টাফ নার্স তৃষ্ণা মনির কোলে। তিনি গতকাল তার অন্য সন্তানদের মতোই নবজাতককে আগলে রাখেন।
হাসপাতালসূত্রে জানা গেছে, গত পরশু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দু বৃদ্ধা আনুমানিক ২৪ বছর বয়সী এক অন্তঃসত্ত্বাকে সাথে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আসেন। অন্তঃসত্ত্বা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত বলে জানান। নাম ঠিকানা লেখার সময় রোগীর নাম খুশি প্রযতেœ আকবর, গ্রাম দলিয়ারপুর, উপজেলা দামুড়হুদা জেলা চুয়াডাঙ্গা লেখা হয়। ভর্তির কিছুক্ষণ পরই প্রসব বেদনার কথা সেবিকাদের জানালে তারা রোগীকে প্রসূতি ওয়ার্ডে নেয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে নেয়ার ঘণ্টা খানেকের মাথায় প্রসূতি কন্যাসন্তান জন্ম দেয়। তখন রাত ৭টা বেজে ৩৫ মিনিট। প্রসূতি ওয়ার্ডের মেঝেতেই প্রসূতির পাশে থাকা দু’বৃদ্ধা সেবা যতেœ মেতে ওঠেন। প্রসূতিও সন্তানকে আগলে রাখেন। সকাল হতে না হতে কন্যাসন্তান রেখে প্রসূতিসহ তার সাথে থাকা দু’বৃদ্ধা লাপাত্তা হলে কর্মরত সেবিকাসহ উপস্থিত সকলেই হতবাক হয়ে পড়েন। তাদের বুঝতে বাকি থাকে না, প্রসূতিসহ তার সাথে থাকা দু’বৃদ্ধা এসবই পরিকল্পিতভাবে ঘটিয়ে কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে সটকে পড়েছে। বিষয়টি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবিরকে জানানো হলে তিনি প্রথমেই পুলিশকে জানান। এরপর নবজাতকের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তার যতœআত্মির জন্য সিনিয়র স্টাফ নার্স তৃষ্ণা মনির হেফাজতে রাখেন। ফুটফুটে কন্যা শিশু পেয়ে বেজাই খুশি তৃষ্ণা। তিনি বলেন, আমার সন্তান আছে, তারপরও যদি সুযোগ পায় তা হলে এই কন্যাকেও নিজের সন্তান করে বড় করে তুলতে রাজি আছি। অবশ্য নিঃসন্তান অনেকেই এ খবর পেয়ে বৈধভাবে নিজের করে পাওয়ার প্রক্রিয়া করতে শুরু করেছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। অপরদিকে সন্তান রেখে সটকে পড়া প্রসূতিকে খুঁজতে শুরু করেছে অনেকে। ওই প্রসূতি কি স্বামী পরিত্যক্তা? নাকি প্রবাসীর স্ত্রী? এসব নিয়েও মুখোরচক আলোচনার কমতি নেই।
বৈধভাবে পাওয়ার উপায় কী? এ প্রশ্নের জবাবে চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র আইনজীবী বলেছেন, নবজাতককে কেউ পেতে চাইলে তাকে অবশ্যই আদালতের মাধ্যমে নিতে হবে। আদালতে একাধিক আবেদন পড়লে সেটা শোনানি শেষে আদালতই সিদ্ধান্ত দেবেন ওই নবজাতক কার কাছে দেয়া উচিত। সেক্ষেত্রে আদালত নিঃসন্তান দম্পতির চিকিৎসাপত্রসহ যাদের একেবারেরই সন্তান হওয়ার আর সম্ভবনা নেই, সেই দম্পতিকেই গুরুত্ব দেন। তবে অবশ্যই ওই দম্পতিকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হতে হয়। আর যদি তেমন কেউ নবজাতককে নিতে আগ্রহী না হন, সে ক্ষেত্রে সমাজ সেবা অধিদফতরের মাধ্যমে নবজাতককে শিশু সেভহোমে দেয়া হয়। সেখান থেকেও নিঃসন্তান দম্পতিকে দেয়ার বিধান আছে।