সঙ্কট নিরসনে সহায়তা দিতে প্রস্তুত বন্ধু দেশ

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকায় নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট বলেছেন, বাংলাদেশে চলমান সঙ্কট নিরসনে নিজেদেরকেই উপায় খুঁজে বের করতে হবে। এই ক্ষেত্রে সহায়তার অনুরোধ করা হলে বাংলাদেশের বন্ধুরা সহায়তা দিতে প্রস্তুত। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় আমেরিকান ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নেয়ার পর এটাই তার প্রথম সংবাদ সম্মেলন। এ সময় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র মনিকা শাই ও তথ্য কর্মকর্তা মেরিনা ইয়াসমিন উপস্থিত ছিলেন। মার্শা বার্নিকাট গত ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশ বর্তমান সঙ্কটের সমাধান খুঁজে বের করতে পারবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে আশা করি। কেননা বাংলাদেশিদের টিকে থাকার শক্তি প্রকট। গত ৪০ বছরে নানা সমস্যা ও সঙ্কট বাংলাদেশ সফলতার সাথে উত্তরণ ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক শক্তি কিংবা দলকে সমর্থন করে না। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিস্তৃত এবং গভীর সম্পর্ককে ধারণ করে এমন সরকারসহ সব বাংলাদেশির সাথেই কাজ করা আমাদের লক্ষ্য। আমরা মধ্য আয়ের বাংলাদেশ দেখতে চাই। এই দেশ হবে অবশ্যই নিরাপদ ও সমৃদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে টিকে থাকা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত। এই দেশের জনগণ সুস্বাস্থ্যের অধিকার হবে এবং শিক্ষার সুযোগ পাবে। এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা। মার্শা বার্নিকাট সহিংসতার বিরুদ্ধে তার দেশের কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশে চলমান সহিংসতায় আমরা আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্র বাস পোড়ানো ও ট্রেন উপড়ে ফেলাসহ অযৌক্তিক হামলার মাধ্যমে নিরীহ মানুষকে হতাহত করার নিন্দা জানায়। আমরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে সহিংসতার ব্যবহারকে সবচেয়ে কড়া ভাষায় নিন্দা জানাই। কেননা আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে এমন কর্মকাণ্ডের কোনো যৌক্তিকতা নেই। সহিংসতা বন্ধ করা, অহিংস ও দায়িত্বশীল রাজনৈতিক মতপ্রকাশ করার ক্ষেত্রে সবারই ভূমিকা পালন করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে বার্নিকাট বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কোনো দেশই সন্ত্রাসের ঝুঁকিমুক্ত নয়। বাংলাদেশের সামরিক ও সীমান্ত বাহিনীর জন্যে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা হলো উগ্রবাদ দমনে সহযোগিতার অংশ।

গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূস ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা নাগরিক সমাজের কার্যক্রমকে বিশেষ করে ক্ষুদ্রঋণকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে থাকি। নাগরিক সমাজের সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আমাদের আগ্রহ এখনও রয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক অভিন্ন স্বার্থের প্রতি পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধার ওপর প্রতিষ্ঠিত। একে গড়ে তুলতে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। আমরা সম্পর্কটাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই। গুরুত্বপূর্ণ ও অভিন্ন স্বার্থসংরক্ষণে আমার মেয়াদকালে বাংলাদেশের সরকার, বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে কাজ করব। গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ওই নির্বাচন সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিমত সবারই জানা। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ এবং এই দেশের জনগণের অস্থিমজ্জায় গণতন্ত্র প্রবাহিত। গণতান্ত্রিক সমাজে শান্তিপূর্ণ উপায়ে স্পেস ব্যবহার করতে হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ সম্পর্কে বার্নিকাট বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও আমি বিস্তৃত ইস্যুতে আলোচনা করেছি। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ শক্তিশালী অংশীদার। গণতন্ত্রের অভিজ্ঞতা যুক্তরাষ্ট্রের অনেক পুরনো। আমাদের আলোচনা ছিল ওই প্রেক্ষাপটে। বাংলাদেশে গণমাধ্যম সম্পর্কে তিনি বলেন, গণমাধ্যম হল গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যা বাংলাদেশে রয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পর্কিত অপর এক প্রশ্নের জবাবে বার্নিকাট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্কের একেবারে মূলে রয়েছে বাংলাদেশে আইনের শাসন কায়েমের বিষয়টি। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিষয়টিও ওই আঙ্গিকেই বিবেচ্য। আমরা এই বিচার প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের আইনে এবং স্বচ্ছতার মানদণ্ডে বিবেচনা করি। তিনি বলেন, গত ৩০ বছর ধরেই আমি বাংলাদেশে নিয়োগ পাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে আসছি। শেষ পর্যন্ত আমি এই নিয়োগ পেয়ে আমাদের সম্পর্ককে বিস্তৃত ও গভীর করার সুযোগে খুবই পুলকিত। বাংলাদেশ গত ২০ বছর ধরে ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে অভিভূত হওয়ার মতো টেকসই অর্থনৈতিক উন্নতি করেছে। এই দেশের সঙ্গে এখন সাহায্য নয়, বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তুলছি। বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বের কথা তুলে ধরে নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বিশ্বে সবচেয়ে বৃহত্তম শান্তিরক্ষী সরবরাহকারী দেশ হল বাংলাদেশ। এই দেশের অর্থনীতি অনেক দ্রুততায় বেড়ে উঠছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এই দেশ আঞ্চলিক কানেকটিভিটির জন্যে গুরুত্বপূর্ণ এবং পরিবেশগত ইস্যুতে স্বল্পোন্নত দেশের নেতৃত্বের স্থানে রয়েছে। স্বাধীনতার পর স্বল্প সময়ে স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র্য কমানো অভাবনীয় উন্নতি করেছে এ দেশ। এসব কারণে বাংলাদেশের প্রতি কৌশলগত আগ্রহ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। এক প্রশ্নের জবাবে বার্নিকাট বলেন, দু দেশের মধ্যে নিয়মিত বিভিন্ন ইস্যুর পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে কাজ করার তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।