সংরক্ষিত স্পিকার অসাংবিধানিক

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ রক্তের দামে কেনা মুক্তিযুদ্ধের ফসল। যার মূলে ছিলো জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির চেতনা। সেই লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তির সনদ হিসেবে ৭২-এর সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু জনগণের ইচ্ছা বা অভিপ্রায় ধারণ করার প্রক্রিয়া অনেক সময় যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয় না। কখনও কখনও সংবিধান ব্যক্তি, দলীয় বা গোষ্ঠীর সংকীর্ণ স্বার্থরক্ষায় পরিণত হয়। ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র উদ্ভবের সম্ভাবনা দিন দিন তিরোহিত হচ্ছে। সংবিধানের প্রতি আস্থাহীনতা ভয়ঙ্কর প্রকট হয়েছে, ফলে সংবিধান লঙ্ঘন হলেও নীরবে সবাই মেনে নিচ্ছে। সরকার ও সংসদ সংবিধান লঙ্ঘন করছে, ফলে কেউ প্রতিকারের জন্য এগিয়ে আসার নৈতিক শক্তি পাচ্ছে না। দেশের নবম সংসদে একজন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্যকে অসাংবিধানিকভাবে স্পিকার নির্বাচিত করা হয়েছে, দশম সংসদেও নাকি সংরক্ষিত আসন থেকে স্পিকার নির্বাচন করা হবে। আমাদের বিদ্যমান সংবিধানের আওতায় জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যতীত প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার কোনো সাংবিধানিক এখতিয়ার নেই। প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এসব পদসমূহ প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের জন্য সাংবিধানিকভাবে নির্ধারিত এবং সুরক্ষিত। এসব রাষ্ট্রীয় পদ কেবলমাত্র প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিতদের জন্য, সুতরাং এগুলো সংবিধানের অলঙ্ঘনীয় ও অপরিবর্তনীয় বিধান আইনগতভাবে লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের সংবিধান প্রত্যক্ষ ভোটের সংসদ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সংসদ-সদস্যের ক্ষমতা বিভাজন সুস্পষ্ট-সুনির্দিষ্ট ও নির্ধারিত করে দিয়েছে। সংবিধানের বেঁধে দেয়া ক্ষমতার বিভাজনকে লঙ্ঘন করার এখতিয়ার জাতীয় সংসদের নেই। সংবিধান যেখানে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ক্ষমতা পৃথকীকৃত করে নির্দেশনা দিয়েছে, সেখানে অনির্বাচিত মহিলা সংসদ সদস্যদের একীভূত করা সংবিধানের চরম লঙ্ঘন। জনগণের ভোটে নির্বাচিতদের সুরক্ষিত পদ অনির্বাচিত দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যায় না। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোট-ই হচ্ছে আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার নৈতিক ভিত্তি এবং সংবিধানের আদর্শিক নীতি। নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণ প্রজাতন্ত্রের সমগ্র জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন। সংরক্ষিত মহিলা সদস্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি নয়। সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হলেই নির্বাচিত প্রতিনিধি হয় না তা ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত মামলার রায়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেছেন রাষ্ট্রপতি সংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ব্যক্তি বটে কিন্তু তিনি গণতান্ত্রিকভাবে প্রজাতন্ত্রের নির্বাচিত প্রতিনিধি নন।
সংবিধানের ৭৪(১) মোতাবেক ৩০০ আসনের সংসদ থেকে স্পিকার নির্বাচন অপরিহার্য করেছে। স্পিকার পদ নির্বাচিতদের জন্য সুরক্ষিত। সুতরাং এখানে সংরক্ষিত আসনের কোনো সুযোগ নেই। ৩০০ আসনের কোনো একটি আসন শূন্য হলে যেমন সংরক্ষিত দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যায় না, তেমনি নির্বাচিতদের জন্য রাষ্ট্রীয় পদ অনির্বাচিত দিয়ে পূরণ করা যায় না। নির্বাচিত এবং সংরক্ষিত কখনও সমকক্ষ হতে পারে না।