সংঘর্ষ সহিংসতা : চট্টগ্রাম লালমানির হাট ও নাটোরে তিনজন নিহত

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ দেশের অধিকাংশ স্থানেই হরতালের পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল

 

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ৬০ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিন রাজপথে তেমন উত্তাপ না থাকলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে লালমনিরহাটের পাটগ্রামে পুলিশের গুলিতে ছাত্রদল নেতা, চট্টগ্রামে পিকেটারদের হামলায় টেম্পোযাত্রী, নাটোরে কৃষিশ্রমিক, সাভারে হরতালপূর্ব নাশকতার আগুনে পুড়ে অটোরিকশাযাত্রী এবং নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় সড়ক অবরোধের জন্য হরতালকারীদের কাটা গাছের নিচে চাপা পড়ে একজন পথচারী নিহত হয়েছেন। গাজীপুরে পিকেটারদের ধরিয়ে দেয়া আগুনে এক কিশোর স্কুলছাত্রের সারা শরীর পুড়ে গেছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি জেলা-উপজেলায় হরতাল সমর্থক, হরতালবিরোধী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। এ সময় পুলিশ ৫ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে।

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরেও হরতালের পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল হয়েছে। তবে সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে একটি অটো ভাঙচুর করা হয়। কোর্ট রোডে কয়েকটি রিকশা ও আলমসাধুর চাকা ভোমর দিয়ে লিক করে দেয়া হয়। মেহেরপুরে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়েছে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে রেললাইনের ওপর আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে রাখে সমাবেশ করে হরতালকারীরা। গতরাতে চুয়াডাঙ্গা বাসটার্মিনালের নিকট একটি ট্রাকে ইট নিক্ষেপ করে কাঁচ ভাঙচুর করা হয়।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে নাসির হোসেন নামে এক ছাত্রদল নেতা নিহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পৌর সদরের সোহাগপুর এলাকার ধরলা সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। এ সময় দু দলের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হলে সংঘর্ষ বাধে। নাটোরের বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের গুরুদাসপুরের নয়া বাজারে দ্রুত নামতে গিয়ে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ইসাহাক আলী মোল্লা (৪২) নামে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের খয়ের উদ্দিনের ছেলে। চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় পিকেটারদের ধাওয়ায় উল্টে যাওয়া একটি টেম্পোর এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। নিহত জাকির হোসেন সিএনএ গার্মেন্টের একজন কর্মকর্তা। সকাল সাড়ে ১০টায় কর্মস্থলে যাওয়ার পথে আহত হলে চমেক হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মারা যান।

নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারে দাবিতে ১৮ দলের ডাকা ৬০ ঘণ্টার হতালের প্রথম দিন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি পিকেটিং মিছিল বের করে। দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দলীয় কার্যালয়ে এসে সংক্ষিপ্ত আলোচনাসভার আয়োজন করে। উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির এম জেনারেল, অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, অ্যাড. শামিম রেজা ডালিম, শহিদুল ইসলাম রতন, মজিবুল হক মজু, রবিউল ইসলাম লিটন, এম এ সাঈদ, আসাদুজ্জামান, আশরাফ বিশ্বাস মিল্টু, মোখলেছুর রহমান মকলেছ, মুকুল জোয়ার্দ্দার, ফারুক মল্লিক, আতিয়ার রহমান লিটন, ফারুক আহমেদ, আরিফুজ্জামান পিণ্টু, শফিকুল ইসলাম পিণ্টু, শরিফুজ্জামান সিজার, এমএ তালহা, রাজিব খান, সুজন মালিক প্রমুখ।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি একাংশ গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে কেদারগঞ্জস্থ জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে হরতালের পক্ষে পিকেটিং মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ হাসান চত্বরে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ আয়োজন করে। পিকেটিং মিছিলে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক পল্টু, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জেলা মহিলাদলের সভানেত্রী রউফুন নাহার রীনা, সদর থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী আব্দুল খালেক, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব সাইফুর রশিদ ঝন্টু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হাজি আব্দুল মান্নান, যুগ্মআহ্বায়ক জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল মিনহাজ উদ্দিন, সরদ থানার সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান, পৌর যুব দল নেতা আজিজুর রহমান, তারিকুল ইসলাম (বিলু) ইন্তাজ, আতিয়ার, মুবা, মনো, জেলা ছাত্রদলের যুগ্মআহ্বায়ক শাজাহান খান, জেলা তরুণদলের আহ্বায়ক মাবুদ সরকার প্রমুখ।

হরতালের সমর্থনে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি অর্থবিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের উদ্যোগে গতকাল বেলা ১১টায় পিকেটিং মিছিল বের করা হয়। কোর্টমোড়স্থ দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিলটি বের হয়ে শহরের শহীদ হাসান চত্বরে পুলিশের বাধায় মাড়িয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন আবু বক্কর সিদ্দিক বকুল, আইনুর হক পচা, সহসভাপতি আরশেদ আলী কালু, হামিদুল হক নেতাজী, আজাদুল ইসলাম আজাদ প্রমুখ।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, হরতাল সফল করতে মেহেরপুরের ৬টি স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াত-বিএনপি নেতাকর্মীরা। হরতালের শুরুতেই সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের রাজনগর ও মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের চকশ্যামনগরে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে। গাছের গুঁড়ি ফেলে টায়ারে আগুন দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরে অবশ্য পুলিশ এসে রাস্তার যান চলাচলের ব্যবস্থা করে। জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি তারিক মহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আমঝুপি ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল জাব্বার ও জেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ নেতৃবৃন্দ এ কর্মসূচির নেতৃবৃন্দ দেন। সড়ক অবরোধের সময় ১০/১২টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনায় হরতাল সমর্থকরা।

এদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেনের নেতৃত্বে গাংনী উপজেলার ৪টি স্থানে সড়ক অবরোধ করা হয়। মেহেরপুর-হাটবোয়ালিয়া সড়কের পূর্ব মালসাদহ, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের বাঁশবাড়িয়া, পশ্চিম মালসাদহ এবং ছাতিয়ান-বাওট এলাকার টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে নেতাকর্মীরা। সকাল পৌনে ৮টার দিকে গাংনী উপজেলার বামন্দী বাজারে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। এ সময় ৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। বিক্ষুব্ধ হরতাল সমর্থকরা মটমুড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইছার উদ্দীনের বামন্দীস্থ বাসভবনে হামলা চালায়। জানালার কয়েকটি গ্লাস ভাঙচুর ও গ্রিলে হামলা চালায় বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। ককটেলের আঘাতে বিএনপির দু জন সমর্থক আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। পশ্চিম মালসাদহে অবরোধের সময় উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেন, উপজেলা যুবদলের সভাপতি আক্তারুজ্জামান ও পৌর বিএনপির যুগ্মসম্পাদক মকবুল হোসেন মেঘলা। বাঁশবাড়িয়ায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহারবাটি ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলু, উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি আখেরুজ্জামান ও কাথুলী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুর রউফ, পশ্চিম মালসাদহে উপস্থিত ছিলেন পৌর বিএনপির সভাপতি পৌর ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইনসারুল হক ইন্সু, পৌর যুবদলের সভাপতি ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ হীল মারুফ পলাশ, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দাল হক ও উপজেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি কামরুল ইসলাম। বামন্দীতে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপি সভাপতি রেজাউল হক, বামন্দী ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি আমিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহিদ বিশ্বাস, কাজিপুর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি রাহাতুল্লাহ ও ছাত্রদল নেতা জাহিদ। বাওটে উপস্থিত ছিলেন মটমুড়া ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি আব্দুল হামিদ ও সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামসহ নেতৃবৃন্দ। গতকালের কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক জামায়াত বিএনপি নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। গাংনী শহরের উপকণ্ঠে তিন দিক থেকে অবরোধ চলে। এ সময় তারা লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র (রামদা) নিয়ে মিছিল করে। এতে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ হয়।

মেহেরপুর অফিস আরও জানিয়েছে,  মেহেরপুরে ১৮ দলের ডাকা টানা ৬০ ঘণ্টার হরতালে পুলিশের বাধার মুখে হরতাল সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল পণ্ড হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে মেহেরপুর শহরের শাহাজীপাড়াস্থ জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক আনছার-উল হকের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি রাস্তায় বের হলে পুলিশের বাধার মুখে তা পণ্ড হয়ে যায়। পরে বিএনপির শাহাজীপাড়াস্থ কার্যালয়ে জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক আনছার-উল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক কালু, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম বড় বাবু, যুগ্মআহ্বায়ক প্রভাষক ফয়েজ মোহাম্মদ, সদর থানা যুবদলের সহসভাপতি নুর তাজুল, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মুকুল, পৌর যুবদলের সহসভাপতি আনিছুর রহমান লাভলু, রুহুল আমিন, যুগ্মসম্পাদক সামছুল আযম লিন্টু, সদর থানা তৃণমূলদলের সভাপতি ওমর ফারুক লিটন, তৃণমূল দল নেতা মোস্তাক রাজা, যুবদল নেতা একরামূল হক একা, তৌফিক এলাহী, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন মিন্টু, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. মোস্তাকিম, সহসভাপতি মীর আলমগীর ইকবাল আলম, তরুণদলের সাধারণ সম্পাদক ইউনুচ আলী, ছাত্রদল নেতা রেমিম, কানন, ইকবাল, সানি, রেজভি, জনি প্রমুখ।

এদিকে বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ৬০ ঘণ্টা হরতালের প্রথম দিন গতকাল সোমবার মেহেরপুর আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার কোনো যান চলাচল করেনি। তরে শহরে রিকসা-ভ্যানসহ ছোট ছোট যান চলাচল করতে দেখা যায়। এদিন অফিস আদালত খোলা থাকলেও লোকজনের উপস্থিতি কম ছিলো। ব্যাংক-বীমায় লেন-দেন হয়েছে সন্তর্পনে। স্কুল-কলেজে ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি কম ছিলো। শহরের গুরুত্বপূর্ণস্থান সমূহে পুলিশ মোতায়েন ছিলো।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, কেন্দ্র ঘোষিত ৬০ ঘণ্টা হরতালের প্রথম দিনে গতকাল আলমডাঙ্গা উপজেলা ও পৌর বিএনপির উদ্যোগে আলমডাঙ্গা শহরে পিকেটিং ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সকাল ১০টার দিকে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে আলমডাঙ্গার প্রধান প্রধান সড়কে পিকেটিং করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন পৌর বিএনপির সহসভাপতি রেজাউল হক। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুর জব্বার, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি হাসানুজ্জামান হাসান চেয়ারম্যান, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এমদাদুল হক ডাবু, উপজেলা বিএনপি সহসভাপতি আজিবার রহমান ও উপজেলা কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন। উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের উপস্থাপনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পৌর বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম, ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি রেজাউল করিম, হাফিজুর রহমান চমক, উপজেলা যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক মিল্টন মল্লিক, মাগরিবুর রহমান, ওহিদুল ইসলাম বাবু, শওকত খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের বাকী বিল্লহ, ইউনুস, পৌর যুবদল নেতা মুকুল, মামুন, গোলাম, লাল্টু, ছাত্রদল নেতা, তৌফিক খান, শওকত, লিমন, রহিদ, বাপ্পি, রাশেদ, তনু, শান্ত, সাগর, মানিক, তন্ময় আকরাম প্রমুখ।

ডিঙ্গেদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, হরতালের পক্ষে ও বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিলের ফলে আশঙ্কা উত্তেজনার মধ্যদিয়ে পালিত হলো ডিঙ্গেদহ বাজারে ১৮দলীয় জোটের হরতাল কর্মসূচি। সকাল ৯টায় ১৪ দলের উদ্যোগে শঙ্করচন্দ্র ইউপি চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন, আবু সুফিয়ান বিল্লাল, বাচ্চু মিয়া ও বজলুর রহমান নেতৃত্বে হরতালের বিপক্ষে ডিঙ্গেদহ বাজারের বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এ সময় বাজারের দোকানপাট খোলার আহব্বান জানানো হয়।

অপরদিকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিএনপি নেতা সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, বিএনপি নেতা রমজান আলী, আতিয়ার রহমান লিটন, প্রফেসার আতিয়ার রহমান, জামায়েত নেতা ওসমান গনির নেতৃত্বে হরতালের সমর্থনে ১৮ দলীয় জোটের বিক্ষোভ মিছিল বের হলে বাজারে উত্তেজনা ছড়াতে থাকে। সংবাদ পেয়ে ডিঙ্গেদহ বাজারে পুলিশ অবস্থান নেয়। এ সময় সংঘর্ষ বাধার আশঙ্কায় সাধারণ ব্যাবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেন।

বদরগঞ্জ ব্যুরো জানিয়েছে, হরতালের প্রথম দিন গতকাল সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের বদরগঞ্জ, সরোজগঞ্জ ও ডিঙ্গেদহ সড়ক ছিলো সারাদিন ফাঁকা। রাস্তায় ছিলো না কোনো ভারী যানবাহনের চলাচল। বদরগঞ্জ-সরোজগঞ্জ ও ডিঙ্গেদহ এলাকায় উল্লেখযোগ্য কোনো নাশকতা ভাঙচুর ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি। বদরগঞ্জ, সরোজগঞ্জ ও ডিঙ্গেদহ বাজারে সোমবার সকাল ৬টা থেকেই ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা নেমে আসেন রাজপথে। বন্ধ হয়ে যায় ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গাসহ জেলার বিভিন্ন প্রকার রাস্তায় যানবাহন চলাচল। এ সময় ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কে টহল দিতে দেখা যায় পুলিশ বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যসহ বিভিন্ন প্রকার আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।

অন্যদিকে প্রহর গোনেন অফিসগামী অনেক সরকারি কর্মকর্তা। অনেকেই মহাসড়ক বাদ দিয়ে গ্রাম্য এলাকার পথ দিয়ে কোনো হালে কর্মস্থলে পৌঁছান।

ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, ঝিনাইদহে হরতালবিরোধী মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তন থেকে মিছিলটি বের হয়। মিছিলে জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের সহস্রাধিক নেতাকর্মী মিছিলে অংশ নেন। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সমাবেশ করে নেতাকর্মীরা। সমাবশে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আজিজুর  রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা তৈয়ব আলী জোয়ার্দ্দার, আক্কাচ আলী, কাজী কামাল আহমেদ বাবু, আশরাফুল ইসলাম, খাইরুল ইসলাম, বিশ্বজিত সাহা মিথুনসহ নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিএনপি-জামায়াত হরতালের নামে মানুষ খুনের রাজনীতি শুরু করেছে। হরতালে বিএনপি-জামায়াত যেখানেই নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। বক্তারা হরতাল অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি বাদ দিয়ে বিরোধীদলকে শান্তিপূর্ণ রাজনীতিতে ফিরে আসার আহ্বান জানান।

কালীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের  কালীগঞ্জে  ৬০ ঘণ্টা হরতালের প্রথম দিনে সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান বেল্টু সমর্থনে মোবারকগঞ্জ স্টেশনের ট্রেনলাইনের ওপর টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান নেয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। গতকাল সকাল ৭টায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মোবারকগঞ্জ ট্রেনলাইনের ওপর টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সমাবেশ করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ সময় হরতালের সমর্থনে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন থানা বিএনপির সহসভাপতি আলাউদ্দীন আলা, জেলা ছাত্রদলের যুগ্মআহ্বায়ক ইলিয়াস রহমান মিঠু, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

হরিণাকুণ্ডু প্রতিনিধি জানিয়েছেন, হরতালের ১ম দিন হরিণাকুণ্ডুতে শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হয়। হরতালের পক্ষে বিপক্ষে কোনো সমর্থক রাস্তায় পিকেটিং না করলেও স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হওয়ায় হরিণাকুণ্ডু শহরের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিলো না বললেই চলে। অফিস আদালতে সেবা গ্রহণকারীদের তেমন একটা দেখা যায়নি। জেলা সদরসহ দূরপাল্লার কোনো পরিবহন চলাচল করেনি। তবে গ্রামীণ পরিবহনখ্যাত আলমসাধু-নসিমন মাঝে মধ্যে দু একটা সন্তর্পনে রাস্তায় চলাচল করতে দেখা গেছে। সরকার ও বিরোধী উভয় মহলের মধ্যে একটি শঙ্কা বিরাজ করায় তারা রাজপথে সরব হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে।

আমঝুপি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, হরতালের প্রথম দিনে গতকাল ভোর ৬টার দিকে আমঝুপি বারাদী সড়কে রাজনগর গ্রামে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। একই সময়ে মহিলা জামায়াতের উদ্যোগে একটি লাঠি মিছিল ওই সড়ক প্রদক্ষিণ করে। হরতালকর্মীরা রাস্তার ওপরে ৫টি পটকা ফাঁটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে অবরোধকারীরা ছত্র ভঙ্গ হয়ে যায়।

দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, দামুড়হুদায় ১৮ দলের ডাকা ৬০ ঘণ্টার হরতাল প্রথম দিন শান্তিপূর্ণভাবে অতিবাহিত হয়েছে। রাস্তায় কোনো ভারী যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। হরতালের পক্ষে-বিপক্ষে কোনো মিছিল, সমাবেশ হয়নি। শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল অতিবাহিত হওয়ায় দামুড়হুদা উপজেলা ১৮ দলের আহ্বায়ক লিয়াকত আলী শাহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

ডাকবাংলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা বাজারে গতকাল বিকেল ৪টার দিকে সাধুহাটি ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর আনামের নেতৃত্বে হরতালের সমর্থনে মিছিল হয়েছে। বাজারের প্রধান প্রধান সডক ঘুরে কাজী সড়কে সমাবেশ করেন নেতৃবৃন্দ। বক্তব্য রাখেন সদর থানা যুবদলের সহসভাপতি শাহীন রেজা সোহরাব, সাধুহাটি ইউনিয়ন যুবদলের সহসভাপতি ওলিয়ার রহমান, সেস্বচ্ছসেবক দলের সভাপতি জাকির হোসেন, সাগান্না যুবদলের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, বাজার যুবদলের সভাপতি নাহিদ, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সিনিয়র সভাপতি মো. হাফিজুর রহমান, যুবদলের প্রচার সম্পাদক রিপন, মিলন, আফাঙ্গীর, বছির প্রমুখ।

এদিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পশ্চিমশাখার উদ্যেগে ডাকবাংলা বাজারে গতকাল সকাল ৯টায় ছাত্রশিবির একটি মিছিল করে। মিছিলটি নারায়ণপুর ত্রিমহণী থেকে শুরু হয়ে ডাকবাংলা জামে মসজিদে এসে শেষ হয়। মিছিলের নেতৃত্ব দেন সদর শাখা শিবির সভাপতি মো. নাজমুন হোসেন।

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকালের হরতালের শুরুতেই মেহেরপুর গাংনী শহরে হরতালবিরোধী অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মকবুল হোসেনের উদ্যোগে শহরের বাসস্ট্যান্ড, হাসপাতালবাজার ও উত্তরপাড়া সড়কে নেতাকর্মী জড়ো হয়। ভোর থেকেই বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচি ঘিরে বিভিন্ন এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা গাংনী শহরে অবস্থান নেয়। যেকোনোভাবেই গাংনী শহরে হরতালকারীদের প্রবেশ ঠেকাতে মরিয়া হয়ে ওঠে তারা। বাসস্ট্যান্ডে চলে কয়েক দফা বিক্ষোভ। পুলিশের সাজোয়া অবস্থান শহরের সড়ক ও ওলি-গলিতে টহল দিতে থাকে। শেষ পর্যন্ত বিএনপি জামায়াত নেতাকর্মীরা গাংনী শহরে প্রবেশ করেনি। ভোর থেকেই বিকেল পর্যন্ত বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিপুল পরিমাণ লোকজনের সমাগম ঘটায় আওয়ামী লীগ। উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোকলেছুর রহমান মুকুল, পৌরমেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আহম্মেদ আলী, উপজেলা যুবলীগের যুগ্মসম্পাদক মজিরুল ইসলাম, ধানখোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাবু, বঙ্গবন্ধু স্মৃতিক্লাবের সভাপতি আশিকুর রহমান আকাশ, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিলন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসান রেজা সেন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর, কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল ও পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাবীব, যুবলীগ নেতা আব্দুল হান্নান হনা, শামীম আহম্মেদসহ নেতৃবৃন্দ।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের দ্বিতীয় দফায় ডাকা টানা তিনদিনের হরতালের গতকাল সোমবার জীবননগরে কঠোর হরতাল পালিত হয়েছে। বাজারের সকল দোকানপাট ছিলো বন্ধ। উপজেলা শহরের টিঅ্যান্ডটি রোডের মুখে ও সন্তোষপুর পিকেটিংকালে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী কয়েকটি আলমসাধু ভাঙচুর করে। এ সময় সন্তোষপুরে পিকেটাররা একটি পাউয়ার টিলার সড়কের পাশে খাদে মধ্যে উল্টে ফেলে দেয়। শহরজুড়ে ছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ভোরে উপজেলা বিএনপির একাংশ পৌর মেয়র নোয়াব আলীর নেতৃত্বে হরতাল পালনে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ করে বিএনপি কার্যালয়ে সমাবেশ করে বলে লিখিতভাবে জানিয়েছে। সমাবেশে অবিলম্বে অবৈধ মহাজোট সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তণের দাবি জানিয়ে সভাপতির বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেয়র নোয়াব আলী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা মহিলা দল সভানেত্রী উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা আক্তার রিনি, পৌর বিএনপি সভাপতি পৌর প্যানেল মেয়র মশিউর রহমান, বিএনপি নেতা তাজুল ইসলাম, দফতর সম্পাদক আনিছুর রহমান শিপলু, আবুল হোসেন তোয়া, বিএনপি নেতা পৌর কাউন্সিলর হযরত আলী, কাউন্সিলর সামসুজ্জামান হান্নু, হারুন অর রশিদ, আবু বকর সিদ্দিক, কুদ্দুছ আলী, যুবদল নেতা আপিল মাহমুদ, আব্দুল মালেক, বিল্লাল হোসেন, ছাত্রদল নেতা হাসান, রয়েল, বাপ্পা, সুমন, ইয়াদুল, সুজন প্রমুখ। এছাড়াও বিএনপির অন্যান্য গ্রুপও বিচ্ছিন্নভাবে হরতাল সফলে পিকেটিং করে বলে খবর পাওয়া গেছে।