সংঘর্ষে রণক্ষেত্র বকশিবাজার

স্টাফ রিপোর্টার: ছাত্রলীগ ও পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে গতকাল বুধবার বকশিবাজার, চানখাঁরপুল, নাজিমউদ্দিন রোড ও পলাশী এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে ২৮ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পুলিশ ২৪ জনকে আটক করেছে। বিক্ষুব্ধ বিএনপি কর্মীরা বকশিবাজার থেকে চানখাঁরপুল ও নাজিমউদ্দিন রোডে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এ সময় পুলিশ ৫০ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস শেল, রায়টকার থেকে ব্যাপক রাবার বুলেট, শটগানের ফাঁকা গুলি ও জলকামান নিক্ষেপ করে। বিক্ষুব্ধ বিএনপি কর্মীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে নেত্রকোনা-১ আসনের এমপি ছবি বিশ্বাসের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও তার ওপর হামলা করে। তার মাথা ফেটে যায়। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গাড়িতে আগুন দেয়ার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ছাত্রদলের এক কর্মীকে দু বছরের সাজা দিয়েছেন। হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় শাহবাগ ও চকবাজার থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

গতকাল বুধবার পুরান ঢাকার বকশিবাজার এলাকার আলিয়া মাদরাসার মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে দুটি দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হাজিরা দেয়াকে কেন্দ্র করে এ পরিস্থিতির সূত্রপাত। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খালেদা জিয়ার হাজিরাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীরা আদালতের বাইরে অবস্থান নেয়। চকবাজার, শাহবাগ ও লালবাগ থানা পুলিশ ছাড়াও বকশিবাজার এলাকায় এপিবিএনসহ অতিরিক্ত পুলিশ, রায়টকার, জলকামান মোতায়েন করা হয় ভোর থেকে। নগরীর অন্যান্য এলাকায়ও নেয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা। সকাল থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফজলে রাব্বী হলের সামনের চৌরাস্তায় রাস্তা বন্ধ করে সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। দুপুর ১২টা ৪ মিনিটে ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগের নেতৃত্বে ৬০-৬৫ জন নেতাকর্মীর একটি মিছিল পলাশী মোড় হয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দিক থেকে বকশিবাজারের দিকে এগোতে থাকে। মিছিলে মুখোশ ও হেলমেট পরা কয়েকজনের হাতে পিস্তলসহ বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। অন্যদের হাতে ছিলো বাঁশের বড় লাঠি, হকিস্টিক, রড, ইটসহ দেশীয় অস্ত্র। মিছিলটি বুয়েট ক্যাম্পাস পার হয়ে বকশিবাজার চৌরাস্তায় বিএনপির নেতাকর্মীদের জমায়েতের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করতে থাকে। বিএনপি ও ছাত্রদলের কর্মীরাও পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে চরম সংঘর্ষ বেধে যায়। প্রায় ২০ মিনিট ধরে সংঘর্ষ চলতে থাকলেও পুলিশ অ্যাকশনে যায়নি। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে বকশিবাজার, চানখাঁরপুল, নাজিমউদ্দিন রোড, বুয়েট ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকায়। এ সময় উভয়পক্ষ লঠিসোটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় ১০ থেকে ১২টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ১২টা ২২ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারসন আদালতের উদ্দেশে বকশিবাজার চৌরাস্তা অতিক্রম করেন। বিএনপির কর্মীরা তার গাড়ির চারপাশে বলয় সৃষ্টি করে আদালতের দিকে এগিয়ে দেয়। একই সময় বঙ্গবাজারের মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের গোড়া থেকে বকশিবাজার পর্যন্ত রাস্তার কয়েকটি স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও বিক্ষোভ করতে থাকে বিএনপির কর্মীরা।

এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে উভয়পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করতে ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ টিয়ার শেল, জলকামান ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ শুরু করে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে বিএনপি নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তারা এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। এ সময় বিএনপির কর্মীরা প্রায় ২৫-৩০টি গাড়ি এবং কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করে। প্রায় ৩ ঘণ্টা বকশিবাজার, নাজিমউদ্দিন রোড ও চানখাঁরপুল এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এতে আশপাশের সড়কগুলোতে ব্যাপক যানজট দেখা দেয়। বেলা পৌনে ২টায় সংঘর্ষ বন্ধের পর বঙ্গবাজার থেকে চানখাঁরপুল হয়ে বকশিবাজার, পলাশী, বকশিবাজার আলিয়া মাদ্রাসা, বকশিবাজার থেকে জগন্নাথ হল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের সড়কে শুধু ইট, পোড়া টায়ারসহ হামলার ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে।

বিএনপি নেতাকর্মীদের একটি অংশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ হাসপাতালের ভেতরে অবস্থান নেয়। সেখানেও নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিকলীগের ঢাকা মেডিকেল ইউনিট। এ হামলায় কয়েকজন আহত হন। বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল কর্মীরা গেটের বাইরে নেত্রকোনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাসের জাতীয় সংসদের স্টিকার লাগানো গাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।