শ্লীলতাহানির অভিযোগে শিক্ষকের মাখার চুল কেটে গলায় জুতোর মালা দিলো স্থানীয় জনতা

মুজিবনগর দারিয়ারপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীর অভিযোগ

 

মুজিবনগর প্রতিনিধি: ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ফেঁসে গেলেন মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলা দারিয়াপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। জনরোষে পড়ে হারালেন মানসম্মান ও মহান পেশার সুনাম। শাস্তি স্বরুপ স্থানীয় লোকজন তার চুল কেটে গলায় ঝুলিয়ে দিলেন জুতোর মালা। গতকাল বুধবার সকালে দারিয়াপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোর ঝড় তুলেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দারিয়াপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভকেশনাল শাখার দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকেই কু-প্রস্তাব দেন সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক। মাঝেমধ্যেই করতেন উত্ত্যক্ত। ছাত্রী বিষয়টি তার মায়ের কাছে জানালে তিনি মঙ্গলবার প্রধান শিক্ষকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। প্রধান শিক্ষক বিষয়টির বিচার-শুনানির জন্য আজ বৃহস্পতিবার ম্যানেজিং কমিটির সভা আহ্বান করেন। কিন্তু তার আগেই জনরোষ বাড়তে থাকে। বিষয়টি লোকমুখে প্রচার হলে জনমনে ক্ষোভ ও প্রতিশোধের আগুন জ্বলতে থাকে। প্রতিদিনের ন্যায় গতকাল বুধবার সকালে আব্দুর রাজ্জাক বিদ্যালয়ে যান। এ সময় স্থানীয় উত্তেজিত লোকজন তাকে ধরে গণপিটুনি দেয়। পেটাতে পেটাতে বিদ্যালয় সংলগ্ন দারিয়াপুর বাজারে নিয়ে যায়। সেখানে একটি চেয়ারে বসিয়ে কয়েক যুবক কাইচি দিয়ে তার মাথার চুল কেটে দেন। এ সময় গলায় জুতোর মালা ঝুলিয়ে উল্লাস প্রকাশ করে। খবর পেয়ে ওই শিক্ষকের স্ত্রী ঘটনাস্থলে এসে স্বামীকে জড়িতে ধরে তাকে রক্ষার চেষ্টা করেন। স্বামী নির্দোশ ও ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবি করেন তিনি। পরে স্বামীকে নিয়ে তিনি নিজ বাড়িতে পৌঁছান। বাড়ির প্রধান ফটকে ভেতর থেকে তালাবন্ধ করে ভেতরে অবস্থান করেন বাড়ির লোকজন। লোক লজ্জার ভয়ে তারা সারাদিন বাড়ি থেকে বের হননি। এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরুন কুমার মণ্ডল ও মুজিবনগর থানার ওসি কাজী আব্দুস সালেক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কিয়ামত আলী জানান, ছাত্রীর মায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে ম্যানেজিং কমিটির জরুরি সভা ডাকা হয়। কিন্তু তার আগেই এই ঘটনায় হতবাক শিক্ষকবৃন্দ। বিদ্যালয়ের এ সম্মানহানিকর ঘটনায় তিনি কি করবেন তা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মুজিবনগর থানার ওসি কাজী আব্দুস সালেক জানান, ছাত্রী কিংবা বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দিলে ওই শিক্ষককে আটক পুর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পক্ষান্তরে শিক্ষক পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে তাতেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে এ ঘটনায় এলাকায় আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। উভয়পক্ষের লোকজন ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছেন। বিচারের আগেই স্থানীয়দের বিচার নিয়েও চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।