শ্বশুর-জামাইকে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করার পর হাসপাতালেও ফিল্মি স্টাইলে কোপ

 

স্টাফ রিপোর্টার: দামুড়হুদার কলাবাড়ী উত্তরপাড়ায় দিন দুপুরে বাড়ির উঠোনে বোমা ফাটিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে শ্বশুর নবীছদ্দিন (৪০) ও জামাই রাজাপুরের মুকুলকে (২৩) ক্ষতবিক্ষত করেই খ্যান্ত হয়নি, হামলাকারীরা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগেও ফ্লিমি স্টাইলে হামলা চালিয়েছে। চিকিৎসকসহ সহকারীদের সামনেই রোগী নবীছদ্দিনের মাথায় কোপ মেরে নির্বিঘ্নে সরে পড়েছে হামলাকারীরা। হামলার শিকার শ্বশুর-জামাইকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপা০তালে নেয়া হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যখন চিকিৎসা চলছিলো তখন রোগীর ওপর হামলা চালিয়ে মাথায় কোপ মারার দৃশ্য দেখে চমকে ওঠেন উপস্থিত সকলে। নজিরবিহীন এ ঘটনা অবলীলায় অস্বীকার করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, হাসপাতালে হামলার ঘটনা ঘটেনি।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার জুড়ানপুর ইউনিয়নের কলাবাড়ী উত্তরপাড়ার মৃত হারু মণ্ডলের ছেলে নবীছদ্দিনের সাথে চাচাতো ভাই রবিউলের দীর্ঘদিন ধরেই জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। মামলাও হয়েছে দু পক্ষের মধ্যে। স্থানীয়রা এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, পূর্ব বিরোধের জের ধরেই গতকাল শনিবার দিন দুপুরে ভাড়াটে গুণ্ডাদের দিয়ে নৃশংস হামলা চালিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী নবীর স্ত্রী শামীমা খাতুন (৩৫) জানান প্রায় ৪বছর ধরে চাচাতো ভাই কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা রবির সাথে জমি-জমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এই নিয়ে কোর্টে মামলাও চলছে। তবে মামলা তুলে নিতে প্রায়ই হুমকি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে আমরা যখন বাড়ির উঠোনে ভুট্টা বাছার কাজ করছিলাম অতর্কিতভাবে রবির ছেলে মাসুদ রানাসহ প্রায় ১০জন ভাড়াটে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হাতে বড় বড় রামদা নিয়ে বাড়িতে ঢুকে ভুট্টার গুলে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাড়িতে থাকা টিন কোপাতে থাকে। এক পর্যায়ে নবী কথা বললে তারা বলে তোকেই তো কাটতে এসেছি। তাকে ধরার চেষ্টা করলে দৌড়ে কয়েক বাড়ি পরে তার আর এক ভাই ছানোয়ারের বাড়ির ভেতর ঢুকলে সন্ত্রাসীরা তার পেছন পেছন ধাওয়া করে ধরে বাড়ির ভেতরেই কোপাতে থাকে। নবীর জামাই আলুকদিয়া রাজাপুরের মুকুল ছাদের ওপর ভুট্টা শুকানোর এক পর্যায়ে কোপানো দেখে ছাদ থেকে ঝাপ দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাকেও কোপ দিতে থাকে। এলাকাবাসী খবর পেয়ে ছুটে গেলে অবস্থা বেগতিক দেখে গেটের দরজা কুপিয়ে এলাকার লোকজনের মাঝে ভীতি সৃষ্টির লক্ষ্যে বোমা ফাটিয়ে মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়। এলাকাবাসী মৃতপ্রায় নবী ও তার জামাইকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠায়। অপরদিকে খবর পেয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই মনিরুজ্জামান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং সেখান থেকে বোমার আলামত ও একজন সন্ত্রাসীর সেন্ডেল উদ্ধার করেন। দিন-দুপুরে গ্রামে ঢুকে এমন কোপাকুপিতে আতঙ্কে পুরো গ্রামের লোকজন। তারা অভিযোগ করে বলেন বাইরে থেকে যদি সন্ত্রাসীরা দিনদুপুরে অস্ত্রের মহড়ার সাথে প্রকাশ্যে কুপিয়ে যেতে পারে তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? তাই যারা প্রকাশ্যে এমন নির্মম ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের ধরে কঠোর শাস্তির দাবি জানাই। সেই সাথে তাদের নিরাপত্তা চেয়ে উচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নবীছদ্দিনের চিকিৎসা দেয়ার সময় ৩ জনের একদল সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। নবীছদ্দিনের মাথায় কোপ মারে। দৃশ্য দেখে উপস্থিত চিকিৎসক ডা. সউদ কবীর জনসহ সহকারীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন জরুরি বিভাগের স্বেচ্ছাসেবক মিলন।

প্রত্যক্ষদর্শী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, এলাকারই এক চিহ্নিতসহ ৩ জন একটি মোটরসাইকেলযোগে আসে। জরুরি বিভাগের পূর্ব প্রান্তের গেটে অর্থাৎ উপজেলা পরিষদ প্রান্তের দরজার পাশে মোটরসাইকেল রেখে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ৩ জনের একজন জরুরি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীর মাথায় কোপ মারে। রক্তাক্ত জখম রোগীর মাথায় আবারও গুরুতর জখম হয়। হামলাকারীরা মোটরসাইকেলযোগে ট’বাজার হয়ে সটকে পড়ে। দৃশ্য দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীর ওপর হামলার বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার সচেতন মহল আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। একই সাথে হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তারা।