শ্বশুরের বাড়িতে চার্জার লাইট কারখানার আড়ালে রাকিব গড়ে তোলে তার গ্যাঙের ডেরা

 

স্টাফ রিপোর্টার: আলুকদিয়া মোনিরামপুরের রাকিব দীর্ঘদিনের দাঁগি। তার গড়ে তোলা গ্যাং কি শুধু সজিবকেই অপহরণের পর হত্যা করেছে? নাকি আরও অনেকেই ওই গ্যাঙের শিকার হয়েছে? অপহরণের পর সজিবকে মারতে হলো কেনো? তবে কি রাকিব গ্যাঙের কাওকে সজিব চিনে ফেলেছিলো? এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজচ্ছে ৱ্যাব-পুলিশ।

গতপরশু বুধবার স্কুলছাত্র সজিবের অর্ধগলিত লাশ রাকিবের চার্জার লাইট তৈরির কারখানার উঠোনে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধারের পর নানা প্রশ্ন দানা বেধেছে। অপহরকচক্রের হোতা মনিরামপুরে রাকিবের শ্বশুর, শাশুড়ি ও শ্যালককে গতকাল জেলহাজতে প্ররণ করা হয়েছে। এদিকে সজীবকে অপহরণের পর হত্যার প্রতিবাদে গতকাল তার ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিক্ষকরা বিক্ষোভসমাবেশে মিলিত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আর একজন ছাত্রকেও যেনো ওইভাবে হারাতে না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষকমণ্ডলীরা অশ্রভরা কণ্ঠে দাবি জানান।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র মাহফুজ আলম সজিবের হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্র সংসদের আয়োজনে সকাল ও দিবা শিফটে পৃথক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের শুরুতে সজিবের আত্মার মাগফেরাত কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনি মোহন বিশ্বাস, সহকারী শিক্ষক হাফিজুর রহমান, আব্দুস সামাদ, অশোক কুমার অধিকারীসহ আরও অনেকে। এছাড়া ছাত্র সংসদের আবির, আলিফ, অন্তরসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ বক্তারা বলেন, সজীব মেধাবী ছাত্র ছিলো। তার ইচ্ছে ছিলো বড় হয়ে দেশের উন্নয়ন করা। তার মতো মেধাবী ছাত্রকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদেরকে অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে। অবিলম্বে সজিবের হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দ্রুত ফাঁসি কার্যকরের দাবি জানান তারা। পরে দোয়া মাহফিলে দোয়া পরিচালনা করেন সহকারী শিক্ষক তসলিম উদ্দিন।

চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র মাহফুজের হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে ঘাতক চক্রের সদস্যদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও ফাঁসির  দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্র সংসদের আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে ৮ম শ্রেণির ছাত্র মাহফুজ আলম সজিবের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবি জানান। সমাবেশে সজিবের আত্মার মাগফেরাত কামনায় নীরবতা পালন করা হয়। বক্তব্য দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিমোহন বিশ্বাস প্রমুখ।

দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদায় দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত স্কুলছাত্র সজিবের হত্যাকারীদের গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আগামী রোববার দামুড়হুদা বাজারে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু ও উপজেলা ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি ডা. মাসুম আলী খান এলাকাবাসির পক্ষ থেকে মানববন্ধন কর্মসূচির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে হত্যা ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে আটক চুয়াডাঙ্গা সিঅ্যান্ডবিপাড়ার কোরবান ও তার স্ত্রী-ছেলেকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করেছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল খালেক। তিনি বলেছেন, আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ওই ৩ জনের জামিন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছেন।

দামুড়হুদা থানার ওসি আবু জিহাদ জানান, গত বুধবার নিহত সজিবের মামা আব্দুল হালিম বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে দামুড়হুদা মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। আটক কোরবান আলী ও তার স্ত্রী-ছেলে সেফটিক ট্যাংক নিজেরাই তৈরি করেছে এবং ওই সেফটিক ট্যাংকের মুখও আটকিয়েছে বলে পুলিশের কাছে অকপটে স্বীকার করেছে। ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামিদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যহত রাখা হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। কোরবান আলী চুয়াডাঙ্গা আলুকদিয়া মনিরামপুরের রাকিবুল ইসলাম রাকিবের শ্বশুর। রাকিব তার ওই শ্বশুরবাড়িতে চার্জার লাইটের কারখানা করলেও সেটা তার গ্যাঙের ডেরা হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলো। পুলিশ তদন্তে এসব বের হতে শুরু করেছে।

উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা চত্বরে অনুষ্ঠিত বৃক্ষমেলা প্রাঙ্গণ থেকে দামুড়হুদা ব্রিজপাড়ার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র সজিব নিখোঁজ হয়। এ সংক্রান্তে নিহত সজীবের নানা আব্দুল হামিদ পর দিন দামুড়হুদা মডেলথানায় একটি সাধারণ ডাইরি করেন। নিখোঁজের ৩২ দিনের মাথায় চুয়াডাঙ্গা শহরের সিঅ্যান্ডবিপাড়ার মৎস্য ভবনের পাশের একটি চার্জার লাইট তৈরি ফ্যাক্টরির (কুরবান আলীর বাড়ি) সেফটিক ট্যাংকির ভেতর থেকে বুধবার সকালে স্কুল ছাত্র সজিবের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার হয়। মোবাইল ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে ৱ্যাব হত্যা ঘটনার সাথে জড়িতদের আটকের পর নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে সজিবকে হত্যার পর তার লাশ গুমের স্থান সনাক্তের পর ওই লাইট তৈরির ফ্যাক্টারিতে ৱ্যাব অভিযান চালিয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মিদের সহযোগিতায় প্রায় ৩০ ফুট গভীর সেফটিক ট্যাংকের মধ্য থেকে সজিবের লাশ উদ্ধার করে। লাশ উদ্ধারের পর দুপুরে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য দুপুরে সদর হাসপাতালমর্গে প্রেরণ করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে নিহত সজিবের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। বেলা সাড়ে ৫টার দিকে দামুড়হুদা পাইলট হাইস্কুল মাঠে নিহত সজিবের লাশের জানাজার নামাজ শেষে দশমী কবরস্থানে দাফন করা হয়। সজিবের অকালমৃত্যুতে তার পরিবারসহ প্রতিবেশীদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মনকে কিছুতেই বুঝ দিতে পারছেনা সজিবের সহপাঠীরা।

এদিকে দামুড়হুদা ব্রিজপাড়ার আব্দুল কাদেরের ছেলে নিহত সজিবের কথিত বন্ধু শাকিলকে (১৫) গত মঙ্গলবার দুপুরে দামুড়হুদা বাজার থেকে শাদা পোষাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনির পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে গেছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও বিষয়টি এখনও পর্যন্ত পুলিশ বা ৱ্যাব কোন পক্ষই স্বীকার করেনি। এদিকে গতকাল নিহত সজিবের মামা আব্দুল হালিম বলেছেন,  আমরা যখন আমাদের সন্তানকে হারিয়ে শোকে কাতর, তখন একটি পত্রিকা বিভ্রান্তকর তথ্য প্রকাশ করে ঘাতক চক্রকে পার পাওয়ানোর চেষ্টা কলেছে। বিভ্রন্তকর তথ্য প্রকাশ করেছে। আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেনো না, সজিবের মা একজন ধর্মভিরু পর্দাসিনি নারী। এছাড়া সজিবের পিতা ১ বছর আগে নয় তিনি মারা গেছেন ৪ বছর আগে। তিনি মৃত্যুর পূর্বে তার সম্পত্তি সজিবের নামে উইল করে যাননি। অথচ বানোয়াট কল্পনাপ্রসূত তথ্য প্রকাশ করে বিভ্রান্ত ছড়িয়েছে।