শেষ হলো এবারের ৪৯তম বিশ্ব ইজতেমা : আখেরি মোনাজাতে লাখ লাখ মুসল্লি

হে আল্লাহ! আমাদের ঐক্য কল্যাণ ও সমৃদ্ধি দান করো

 

স্টাফ রিপোর্টার: মহান আল্লাহ্’র দরবারে দু হাত তুলে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অশ্রুসিক্ত নয়নে জাতির ঐক্য কল্যাণ ও সমৃদ্ধি এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে গতকাল রবিবার শেষ হলো তাবলীগ জামাত আয়োজিত বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব।

বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ এ মোনাজাতে দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি কামনার পাশাপাশি আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ্ মাফের আকুতি জানিয়ে রাব্বুল আলামিনের দরবারে অশেষ রহমত প্রার্থনা করা হয়। মানুষ এ সময় চোখের পানিতে বুক ভাসান। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট নিজেকে সমর্পণে ব্যাকুল হয়ে পড়েন। ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। এক অভূতপর্ব ভাবাবেগের সৃষ্টি হয়।

সকাল ৯-৫৪ মিনিট থেকে ১০-১১ মিনিট পর্যন্ত ১৭ মিনিট স্থায়ী এ মোনাজাত পরিচালনা করেন তাবলিগ জামাতের মারকাজের শুরা সদস্য দিল্লির হযরত মওলানা যোবায়েরুল হাসান। এরমধ্যে দিয়েই শেষ হলো এবারের ৪৯তম বিশ্ব ইজতেমা। আগামী বছর ৯ জানুয়ারি বিশ্ব ইজতেমার তিন দিনব্যাপি প্রথম পর্ব শুরু হবে। চারদিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৬ জানুয়ারি।

গতকাল আখেরি মোনাজাতে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, গাজীপুর জেলা প্রশাসক মো. নূরুল ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবর্গ ও মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের কুটনীতিকবৃন্দ শরিক হন। পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাসহ দলমত শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমান আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন।

ইজতেমাস্থলের চারপাশে প্রায় ৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে তিল ধারণের ঠাঁই ছিলো না। আখেরি মোনাজাতের জন্য গতকাল টঙ্গীর আশপাশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা, অফিস-আদালতে ছিল ছুটি। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা না করলেও কর্মকর্তাদের মোনাজাতে অংশ নিতে বাধা ছিলো না। নানা বয়সী ও পেশার মানুষ এমনকি মহিলারাও ভিড় ঠেলে মোনাজাতে অংশ নিতে গতকাল রোববার সকাল থেকেই টঙ্গী ইজতেমা ময়দানের আশপাশের এলাকায় পৌঁছেন।

আখেরি মোনাজাতের পূর্বে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বি ভারতের হযরত মওলানা মোহাম্মদ সা’দ সংক্ষিপ্ত বয়ানে বলেন, প্রত্যেক মুসলমানকে দিনের বেলায় মেহনত ও রাতের বেলায় ইবাদত-বন্দেগি করতে হবে। দুটির একটি করলে ফায়দা হবে না। মেহনত ও ইবাদতের মধ্যদিয়ে মুসলমানের মৃত্যু পর্যন্ত দ্বীনের রাস্তায় অনড় থাকতে হবে।

ইজতেমাস্থলে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অগণিত মানুষ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়ক, আশুলিয়া-সাভার সড়ক এবং উত্তরা মডেল টাউনসহ আশপাশের এলাকা থেকেই মোনাজাতে অংশ নেন। অসংখ্য মুসল্লি ইজতেমাস্থলে স্থানাভাবে খালি জায়গা, মিল-কারখানার অভ্যন্তর ও ছাদে, ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধ, বিভিন্ন যানবাহনে উঠে এবং ট্রলার ও নৌকায় বসে মোনাজাতে শরিক হন। অনেকেই মোবাইলফোনের মাধ্যমে মোনাজাতে শরিক হন। ইজতেমা ময়দানের বাইরে পর্যাপ্ত মাইক না থাকায় বহু ধর্মপ্রাণ মানুষ সময়মতো আখেরি মোনাজাতে শামিল হতে গিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েন। গত শনিবার রাতে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে ও টঙ্গী আশুলিয়া সড়ক যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় ওই সড়কে যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষ ও মুসল্লিদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।

মোনাজাত পায়নি হাজার হাজার লোক: গতকাল নির্ধারিত সময়ের আগেই মোনাজাত পরিচালিত হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে আগত হাজার হাজার মানুষ মোনাজাতে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। হঠাত্ করে দ্বিতীয় পর্বের মোনাজাতের সময়সূচি এগিয়ে দেয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। এছাড়া মাইকের শব্দ-ত্রুটির কারণে অনেকে মোনাজাত সুষ্ঠুভাবে শুনতে পারেনি। তবে ইজতেমা মাঠে না এসেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে টেলিভিশন ও মোবাইলফোনের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষ মোনাজাতে হাত তুলে শরীক হন।

দু হাজার একশ জামাত তৈরি: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাবলিগের কাজে বের হওয়ার জন্য এবার ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে দু হাজার একশ জামাত তৈরি হয়েছে বলে ইজতেমার শীর্ষ মুরুব্বী ইঞ্জিনিয়ার গিয়াসউদ্দিন জানিয়েছেন। এদের মধ্যে একশর মতো বিদেশিদের জামাত তৈরি হয়েছে। প্রথম পর্বের ইজতেমায় ২ হাজার ৭শ দেশি জামাত ও ৭শ বিদেশি জামাত তৈরি হয়েছে। আগামী ১৫-২০ দিনে মধ্যে এসব জামাত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে সূত্র জানায়।

আরো এক মুসল্লির মৃত্যু: গত শনিবার রাতে ইজতেমায় আসা মুসল্লি¬দের মধ্যে আরো একজন মারা গেছেন। তার নাম আব্দুল গনি (৬৫), পিতা আনু বেপারী বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দাড়িয়াল গ্রামে। এ নিয়ে দু পর্বের ইজতেমায় অংশ নেয়া মুসল্লিদের মধ্যে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭’তে।

মোনাজাত শেষে যানজট: আখেরি মোনাজাত শেষে লাখ লাখ মুসল্লি একসাথে যার যার গন্তব্যে ফিরতে শুরু করেন। এতে সড়ক, মহাসড়ক, রেল ও নৌপথে তিল ধারণের ঠাঁই ছিলো না। যানবাহন সংকটের কারণে অনেক মুসল্লিকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে।