শেখ হাসিনা-হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বৈঠক : বৈঠকের পর সৈয়দ আশরাফ

মধ্য জানুয়ারির মধ্যে নতুন সরকার

বিএনপি না এলেও নির্বাচনে যাবে জাতীয় পার্টি

 

স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, ২০১৪ সালে মধ্য জানুয়ারির মধ্যে নতুন সরকার পাবে দেশ। বিরোধী দল বিএনপির ওপর নির্ভর করছে জাতীয় পার্টি মহাজোট থাকবে কি থাকবে না। কারণ বিএনপি নির্বাচনে না এলে জাতীয় পার্টি মহাজোট থেকে বেরিয়ে বিরোধীদল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবে। গতকাল রোববার রাতে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।

এর আগে সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন আশরাফ। সৈয়দ আশরাফ আরও বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হবেন শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে অন্য কিছু হতে পারে। এটা সস্পূর্ণ নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। সৈয়দ আশরাফ আশা প্রকাশ করেন, বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেবে। যদি তারা নির্বাচনে না আসেন তাহলে জাতীয় পার্টিকে সাথে নিয়েই নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠন করা হবে। নির্বাচনে যাবে জাতীয় পার্টি।

এদিকে এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে মন্ত্রীসভা কীভাবে হবে সে বিষয়ে গতকালের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

নির্বাচনকালীন মন্ত্রীসভায় আপনারা কোনো সাংসদের নাম দিয়েছেন কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রহুল আমিন হাওলাদার বলেন, বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। দলে আলোচনার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

জাতীয় পার্টি একা নির্বাচনে অংশ নেবে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, আমরা আগেই বলেছি, আমরা মহাজোটে থেকেই অথবা মহাজোটের বাইরে থেকে একা নির্বাচন করবো। তবে পরিস্থিতি বলে দেবে আমরা একা নির্বাচন করবো কি-না। আজকের প্রেক্ষাপটে আমরা একা নির্বাচন করার বিষয়ে আলোচনা করেছি। গত শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়ে তাতে বিরোধীদলের সদস্যদের নাম আহ্বান করেন। পরদিন এক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সর্বদলীয় সরকার গঠনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব স্পষ্ট হয়নি। এরপর গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে আলোচনায় বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।

রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে জাতীয় পার্টির নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত রাতে গণভবনে এ বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে নেতারা প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নৈশভোজে অংশ নেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাথে দলের ১৪ জন নেতা অংশ নেন এতে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাও উপস্থিত ছিলেন। এদিকে হাসিনা-এরশাদ বৈঠক ঘিরে গত পরশু দিনভর নানা জল্পনা ছিলো রাজনৈতিক অঙ্গনে। এ বৈঠক করার আগে দলের নেতারা আলাদাভাবে আলোচনা করেন এরশাদের সাথে। নির্বাচন পদ্ধতি, মহাজোটে থাকা-না থাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এরশাদ দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। এমন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ডাক আসায় বেকায়দায় পড়েন তিনি। এ কারণে দলের সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ নিয়ে সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অসুস্থতার কারণে সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ বৈঠকে অংশ নিতে পারেননি। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে নেতারা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এ সময় নির্বাচনকালীন সরকার এবং নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির নেতাদের পরামর্শ চান প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মহাজোটের শরিকদের সাথে আলোচনা করে প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দেয়ার কথা বলেছিলেন। এর অংশ হিসেবে গতকাল প্রথম জাতীয় পার্টির সাথে বৈঠক করেন। পরে অন্য দলগুলোর সাথেও তিনি বৈঠক করবেন। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় দলের নেতাদের নিয়ে গণভবনে প্রবেশ করেন এরশাদ। এরশাদের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমেদ, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য জি এম কাদের, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, কাজী মাহমুদ হাসান, কাজী ফিরোজ রশিদ, আবু হোসেন বাবলা, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, মোস্তফা কামাল হায়দার, ফকির আশরাফ, মেজর (অব.) খালেদ ও এসএম ফয়সল চিশতি। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফরউল্লাহ, মতিয়া চৌধুরী, ওবায়দুল কাদের প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মহাজোটের সাথে দীর্ঘদিন থেকে টানাপড়েন চলায় প্রধানমন্ত্রীর সাথে এরশাদের গতকালের বৈঠক ছিলো আলোচনায়। মহাজোটে জাতীয় পার্টিকে ধরে রাখার কৌশল হিসেবে শেষ মুহূর্তে তাকে ডাকা হয় বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে ছিলো আলোচনা। এ নিয়ে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যেও ছিলো ব্যাপক আগ্রহ।