শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয় : খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার: নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি-ই পুনর্ব্যক্ত করলেন বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, আমি পরিষ্কার বলছি, নির্দলীয় সরকারের যে দাবি নিয়ে সংগ্রাম করছি, সেই অবস্থান থেকে সরবো না। এতে যদি কেউ আমার পাশে নাও থাকে তাহলে প্রয়োজনে একাই লড়াই করে যাব। তারপরেও শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না। কারণ তার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার অর্থ নিজেদের ও দেশের ক্ষতি করা। এখন স্লোগান একটিই- হঠাও আওয়ামী লীগ, বাঁচাও দেশ। তাদের হটাতে পারলেই দেশে শান্তি ফিরে আসবে, গণতন্ত্র রক্ষা পাবে।

নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে গতকাল রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত পেশাজীবী জাতীয় কনভেনশন-২০১৩ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অবস্থান জানিয়ে দেন। গত শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেয়ার ৪৮ ঘণ্টার মাথায় খালেদা জিয়া নিজ দাবি পুনর্ব্যক্ত করলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। তবে সেটি আপনার অধীনে কখনও সম্ভব নয়, সেটি আজ পরিষ্কার। আপনার কার্যকলাপেই আপনার আসল চেহারার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। এখনই আপনি সভা-সমাবেশ বন্ধ করে দিচ্ছেন, আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছেন। এজন্য দেশের মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করে না। আপনি প্রতিনিয়ত মিথ্যা বলেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত যখন আপনাকে রং হেডেড বলেছিলো, তখনই বাংলাদেশের মানুষের উপলব্ধি হওয়া উচিত ছিলো যে, রং হেডেড লোকের ফাঁদে পড়লে দেশ রং পথেই যাবে। বিরোধী দলীয় নেতা প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে আরও বলেন, ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থাত্ বিচারপতি কেএম হাসানের অধীনে হওয়ার কথা ছিলো। সেদিন তো আপনি কেএম হাসানকে মানেননি। তাহলে এখন আপনার অধীনে কী ভাবে নির্বাচন হবে? এটা হতে পারে না। এখনও সময় আছে, সংবিধান সংশোধন করুন। বার বার বলছি, দিন যতোই যাচ্ছে ততোই নির্দলীয় সরকারের পক্ষে জনমত বাড়ছে। আর ততোই আপনি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন। সেজন্য বলবো, যতো সময় যাবে ততো আপনিই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই সময় থাকতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) জিজ্ঞাসা করতে চাই, যেভাবেই আপনি প্রধানমন্ত্রী হোন না কেন-বিগত নির্বাচনের সময় আপনি কি জনগণকে বলেছিলেন যে, ক্ষমতায় গেলে তত্ত্বাবধায়ক বাতিল করবেন? বলেননি। তাহলে কেন করলেন? জনগণ আপনাকে সে ম্যান্ডেট দেয়নি। আপনিও জনগণের কাছে যাননি অর্থাৎ গণভোট দেননি। চুপিচুপি সংবিধান সংশোধন করেছেন। আপনি কথায় কথায় আদালতের দোহাই দেন। ওই আদালত তো আপনাদের। আপনাদের কথায় জেল, ফাঁসি হয়। কাজেই কোর্টের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন কেন?

খালেদা জিয়া বলেন, সরকার যদি মনে করে পুলিশ, ৱ্যাব ও বিজিবি দিয়ে একটা নির্বাচন করে ফেলবে, তাহলে সেটি ভুল ধারণা। এ নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনেই এদেশে নির্বাচন হবে এবং গণতান্ত্রিক সরকার আসবে। জনগণ যেহেতু আমাদের সাথে আছে, তাই আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। আমাদের এই গণতান্ত্রিক সংগ্রাম কেউ দমাতে পারবে না। তিনি বলেন, নির্বাচনের খবর নেই অথচ আমাদের প্রধানমন্ত্রী নৌকায় ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। তাকে বলবো, আপনার নৌকা ফুটো হয়ে গেছে। ওই নৌকায় আর কেউ উঠবে না। ফখরুদ্দীন-মইন নৌকায় উঠে আপনাকে গতবার জিতিয়েছিলো। জনগণের ভোটে আপনারা কখনও জিততে পারেননি। জনগণ জানে, আপনারা কোন প্রকৃতির লোক। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনার মুখে সংবিধান ও গণতন্ত্রের কথা মানায় না। কারণ এদেশে যতবার অসাংবিধানিক ও স্বৈরশাসন এসেছে, প্রত্যেকটিতে আপনি সমর্থন দিয়েছেন। এরশাদকেও বলেছিলেন, আই অ্যাম নট আনহ্যাপি। মইনকে স্বাগত জানিয়েছিলেন, বলেছিলেন-আপনাদের আন্দোলনের ফসল।

খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি যদি মনে করেন, আপনার দল এখনও জনপ্রিয় তাহলে সমানে সমানে দাঁড়ান। দেখুন, জনগণ কী রায় দেয়। সেই সাহস আপনার হয় না কেন? আপনি বলেছেন, আপনার অধীনে সব নির্বাচন নাকি সুষ্ঠু হয়েছে। একটি উপ-নির্বাচনে অংশ নিয়ে আমরা বুঝেছি, যে কারণে আপনার সময় আর কোনো উপ-নির্বাচনে আমরা যাইনি। সিটি করপোরেশন আর জাতীয় নির্বাচন তো এক নয়। তারপরেও পাঁচটি সিটি করপোরেশনে হেরে আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আপনি নির্বাচিত লোকের কথা বলেন, সংবিধানের কথা বলেন। সংবিধানে আছে, স্থানীয় সরকার পরিচালিত হবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা। অথচ আপনি সাদেক হোসেন খোকাকে সরিয়ে সেখানে অনির্বাচিত লোকদের বসিয়েছেন। আপনার সরকার এতো ছোট মনের, এতো দুর্বল, হিংস্র ও নোংরা যে আপনাদের দেশপ্রেম পর্যন্ত নেই। আপনারা বিদেশে গিয়ে পাকিস্তানের মালালার প্রশংসা করেন, অথচ আমরা যে নারীদের জন্য এতো কাজ করেছি, সে কথা একবারও বলেন না।

বাংলাদেশ পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের এ অনুষ্ঠানের ওপর প্রথমে পুলিশি নিষেধাজ্ঞার পরেও অনেক নাটকীয়তার পর অনুমতি দেয়ার বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আমি এখানে আসার সময় বাইরে যেভাবে পুলিশ, ৱ্যাব ও তাদের বিভিন্ন রকম গাড়ি দেখলাম, তাতে মনে হচ্ছে যেন একটি যুদ্ধাবস্থা চলছে। হুমকি দিয়ে সভা-সমাবেশ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সভা-সমাবেশ করা যাবে না, শুধু নাকি মিলাদ পড়া যাবে। তাহলে কী আমরা আওয়ামী লীগের জন্য মিলাদ ও দোয়া পড়বো? কারণ তাদের অবস্থা এতোই করুণ যে, তাদের জন্য মিলাদ পড়ার সময় এসেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কর্নেল অলি আহমদ (অব.), ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ফরহাদ মজহার, জামায়াত নেতা নাজির আহমদ, এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, প্রফেসর ড. মাহবুব উল্যাহ, রুহুল আমিন গাজী, শফিক রেহমান, অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, ড. পিয়াস করিম, ডা. জাফর উল্যাহ চৌধুরী, প্রকৌশলী আ ন হ আখতার হোসেন, প্রফেসর সদরুল আমিন, চাষী নজরুল ইসলাম, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, প্রফেসর আ ফ ম ইউসুফ হায়দার ও কামাল উদ্দিন সবুজ প্রমুখ।

উল্লেখ্য, পুলিশের শর্ত অনুযায়ী বিকেল ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চালানোর কথা থাকলেও তা শেষ হয় ৬টা ২০ মিনিটে। খালেদা জিয়া অনুষ্ঠানস্থলে আসেন বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে। তিনি ৫টা ৫৭ মিনিট থেকে ৬টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত বক্তব্য দেন।