শুভ বড়দিন আজ

স্টাফ রিপোর্টার: বছরের চাকা ঘুরে আবার এসেছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উত্সব শুভ বড়দিন। আজ বুধবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শুভ বড়দিন উদযাপিত হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যেই প্রতিটি গীর্জায় বড়দিন পালনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা, মেহেরপুরের মুজিবননগর ও চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদহসহ বিভিন্ন স্থানে শুভ বড়দিনের নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। শুভ বড়দিন উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম বাণী দিয়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবাইকে বড়দিনের আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর প্রতিটি গীর্জার সামনে ও আশেপাশে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকেই পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ প্রশিক্ষিত সোয়াত স্কোয়াডকে গীর্জার আশেপাশে টহলে নামানো হয়েছে। বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা আজ বড়দিনের অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে। রাজধানীর প্রতিটি গীর্জা ছাড়াও কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এদিকে পুলিশ সদর দফতর থেকে গত রোববার প্রতিটি মেট্রোপলিটন এলাকা ও জেলায় বড়দিন উপলক্ষে গীর্জাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী দুটি গ্রাম কার্পাসডাঙ্গার মিশনপাড়া আর উত্তরপাড়ার বাসিন্দাদের প্রায় সকলেই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। এখানকার দুটি গীর্জায় বড়দিন উদযাপনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সম্পন্ন। কেউ ব্যস্ত ধোয়া মোছায়, কেউবা আবার গীর্জার দেয়ালে রঙের প্রলেপ দিতে। এরই মধ্যে প্রার্থনা ঘরে রঙিন কাগজ আর নানান রকম উপকরণ দিয়ে সাজানোর কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে প্রতিকী গোয়াল ঘর (গোশালা)। কিন্তু যে দিনটিকে ঘিরে এতো আয়োজন সেই বড়দিনের আনন্দ এবার অনেকটাই মলিন এ এলাকার মানুষের কাছে। টানা অবরোধে প্রিয়জনদের অনেকেই কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরতে পারেনি।

আর অভাব? এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের নিত্যসঙ্গী। কার্পাসডাঙ্গার মিশনপাড়া আর উত্তরপাড়ার মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। অবরোধের কারণে কৃষক উৎপাদিত পণ্য জেলার বাইরে বিক্রি করতে পারছেন না ফলে হাতে টাকাও আসেনি। দ্রব্যমূল্যের বাজারে বড়দিনের আনন্দ তাই এদের কাছে ফিকে হয়ে গেছে। গ্রামবাসীরা এর জন্য দুষলেন চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে। তারা আরও অভিযোগ করলেন, সরকারি অনুদান এবার যে পরিমাণ দেয়া হয়েছে অন্যবারের তূলনায় অর্ধেক।

কার্পাসডাঙ্গা সেক্রেড হার্ট ক্যাথলিক চার্চের প্রধান পুরোহিত ফাদার শেরাফিন সরকার যেকোনো ধর্মের বড় পার্বনের দিনটাকে অন্ততঃ রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে রাখার জন্য আবেদন জানালেন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। মিশনপল্লীর বাসিন্দারা এবার তাদের নিরাপত্তা নিয়েও রীতিমত উদ্বিগ্ন। প্রতি বছর বড়দিনে প্রধান প্রার্থনা শুরু হয় রাত ১২টা থেকে আর এবার এখানে তা করা হয়েছে রাত ৯টায়, এসব কিছুই নাকি নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে। বড়দিনের আগে প্রশাসনের তৎপরতা অন্যবারের মতো এবার নেই বলে অভিযোগ করলেন গ্রামবাসীরা।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মো. রশিদুল হাসান অবশ্য জানান, বড়দিনে যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক টিম কাজ করছে। এর পাশাপাশি তিনি ওই এলাকার জনগণের সহযোগিতা চাইলেন। তবে সব দুঃখ কষ্ট বুকে চেপে বড়দিন উদযাপনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত কার্পাসডাঙ্গার মিশনপাড়া, উত্তরপাড়ার বাসিন্দারা। গোটা গ্রামে যার যতোটুকু সামর্থ আছে সেভাবেই সাজাচ্ছেন ঘর। আয়োজন করছেন অতিথি আপ্যায়নের। আর অপেক্ষা করছেন একটি দিনের জন্য।

বড়দিন উপলক্ষে সেজেছে গোটা বিশ্ব। সাজানো হচ্ছে ক্রিসমাস ট্রি। তৈরি হচ্ছে কেক। এখন শুধু সান্টাক্লজের থেকে উপহার পাওয়ার অপেক্ষা। রাশিয়ার মস্কোয় বড় দিনের ঠিক আগেই সান্টাক্লজ দের বিরাট মিছিল। তবে সান্টাক্লজেরা কেউই উপহার দিচ্ছে না। সকলের কাছ থেকে উপহার নিয়ে ভর্তি করছে নিজেদের ঝোলায়। নিউ ইয়ার্স ইভে এ সমস্ত উপহার পৌছে যাবে ক্যান্সার হাসপাতালে ভর্তি থাকা শিশুদের কাছে। রঙিন তারার মতো দেখতে পিনাতা ছাড়া মেক্সিকোতে বড়দিনের উৎসবের কথা ভাবাই যায় না। মেক্সিকোসিটির কাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন অসংখ্য পিনাতার কারিগর। সময়রের সাথে পিনাতার আকারেও পরিবর্তন এসেছে। তবে প্রথা অনুসারে পিনাতার সাতটি কোনা তৈরি হয়েছে মানুষের সাতটি রিপুকে মাথায় রেখে। ক্রিসমাস ইভে পরিবারের সকলে একসাথে হয়ে পিনাতা ফাটানো মেক্সিকানদের রীতি। স্থানীয়দের বিশ্বাস এভাবেই অশুভকে জয় করে জন্ম হয় শুভ চেতনার।

কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কার্পাসডাঙ্গা ও বাঘাডাঙ্গা মিশনপাড়ায় বসবাসরত খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের মাঝে উৎসবে আমেজ বিরাজ করছে। বড়দিন উপলক্ষে ইতোমধ্যেই গীর্জাগুলোতে সাজানোর কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। যেভাবেই হোক প্রতিটি ঘরে ঘরে উৎসবমুখর হয়ে উঠবে। এদিকে দামুড়হুদা পুলিশ প্রশাসন নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।

খ্রিস্টান ধর্মলম্বীরা জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরের ও তারা বড়দিন উপলক্ষে ধনী-গরিব একসাথে উৎসব পালন করবেন। সে মোতাবেক এক সপ্তা আগে থেকেই প্রতিটি মানুষ যথাযথ মর্যাদায় বড়দিন পালন করার লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। হাট-বাজারে কেনাকাটা সম্পূর্ণ করেন। দুটি গ্রামের ছেলে-মেয়েরা আনন্দমুখর হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে দূরদূরান্ত থেকে পরিবারের সদস্যসহ আত্মীয়স্বজন এসে পৌঁছেছে। কার্পাসডাঙ্গা মিশনপাড়ার চার্চ অব বাংলাদেশ, ক্যাথলিক চার্চ, বাঘাডাঙ্গায় এজিচার্চ, ক্যাথলিক চার্চ ও প্রেস বিটারিয়ানে প্রার্থনা করা হবে। বাঘাডাঙ্গা এজিচার্চের পালক ডমিনিক মণ্ডল জানান, বড়দিন রাত ১২টা ও সকাল ৮টার দিকে দেশ ও জাতির মঙ্গল কল্যাণে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। এদিকে কার্পাসডাঙ্গা পুলিশ ক্যাম্পের আইসিএসআই ওয়ালিয়ার রহমান জানান, বড়দিন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সব সময় প্রস্তুত। কোনো ধরনের বিচ্ছৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে কঠোর হাতে দমন করা হবে।

দামুড়হুদা কার্পাসডাঙ্গার মিশনপাড়ায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন উপলক্ষে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে মিশনপাড়ায় যুব সম্প্রদায়ের উদ্যোগে এভারেস্ট কোচিং সেন্টারে এ বস্ত্র বিতরণ করা হয়। বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন আশিষ মণ্ডল, পরাগ সরকার, দিগন্ত মণ্ডল, সোহাগ সরকার, জনি মণ্ডল, রনি, অধির মণ্ডল, ইতি সরকার, নীলকুমার সরকার প্রমুখ।

মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আজ বড় দিন। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সব চেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। দিনটিকে ঘিরে খ্রিস্টান পল্লিতে চলছে উৎসবের আমেজ। চারদিকে সাজ সাজ রব। বসতবাড়ি থেকে শুরু করে ধর্মীয় উপাসনালয় গির্জাগুলো সাজানো হয়েছে রঙ বেরঙে আলোক। অতিথি আপ্যায়নের জন্য পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন গৃহিনীরা। এ উপজেলার বল্লভপুর, ভবরপাড়া, রতনপুরসহ কয়েকটি গ্রামের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বড় দিনের। বড়দিনের উৎসব ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুজিবনগর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান। আজ বড় দিনে দেশ জাতির মঙ্গল কামনা করা হবে বলে জানালেন. ভবেরপাড়া ক্যাথোলিক চার্চের ফাদার ডমোনিক হালদার ও বল্লভপুর চার্চ অব বাংলাদেশের পুরোহিত রেভা. বিলিয়ম সরদার।