শিশু জুইকে হত্যার কথা স্বীকার : ডাইনিরূপী সৎ মা মৌসুমীকে জেলহাজতে প্রেরণ

আলমডাঙ্গার রোয়াকুলি বদরগঞ্জে ক্ষোভ–শোকে শিশুর দাফন কাজ সম্পন্ন : দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি

 

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: আতোটুকু শিশু, আধো আধো অষ্পষ্ট ভাসায় মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতো। ওকে হত্যা করলে কেন? সৎ মা মৌসুমী এসব প্রশ্নের কিছুই পুলিশের কাছে লুকোয়নি। পুলিশ বলেছে, গ্রেফতারের পর থানায় নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেরই শিশু জুইকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে মৌসুমী। গতকাল তাকে আদালতে নেয়া হলে সে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।

জুইয়ের গর্ভধারিনী মা রুমা খাতুনের সাথে পিতার দাম্পত্য বিচ্ছেদের পর পিতার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার রোয়াকুলি বদরগঞ্জে। ১৭ মাস বয়সী জুইয়ের কথা গোপন না করেই পিতা জসিম দ্বিতীয় বিয়ে করে আনে মৌসুমীকে। জসিমের স্বপ্ন ছিলো মেয়ে জুইকে সৎ মা হলেও মৌসুমী আদর সোহাগে আপন মায়ের মতোই বড় করে তুলবে। বিধি বাম। মৌসুমী শিশুকন্যা জুইকে পথের কাঁটা ভেবে হত্যার সুযোগ খুঁজতে থাকে। গতপরশু শুক্রবার বাড়িতে জুইকে একা পেয়ে ঘরের মধ্যে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর পরই মৌসুমী অস্থির হয়ে পড়ে। আচরণ সন্দেহজনক হলে প্রতিবেশীদের কয়েকজন ঘরে ঢুকেই দেশে শিশু জুয়ের মৃতদেহ। সাথে সাথে মৌসুমীকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখে স্থানীয় জনতা। খবর পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ মৌসুমীকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করে শিশুকন্যা জুইয়ের মৃতদেহ। গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে শিশু জুয়ের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়। বিকেলে পিতার গ্রাম জেহালার বদরগঞ্জের কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়।

অপরদিকে মৌসুমীকে গতকাল আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের পর জেলহাজতে রাখার আদেশ দেন বিজ্ঞ আদালত। পুলিশ এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, নিহত শিশু জুইয়ের দাদি বাদী হয়ে হত্যামামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় ডাইনিরূপী মৌসুমীকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

ডাইনিরূপী সৎ মা মৌসুমীর পরিচয় দিতে গিয়ে এলাকাবাসী বলেছে, মৌসুমীর আগেও ২ বার বিয়ে হয়েছিলো। হিংসাত্মক মনোভাব ও এক গুয়েমির কারণে তাকে প্রথম ও দ্বিতীয় স্বামী তালাক দেয়। তার পিতা-মাতার পরিচয় ঠিক মতো কেউ না জানলেও সে আলমডাঙ্গা বাবুপাড়ার নানি সুফিয়ার কাছেই থাকতো। গত ৫ সেপ্টেম্বর পারবারিকভাবেই রোয়াকুলি বদরগঞ্জ গ্রামের জসিমের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় জসিমের প্রথম স্ত্রীর একমাত্র সন্তান জুইকে নিজের সন্তানের মতো করে দেখতে হবে বলেও সর্ত দেয়া হয়। এ সর্ত মেনেই মৌসুমী বিয়ে করে। জসিমের বাড়ি এসেই শিশু জুইয়ের ওপর চোখরাঙানি শুরু করে। বিষয়টি বুঝেও জুইয়ের পিতা ও দাদি তেমন আমলে না নিয়ে ভাবতেন, আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। ঠিক হওয়া দূরের কথা শিশু জুইকে একা পেয়ে হত্যা করে জিনে মেরেছে বলে প্রচার করতে শুরু করে।

স্থানীয়রা বলেছে, কুষ্টিয়া কুমারখালীর মেয়ে রুমা খাতুনের সাথে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার জেহালা ইউনিয়নের রোয়াকুলি বদরগঞ্জের জসিমের বিয়ে হয় আনুমানিক তিন বছর আগে। দেড় বছরের মাথায় রুমার কোলজুড়ে আসে কন্যাসন্তান। নাম রাখা জুই। তিন মাস আগে রুমার সাথে জসিমের বিচ্ছেদ ঘটে। বিচ্ছেদের দু মাসের মাথায় আলমডাঙ্গা বাবুপাড়ার মোহাম্মদ আলীর মেয়ে মৌসুমীকে। স্বামীর ঘরে এসেই মাস ঘুরতে না ঘুরতে শিশু হত্যার দায়ে তাকে যেতে হলো গারদে। মৌসুমীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে মামলার বাদীসহ গোটা এলাকার আবাল বৃদ্ধাবণিতা। তারা বলেছে, যে শিশুকন্যা সবে কথা বলতে শিখেছিলো। অষ্পষ্ট ভাষায় মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতো। যে

মৌসুমীকে মা বলে ডেকে আদর পেতে চাইতো, সেই মৌসুমী ডাইনি রূপে থামিয়ে দিলো জীবনঘড়ি।