শিশুকালে পাচার : যুবতী হয়ে আপন ঠিকানায় হিরা

দর্শনা জয়নগর সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক

 

দর্শনা অফিস: সাফিয়া বেগম ধরেই নিয়েছিলেন হারানো হিরাকে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। ৯ বছর বয়সে হারানো হিরার ভাগ্যে কী ঘটেছে তাও জানতেন না তিনি। সেই হারানো শিশুসন্তানকে সাফিয়া বেগম ফিরে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ঝরালেন আনন্দ অশ্রু। কাছে পাওয়ার আগে দর্শনা জয়নগর সীমান্তে অপলক তাকিয়ে ছিলেন তিনি। মেয়ে আসছে, কতোদিন দেখা হয়নি ওকে। দেখলে ঠিক মতো চিনবে তো? এরকম ভাবনাও ছিলো সাফিয়া বেগমের মধ্যে। মেয়ে হিরা ফিরলো। দর্শনা জয়নগর সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ’র পতাকা বৈঠক হলো। তারপর মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন। মেয়েও তখন মায়ের আঁচলে নিজেকে সপে দিয়ে দীর্ঘ ৭ বছর না পাওয়া আদর যেন আদায় করে নিলো।

কী হয়েছিলো হিরার? শিশুকালে ভারতে পাচার হয়েছিলো সে। গতকাল বৃহস্পতিবার দর্শনার জয়নগর সীমান্তে বিএসএফ-বিজিবির পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে দেশের ফিরলো হিরা। মাসহ নিকটজনদের সাথে আপন ঠিকানায় নারায়গঞ্জের নিতায়গঞ্জে। পাচার হওয়া শিশু হিরার ইথারে ভাসা আকুতি শুনেই কি তবে কাঙালি সুফিয়ার কণ্ঠে ভেসে উঠেছিলো- কোন বা পথে নিতাইগঞ্জে যাই…..? হয় তো না। নিতাইগঞ্জের শিশু হিরা যুবতী হয়ে যখন ফিরলো দেশে তখন কতোরকম প্রশ্নই তো আকুলি বিকুলি করেছে তার স্বজনদের মস্তিষ্কে।

জানা গেছে, ঢাকার নারায়ণগঞ্জ এলাকার নিতাইগঞ্জ ঋষিপাড়ার বস্তির রমজান আলীর মেয়ে হিরা আক্তার বছর বছর আটেক আগে ৯ বছর বয়সে পেটের তাগিদে ঢাকার বসুন্ধরা সিটির একটি বাড়িতে কাজ করতো। সেখান থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তি হিরাকে ফুঁসলিয়ে ভারতে পাচার করে দেয়। ভারতে দালালচক্রের কাছে বিক্রি করা হলে চাপড়া এলাকার স্থানীয়রা হিরার কান্না-কাটিতে ছুটে আসে। এ সময় দালালচক্রের সদস্যরা পালিয়ে যায়। হিরাকে চাপড়া থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ তাকে কৃষ্ণনগর সেফহোমে রাখে। ৭ বছর পর হিরাকে দেশে ফেরত দেয়া হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে দর্শনা জয়নগর সীমান্তের ৭৬ মেন পিলারের নিকট বিজিবি-বিএসএফ’র কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বৈঠকে হিরাকে বিজিবির হাতে সোপর্দ করেছে বিএসএফ। এ সময় হিরা তার মা সাফিয়া বেগমসহ স্বজনদের কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। গতকালই আইনি জটিলতা শেষে হিরা তার স্বজনদের সাথে ফিরেছে আপন ঠিকানায়।