শিবিরের আধাবেলা হরতালে চুয়াডাঙ্গাসহ চার জেলাই ছিলো অনেকটাই শান্ত

দর্শনায় ছাত্রশিবিরকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার আসামি মাসুদ রানা গ্রেফতার

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ায় ছাত্রশিবিরের আধাবেলা হরতার অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে। কোথাও থেকে তেমন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। হরতালকারীদের তেমন কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে জানা গেলেও, দর্শনায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামি মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে দামুড়হুদার কুড়ুলগাছি থেকে গ্রেফতার করা হয়।

দর্শনায় মিছিলকারীদের ওপর ওপর গুলি করে ছাত্রশিবিরকর্মী রফিকুল ইসলামকে খুনের প্রতিবাদ ও পুলিশের খুনি সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ায় অর্ধদিবস আহ্বান করা হয়। পরশু ভিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করে তারা। গতকাল হরতাল চলাকালে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে জোরালো তেমন পিকেটিং লক্ষ্য করা যায়নি। তবে পুলিশ ও বিজিবির জোরদার টহল ছিলো চোখে পড়ার মতো। দর্শনা, জীবননগর, আলমডাঙ্গা ও চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জে ঝটিকা মিছিল করে হরতালকারীরা। ডিঙ্গেদহ, সাধুহাটিতে সকালে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। তবে পুলিশ পৌঁছুনোর আগেই পিকেটারদের প্রায় সকলেই সড়ক থেকে সরে যায়। তিনটি টেম্পু আংশিক ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। তবে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। হরতাল চলাকালে চুয়াডাঙ্গার আইনশৃঙ্খলা ছিলো স্বাভাবিক। সকালে দূরপাল্লার কোচ না ছাড়লেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে যোগাযোগব্যবস্থাও অনেকটা স্বাভাবিক হতে থাকে। দোকানিরাও সকালে দোকানের এক পাল্লা খুললেও সকাল ১১টা বাজতে না বাজতেই তারা দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করেন। তবে হুট করে ঝটিকা হানা হতে পারে আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা ছিলেন সতর্ক। ব্যাংক বীমাগুলোতে স্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। ঈদ ও পূজার টানা ছুটির পূর্বদিনে ব্যাংকগুলোতে ছিলো উপচেপড়া ভিড়।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, দর্শনায় পুলিশের গুলিতে শিবিরকর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ও কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল রোববার জামায়াত-শিবিরের ডাকে ঢিলেঢালাভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে ভোরে জামায়াত-শিবির শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে ও চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর সড়কে টায়ারে আগুন লাগিয়ে প্রতিবাদ করে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে ছিলো পুলিশের সতর্ক প্রহরা। তবে ভোর ছাড়া ছিলো না হরতালের সমর্থনে আর কোনো মিছিল মিটিং কিংবা পিকেটিং। সরকারি অফিস-আদালত ও ব্যাংক-বীমার কার্যক্রম ছিলো স্বাভাবিক। দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের খোলা ছিলো। যানবাহন চলেছে ঢিলেঢালাভাবে।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় পুলিশের গুলিশে ছাত্রশিবিরকর্মী নিহতের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় শিবিরের ডাকে মেহেরপুরে আধাবেলা (সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা) হরতাল পালিত হয়েছে। গতকাল রোববার হরতালের শুরুতেই মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা ও মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের রাজনগর এবং দিনদত্ত ব্রিজমোড়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিবির নেতাকর্মীরা। এ সময় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে কিছুক্ষণ অবরোধ করে হরতালের সমর্থনে স্লোগান দেয় নেতাকর্মীরা। সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত দূরপাল্লার ও আন্তঃজেলার বাস চলাচল বন্ধ ছিলো। তবে রিকশা-ভ্যান ইজিবাইক শহরে চলাচল করতে দেখা গেছে। শহরের অধিকাংশ দোকানপাট খোলা ছিলো। ব্যাংক-বীমায় লেনদেন স্বাভাবিক ছিলো। নাশকতা ঠেকাতে জেলা শহরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গায় হরতালের সকালে স্টেশন এলাকায় জোরালো পিকেটিং ছিলো। ঝটিকা মিছিলও করেছে হরতালকারীরা।

দর্শনা অফিস জানিয়েছে, দর্শনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পিকেটাররা সকাল আটটার দিকে তিনটি সিএনজি অটো ভাঙচুর করে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, গত ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় বিক্ষোভ মিছিলের সময় পুলিশের গুলিতে ছাত্রশিবিরকর্মী রফিকুল ইসলাম নিহত হয়। নিহত রফিকুল ইসলাম চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের সরোজগঞ্জ বোয়ালিয়ার করিমনচালক দেলোয়ার শেখের ছেলে। সে ছিলো চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র। রফিকুলের খুনের প্রতিবাদে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলায় আধাবেলা হরতালের ডাক দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবির।