শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার: যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে। সম্প্রতি পাকিস্তান, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলা, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা এবং বাংলাদেশে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে নিরাপত্তা নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এমন শঙ্কায় থেকেই গত ১৯শে জানুয়ারি শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এই নির্দেশনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সকল বিভাগীয় কমিশনার, শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, সব বোর্ড চেয়ারম্যান, প্রত্যেক জেলা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা অফিসার এবং সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানকে এই পরিপত্র বিরতণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রত্যেক জেলা শিক্ষা অফিস ও জেলা প্রশাসক এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের এই নির্দেশনা বাধ্যতামূলক মানতে হবে বলে পরিপত্রে বলা হয়।
এ বিষয়ে শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, পরিবেশ পরিস্থিতিতে সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্রত্যেক জেলা প্রশাসক, নির্বাহী কর্মকর্তা এ নিরাপত্তার বিষয়টি তদারকি করবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৪টি নির্দেশনা দিয়ে এই পরিপত্রে বলা হয়, ঢাকা মহানগরীসহ অন্যান্য মহানগরী, জেলা সদরে স্থাপিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা মানসম্মত নয়। নানা কারণে সৃষ্ট নাজুক পরিস্থিতিতে স্পর্শকাতর এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং ছাত্র শিক্ষক এবং অভিভাবক মহলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা হয়। মতবিনিময় সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত পাঠদান বিঘ্নিত হয়, শিক্ষা-শৃঙ্খলা লঙ্ঘিত হয় এবং সম্পদ ও জীবন ঝুঁকির মধ্যে পতিত হয়। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলসহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গেটে ইউনিফরমধারী নিরাপত্তা প্রহরী মোতায়েনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, প্রতিষ্ঠানের ক্লাস চলাকালীন শিক্ষক-কর্মচারী ছাড়া অন্যদের প্রতিষ্ঠানে অবস্থান নিয়ন্ত্রণ করবে প্রহরী। শিক্ষকদের সমন্বয়ে সার্বিক নিরাপত্তা-সংক্রান্ত ভিজিলেন্স টিম গঠনের জন্যও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে এতে বলা হয়, ঢাকা মহানগরসহ অন্যান্য মহানগরী এবং জেলা সদরে স্থাপিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা মানসম্মত নয়। এছাড়াও ডাইনামিক ওয়েব সাইটে শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত যোগাযোগ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা, নিকটস্থ থানা, ফাঁড়ি, ফায়ার ব্রিগেড ও শিক্ষা দফতরের ফোন নম্বরগুলো প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে বড় হরফে প্রদর্শন করতে হবে, শিক্ষকদের সমন্বয়ে সার্বিক নিরাপত্তা ভিজিলেন্স টিম গঠন ও টিম প্রতি মাসে এক বা একাধিক বৈঠক করে নিরাপত্তার সার্বিক দিক রিপোর্ট আকারে পেশ করবে, নিরাপত্তা ঝুঁকি ও করণীয় বিষয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক লিফলেট বিতরণ করে সচেতনা তৈরি করবে এবং নিরাপত্তা বিঘ্নকারী বা ঝুঁকির কারণ ঘটলে নিকটস্থ থানা বা পুলিশ ফাঁড়ি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, শিক্ষাসচিব স্বাক্ষরিত এক পরিপত্র সাম্প্রতিক নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেয়া হয়েছে। পাকিস্তান, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটছে। দেশে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পূর্ব সতর্কতা হিসেবে সরকারি এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এদিকে সরকারি এ নির্দেশনা পাওয়ার পর অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, দেশের নামি প্রতিষ্ঠানসহ অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নাজুক। অনেক ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থাই নেই। এমন অবস্থায় যে কেউ সহজে উদ্দেশ্যমূলক যে কোনো ঘটনা ঘটাতে পারে। এ ছাড়া নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে তা প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলার ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে।