শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়তে একসাথে কাজ করার আহ্বান

মাথাভাঙ্গা মনিটর: শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়তে একসাথে কাজ করার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল ইন্দোনেশিয়ার বালাই সিদাং জাকার্তা কনভেনশন সেন্টারে দ্বিতীয় এশিয়ান-আফ্রিকান শীর্ষ সম্মেলনের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের ভাষণে এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমরা সম্মিলিতভাবে এমন এক স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তুলতে পারবো-যা হবে নির্যাতন, অসহিষ্ণুতা, সহিংসতা ও চরমপন্থামুক্ত। অস্থিতিশীল বিশ্ব নিরাপত্তা পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক উন্নয়নে অব্যাহত ব্যাপক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম বা জাত নেই। যেকোনো হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে যেকোনো ব্যক্তি ও সংগঠনকে আমাদের ভূমি ব্যবহার করতে না দেয়ার নীতিতে সকলকে অটল থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির মোকাবেলায় দৃঢ়তার সাথে কাজ করছে। তারা আমাদের দেশের উদার প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধ্বংসে এখনও সক্রিয় রয়েছে। সরকার আদর্শিকভাবে সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থাকে পরাজিত করতে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ধারা শক্তিশালী এবং নারীর ক্ষমতায়ন জোরদার করেছে। তিনি বলেন, শান্তি ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতির ইতি টানতে সরকার ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গণহত্যা সংঘটনকারীদের বিচারের আওতায় আনতে অঙ্গীকারাবদ্ধ রয়েছে।

তিনি বলেন, বিশ্বের অর্ধেক জিডিপির ধারক হচ্ছে দক্ষিণ। এখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অর্ধেক ও বিশ্ব বাণিজ্যের অর্ধেকেরও বেশি সাধিত হয়। এ জন্য টেকসই উন্নয়ন ও দক্ষিণের দেশগুলোর স্বনির্ভরতা অর্জনে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনা বলেন, ব্যাপক উন্নয়ন সত্ত্বেও বিশ্বের ২ দশমিক ২ বিলিয়ন মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে। ৮শ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘমেয়াদি ক্ষুধায় ভুগছে এবং ২শ মিলিয়ন মানুষ জলবায়ুর প্রভাবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এ প্রেক্ষাপটে গণমুখি, দারিদ্র্যবিমোচন ও বৈশ্বিক উন্নয়নবান্ধব কৌশল নিশ্চিত করতে বিদ্যমান উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষিণের অর্থনীতিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ আগামী মাসে ঢাকায় ২০১৫ উন্নয়ন এজেন্ডা পরবর্তী পটভূমিতে উচ্চ পর্যায়ের এক দক্ষিণ-দক্ষিণ ও ত্রিমাত্রিক সহযোগিতার আয়োজন করছে। আমরা আশা করছি, এতে আপনাদের সমর্থন, সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে উল্লিখিত সব বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হবে।

অভিবাসনের বিষয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীতে এখন মানুষের চলাচল ও অভিবাসন নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে। এসব কিছুকে উন্নয়ন প্রক্রিয়ার প্রধান চালিকা ও নিয়ন্ত্রক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, অনেক দেশের অভিবাসী শক্তি অর্থনীতি ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখছে। এ খাতে আমাদের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ব্যাপক উন্নয়ন সুফল বয়ে আনতে পারে।
এ অঞ্চলে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় দুই মহাদেশের সকল দেশের দৃঢ় অঙ্গীকারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি সরকারের জলবায়ু প্রভাব প্রশমনে চাপ সহনশীল  ফসলের জাত উদ্ভাবন ও নিজস্ব সম্পদে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের কথা উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবশ্য জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কোন একক দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। আমি এ অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনে দৃঢ় অঙ্গীকারের আশায় তাকিয়ে আছি। তিনি বলেন, জনশক্তি দেশের অর্থনীতি ও সমাজের বড় শক্তি। তিনি বলেন, তরুণ জনগোষ্ঠীর দক্ষতা ও সামর্থ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা আরও বিনিয়োগ করছি।