শহর যানজটমুক্ত করাসহ জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার তাগিদ

ঈদল ফিতর আসন্ন : চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি সভা

 

স্টাফ রিপোর্টার: পবিত্র ঈদুল ফিতর আসন্ন। উৎসবমুখর পরিবেশে নিরাপদে ঈদ উদযাপনের লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন গতকাল বৃহস্পতিবার প্রস্তুতি সভার আয়োজন করে। জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন সম্পর্কিত প্রস্তুতিমূলক সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস।

ঈদ উদযাপন প্রস্তুতিসভায় চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ হাসান চত্বরে যানজট, হরিজন সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়িতে মদ বিক্রি ও মদের আসর জমানো, দূরপাল্লার কোচের ভাড়া বৃদ্ধি, সড়ক দুর্ঘটনা রোধসহ জননিরাপত্তার বিষগুলো অধিক গুরুত্ব পায়। পবিত্র রমজানে সেহরি ও ইফতারির সময় লোডেশেডিঙের বিষয়টিও আলোচকদের মাধ্যমে উঠে আসে। এছাড়া ঈদের পূর্বরাতে ও পরের রাতে আতশবাজি বন্ধেও বিশেষ দৃষ্টিপাত করা হয়। এছাড়া সড়কের ধারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কয়েক দিনের মাথায় আবারও পুনঃস্থাপনের বিষয়টি কয়েকজন বক্তা তুলে ধরে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সড়কে রাতে অসংখ্য গরু বেওয়ারিশের মতো ঘোরাফেরা করে। এসব গরুর মালিকরা দ্রুত নিজেদের গোয়ালে না নিলে ধরে পৌর কর্তৃপক্ষের নিকট দেয়ারও তাগিদ দেয়া হয়।

ঈদ উদযাপন প্রস্তুতিসভায় চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আঞ্জুমান আরা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুর রাজ্জাক, সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মফিজুর রহমান, সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক শহিদুল হাসান, কৃষি সম্প্রসারণের অতিরিক্ত উপপরিচালক প্রবীর কুমার বিশ্বাস, তথ্য অফিসার আবু বক্কর সিদ্দিক, সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক আতিয়ার রহমান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক এবিএম রবিউল ইসলাম, সরকারি হাঁস-মুরগি খামারের ব্যবস্থাপক এবিএম সালাউদ্দীন, চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক শাহারিয়ার হক মালিক, পাট অধিদফতরের পরিদর্শক সৈয়দ আলাউদ্দীন, বাংলাদেশ দোকানমালিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার ইবু, হোটেল-রেস্তোরাঁ বেকারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌহিবুর রহমান জোয়ার্দ্দার প্রমুখ।

আসন্ন ঈদুল ফিতর নিরাপদ ও উৎসবমুখর করতে উপস্থিত কর্মকর্তা ও নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন দিক তুলে বক্তব্য রাখেন। বক্তাদের উপস্থাপিত বিষয়গুলো আলোকপাত করতে গিয়ে সভার সভাপতি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন। ঈদের একদিন আগে থেকেই উঠতি বয়সীদের মোটরসাইকেল নিয়ে বেপরোয়া চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পায়। এদিকে ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। শহীদ হাসান চত্বরে ব্যাটারিচালিত অসংখ্য অটোসহ শহরের শহীদ আবুল কাশেম সড়কের বালিকা বিদ্যালয় ও নিউ মার্কেটের অদূরে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় যানযট সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে জেলা পুলিশের বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার তাগিদ দেয়া হয়। এছাড়া এখন থেকেই রাত-দিন সড়কে অতিরিক্ত পুলিশি টহলেরও গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়, এই সময়ে অপরাধীরা নানাভাবে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করার সুযোগ খোঁজে পুলিশ বাড়তি টহল ও নজরদারি করলে জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। ঈদের পূর্বরাতে আতশবাজি কেউ যাতে ফোটাতে না পারে সেদিকে আগে থেকেই দৃষ্টি রেখে সরবরাহকারী বা দোকানিদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়ারও তাগিদ দেয়া হয়। সভা থেকে বলা হয়, প্রতি বছর ঈদের সময় দূরপাল্লার পরিবহনগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। অতিরিক্ত ভাড়া না নেয়ার জন্য মালিক সমিতিকে অনুরোধ জানানো হয়। এছাড়া জেলা শহরের চিহ্নিত কয়েকটি স্থানে হরিজন সম্প্রদায়ের সদস্যরা মদ বিক্রি করে। ওদের মদ পানের অনুমোদন থাকলেও বিক্রির সুযোগ নেই। ফলে পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দেন সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি ঈদুল ফিতরকে উৎসবমুখর করতে পৌর এলাকায় পৌরসভাসহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ভবনে আলোকসজ্জার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সড়কগুলোতে ফেস্টুন দিয়ে সজ্জিত করা ছাড়াও সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নিয়ে জানানো হয়, নিয়ম মেনেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে হবে। ঈদের সময়সূচি জেলা তথ্য অফিসের তরফে ব্যাপক প্রচারেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া প্রতিবার ঈদের দিনের মতো এবারও ঈদের দিন হাসপাতাল, শিশুসদন, ও কারাগারে উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এবারও কারা অভ্যন্তরে বন্দীদের জামাতের সাথে ঈদের নামাজের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।