শপথ নিলেন এরশাদ

স্টাফ রিপোর্টার: সব জল্পনা-কল্পনা ও নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত দশম জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে শপথ নিতে হলো জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদকে। গতকাল শনিবার বেলা ১২টার কয়েক মিনিট আগে অনেকটা গোপনে সংসদ ভবনে এসে স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর কাছে শপথ নেন তিনি। ঢাকা সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে সরাসরি এসে শপথ নিয়ে তিনি আবার সেখানেই ফিরে গেছেন। সাথে কোনো দলীয় নেতাকর্মীও ছিলেন না। জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার গতকাল শুক্রবার জানিয়েছিলেন, শপথের পর এরশাদ মিডিয়ার কাছে সবকিছু খুলে বলবেন। কিন্তু শপথ নিয়ে এরশাদ গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেননি।

নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে গত ১২ ডিসেম্বর থেকে সিএমএইচে চিকিত্সা নিচ্ছেন এরশাদ। সেখানে থেকে নিয়মিত গলফও খেলছেন তিনি। বারিধারার বাসা থেকে প্রতি বেলার খাবারও যাচ্ছে। নিজের একাধিক মোবাইলফোনও সাথে রেখেছেন। প্রয়োজনে নানাজনকে ফোন করে কথাও বলছেন। এছাড়া ব্যক্তিগত স্টাফ ছাড়াও দলের দু’একজন নেতার সাথে নিয়মিত সাক্ষাতও হচ্ছে এরশাদের।

এদিকে দশম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে রওশন এরশাদের নাম উল্লেখ করে গতকাল গেজেট প্রকাশ করেছে সংসদ সচিবালয়। এর ফলে আপাতত বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ারও সুযোগ হারালেন এরশাদ। রওশনকে বিরোধীদলীয় নেতা এবং জাপার সংসদীয় দলের নেতা মেনেই তাকে শপথ নিতে হলো।

নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েও যে কারণেই হোক-শেষ পর্যন্ত এমপি হিসেবে এরশাদ শপথ নেয়ায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাপার প্রার্থিতা প্রত্যাহারকারী নেতাকর্মীরা। এরশাদের নির্দেশে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারকারী জাপার ১৮৩ জন নেতাকর্মীর কয়েকজন গতকাল বলেন, এরশাদ যদি এই নির্বাচন মেনে শপথ-ই নেবেন, তাহলে আমাদের কেন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করালেন? এখন এর জবাব তাকেই দিতে হবে।

এরশাদের শপথ গ্রহণ এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারকারীদের ক্ষোভের বিষয়ে তার ভাই ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের গতকাল বলেন, সিএমএইচে সর্বশেষ সাক্ষাতে এরশাদ সাহেব আমাকে বলেছেন, যা হয়েছে-এখন তো কিছু করার নেই। দলের অনেকে এমপি হয়ে গেছেন। ঠিক আছে, আমরা এগুলোকে ওয়েলকাম করছি। কিন্তু যারা আমার নির্দেশ মেনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করলো তাদের জন্য কিছু করতে হবে। এখন সরকার যদি তাদের মধ্য থেকে বেছে বেছে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক নিয়োগসহ বিভিন্নভাবে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে মূল্যায়ন করতে পারে, তাহলে তো ভালো। আমি এমন অবস্থায় আছি যে চুপ থাকছি।

জিএম কাদের বলেন, এরশাদ সাহেব বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানিয়েছেন। কিন্তু সেখান থেকে তাকে এখন পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। আসলে পুরো বিষয়টি জগাখিচুড়ি হয়ে গেছে। সবাই মিলে নির্বাচনে বা সংসদে থাকতে পারলে ভালো হতো। এখন কেউ সংসদে, কেউ বাইরে পড়ে যাচ্ছে। এখন সরকার যদি তাদেরকে মূল্যায়ন করতে পারে তাহলে ভালো।

প্রসঙ্গত, দশম সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩, লালমনিরহাট-৩ এবং ঢাকা-১৭ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন এরশাদ। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখের পরদিন, অর্থাৎ গত ৩ ডিসেম্বর আকস্মিকভাবে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি। এরপর তিনটি আসনেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেন এরশাদ। ঢাকা-১৭ আসনে তার আবেদন গৃহীত হলেও বাকি দুটিতে গ্রহণ করেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে রংপুর-৩ ও লালমনিরহাট-৩ আসনে তার প্রার্থিতা থেকে যায়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে রংপুর-৩ আসনে জয়ী হলেও অপরটিতে হেরে যান ভোট বর্জনকারী এরশাদ।