শনাক্ত হয়নি ডুবে যাওয়া লঞ্চের অবস্থান :মালিক ও চালকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

 

মাওয়ায় শোকার্ত স্বজনদের মিছিল:সড়ক অবরোধ

স্টাফ রিপোর্টার: পদ্মার পাড়ে মাওয়া ঘাটে চলছে কেবলই শোকের মাতম। আপনজন হারানো হাজারোশোকার্ত মানুষের একটাই আহাজারি, একটাই আকুতি, অন্তত প্রিয়জনের লাশটি যেনপায়। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার দিনভর চেষ্টা চালিয়েও ডুবে যাওয়া লঞ্চ এম এলপিনাক-৬-এর অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি উদ্ধার অভিযানে থাকা নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস বা বিআইডব্লিউটিএ-এর উদ্ধারকারী দল। তাছাড়া দুর্ঘটনা স্থল বাতার আশপাশের এলাকা থেকে কোনো লাশও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।অন্যদিকে লঞ্চ ডুবির ঘটনায় এর মালিক ও চালকসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে গতকাল সন্ধ্যায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গতকালসকালে চাঁদপুরের হাইমচরে পদ্মা নদী থেকে একটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এটিকেডুবে যাওয়া পিনাক-৬ লঞ্চের নিখোঁজ যাত্রীদের একজনের লাশ বলে নিশ্চিতকরেছে আভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

শোকার্ত স্বজনদের মিছিলে পুলিশের লাঠিপেটা: উদ্ধারঅভিযানে অবহেলার অভিযোগ করে নিখোঁজ ব্যক্তিদের শোকার্ত স্বজনরা গতকালসকালে মাওয়া লঞ্চঘাট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে। লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাটপ্রদক্ষিণ শেষে তারা ঢাকা-মাওয়া সড়ক অবরোধ করে। মিছিলে স্বজনরা ‘লাশ চাই, লাশ চাই’বলে স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করেমিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। লাশ উদ্ধারের দাবি জানাতে যাওয়া স্বজনদেরমিছিলে পুলিশের এ রকম আচরণের অনেকেই সমালোচনা করেছেন।

লঞ্চ মালিক পলাকত :হত্যা মামলা: পিনাক-৬-এরমালিক লৌহজঙের বিএনপি নেতা আবু বকর সিদ্দিক কালু মিয়া পালিয়ে গেছেন বলেজানা গেছে। গতকাল লৌহজঙের মেদিনীমণ্ডল পাড়ায় তার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়াযায়নি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আগামী শুক্রবার তার বড় ছেলে লিমনের বিয়েরঅনুষ্ঠান হওয়ার কথা; কিন্তু লঞ্চ দুর্ঘটনার পর পরই কালু ও তার পরিবারের সবসদস্য আত্মগোপন করেছেন।

লঞ্চ ডুবির ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা সোয়া৭টার দিকে বিআইডব্লিউটিএ-এর পরিবহন পরিদর্শক জাহাঙ্গীর ভুঁইয়া বাদী হয়েলৌহজং থানায় ছয় জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। থানার ওসিতোফাজ্জল হোসেন জানান, দণ্ডবিধি ২৮০, ২৮২ ও ৩০৪ (খ) ধারায় দায়ের করামামলায় আসামিরা হলেন- লঞ্চের মালিক আবু বকর সিদ্দিক কালু মিয়া, চালক নবীসহআরো চারজন।

লঞ্চের অবস্থান শনাক্ত হয়নি: ডুবে যাওয়া লঞ্চটিরঅবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিআইডব্লিউটিএ-এরউদ্ধারকারী দল। উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম ও নির্ভীক এখন মাওয়া ঘাট থেকে আধাকিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীর মিডপয়েন্টে অপেক্ষা করছে। গতকাল সকাল থেকেনৌবাহিনী ও বিআইডব্লিউটিএ-এর দুটি সোনার (সাউন্ড নেভিগেশন অ্যান্ডরেঞ্জিং) মেশিন দিয়ে সাড়ে সাত ঘণ্টা ধরে পদ্মা নদীর ৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে লঞ্চটির অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করা হয়।

নৌবাহিনীর সোনারমেশিন দিয়ে তল্লাশি অভিযান পরিচালনাকারী ক্যাপ্টেন নজরুল ইসলাম জানান, ২শমিটার প্রশস্ত এলাকা ধরে উজানের দিকে ২ কিলোমিটার ও ভাটির দিকে ৫কিলোমিটার জুড়ে তল্লাশি করা হয়। ঘটনার দিন যারা প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেনতাদের চিহ্নিত করে দেয়া স্থান থেকে এই তল্লাশি করা হয়। তিনি আরো বলেন, কেতকী নামে একটি ফেরি ঘটনার সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। ওই ফেরির চালক হাসানইমামের দেয়া তথ্য থেকে লঞ্চ ডুবে যাওয়ার একটি সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ করাহয়। ওই স্থানে সোনার মেশিন দিয়ে তল্লাশি করা হয়। এভাবে প্রায় ১০-১২টিসম্ভাব্য স্থান ধরে তল্লাশি করা হয়।সর্বশেষ গতকাল রাত সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় বিআইডব্লিউটিএ-এর জাহাজ সন্ধানীডুবে যাওয়া লঞ্চ শনাক্ত করার অভিযানে নামে।

মাওয়া ঘাটেফায়ারসার্ভিসের উপ-পরিচালক (অপারেশন) ভরত চন্দ বিশ্বাস জানান, ফায়ার সার্ভিসেরঅগ্নি শাসক ও অগ্নি বিনাশ নামে দু নৌযান মাওয়া ঘাটে রাখা হয়েছে। ডুবেযাওয়া লঞ্চটি শনাক্ত হলে সেখান থেকে লাশ উদ্ধারের কার্যক্রম পরিচালনা করাহবে। এজন্য ফায়ার সার্ভিসের ১৪ সদস্যের ডুবুরি দল এখন মাওয়া ঘাটে অবস্থানকরছে। এর আগে গতকাল নোঙর দিয়ে পানিতে তল্লাশি করে ফায়ার সার্ভিস। তিনিবলেন, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, প্রচণ্ড স্রোতের কারণেডুবে যাওয়া লঞ্চটি অন্য কোথাও সরে গেছে। এ কারণে শনাক্ত করতে দেরি হচ্ছে।