শত দুর্ভোগেও ঘরমুখো মানুষ : বাসে সিডিউল বিপর্যয়

 

রাজধানীর বাস টার্মিনালরেলস্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ছিলো ঘরমুখোমানুষের উপচে পড়া ভিড়

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে বিপুল সংখ্যক মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীরবিভিন্ন বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ছিলো ঘরমুখোমানুষের উপচেপড়া ভিড়। এতে সৃষ্টি হয় তীব্র জনজটের। মূলত ঈদের ছুটির সাথেআগে ও পরে সরকারি এবং অঘোষিত ছুটি মিলিয়ে নয় দিনের দীর্ঘ ছুটির কারণে এবারএকটু আগে ভাগেই ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। প্রিয়জনের সাথে ঈদের ছুটি কাটাতে শদুর্ভোগ সঙ্গী করেই শেকড়ের টানে ঘরে ফিরছেন তারা। তবে বাড়িফেরার এইযাত্রার শুরুতেই বাস-ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বাস যাত্রীদেরনির্ধারিত সময়েরও এক থেকে দু ঘণ্টা বেশি অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

রাজনৈতিককর্মসূচির ফাঁদে না পড়লেও এবার ঘরমুখো যাত্রীদের রয়েছে পথে পথে নানাদুর্ভোগের দুশ্চিন্তা। বেহাল সড়ক আর যানজট নিয়ে শঙ্কা তাদের। গত বছর দুঈদেই বিএনপি-জামায়াতের হরতালের ফাঁদে পড়ে রাজধানীবাসী। টিকিট কেটেও ৪০ ভাগযাত্রীই টিকিট ফেরত দিয়েছিলেন। তাই দুবছর পর এবার অনেকের কাছে গ্রামেরবাড়িতে ঈদ করতে যাওয়ার আনন্দটাও যেনো দ্বিগুণ। ফলে পথের দুর্ভোগের বিষয়টিমাথায় নিয়েই তারা যাত্রা শুরু করেছেন।

রেলওয়ে, পরিবহন সমিতিসহসংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর হিসেব মিলেয়ে দেখা গেছে, এবার ঈদে সড়ক, রেল ওনৌপথে রাজধানী ছাড়বেন পৌনে এক কোটি লোক। গতকাল থেকে আগামী সোমবারপর্যন্ত পাঁচ দিন চলবে এই বাড়ি ফেরার ধুম। এই কয়েক দিনে প্রতিদিন ঢাকাছাড়বে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। সবচেয়ে বেশি মানুষ যাতায়াত করবে সড়ক পথে।গণপরিবহন ছাড়াও ব্যক্তিগত গাড়িতে এবং অনেকে মাইক্রোবাস ভাড়া করে দেশেরবাড়ি যাবেন।

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেলহক চৌধুরী বলেন, শুক্র ও শনিবার সবচেয়ে বেশি মানুষ রাজধানী ছাড়বে। তবঈদের আগের দিন পর্যন্ত বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটবেন রাজধানীবাসী। গতকাল সর্বশেষট্রেন ও বিআরটিসি বাসের ২৮ জুলাইয়ের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে। ঈদআনন্দ যাত্রার শুরতেই টিকিট নেই বললেই চলে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল রাজধানীর বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে সকালের দিকে যাত্রীরচাপ কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা বাড়তে থাকে। দুপুর গড়াতেইরাজধানীর বাস টার্মিনাল গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ, কমলাপুর রেলস্টেশনএবং সদরঘাট নদী বন্দর মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এজন্য এসব এলাকারসড়কগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রচণ্ড গরমে ক্লান্ত যাত্রীরা এসবটার্মিনালে বিশ্রামের পর্যাপ্ত স্থান না পেয়ে আরও অস্থির হয়ে পড়েন। বেশকয়েকটি বাস কোম্পানি যাত্রীদের জন্য বিশেষ বসার ব্যবস্থা করলেও তা ছিলোঅপ্রতুল। কয়েকটি বাস কোম্পানির ও ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে গতকাল।এজন্য কাউন্টার ও স্টেশনে যাত্রীদের অতিরিক্ত সময় বসে থাকতে দেখা গেছে।

সকড়পথেঈদযাত্রা: গতকাল সরেজমিনে রাজধানীর গাবতলি টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড়। বিকেলে এই ভিড় মারাত্মক আকার ধারণ করে। রাতেগাড়ি ছাড়ার সময় নির্ধারিত থাকলেও অনেকে বিকালের মধ্যেই বিভিন্ন বাসকাউন্টারে আসতে শুরু করেন। এ কারণে দুপুরের পর রাজধানীর কলেজগেট এলাকা থেকেগাবতলী, মিরপুর-১ থেকে টেকনিক্যাল মোড়, মিরপুর-১ থেকে মাজার রোড সড়কেতীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে অনেককে হেঁটে যেতে দেখা গেছে।এদিকে গাবতলি বালুর মাঠে কয়েকটি পরিবহন সার্ভিসের বাস কাউন্টার রয়েছে।সেখানে যাত্রীদের বসার জন্য সামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। সেখানে গতকাল সকালথেকে শ শ যাত্রীকে বিভিন্ন গন্তব্যের বাসের জন্য অপেক্ষমাণ দেখা গেছে।তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ের একটু আগেই তারা কাউন্টারেপৌঁছেন। কিন্তু বাস সময়মত ছাড়ছে না। লাবনী খাতুন ও মেরিনা সুলতানা নামেরসাতক্ষীরাগামী দু যাত্রী জানান, তাদের একে ট্রাভেলসের বাসেরটিকিট কাটা ছিলো সোয়া ৮টায়। কিন্তু গাড়ি ছেড়েছে ৯টার পরে।

একইঅবস্থা অন্যান্য বাসগুলোরও। হানিফ, ঈগল, এসপি গোল্ডেন লাইন, টিআরট্রাভেলসসহ বিভিন্ন বাস কোম্পানি নির্ধারিত সময়ের এক থেকে দু ঘণ্টা পরেবাস ছেড়েছে। কারণ হিসাবে বাস কাউন্টারের কর্মকর্তারা জানান, পথে যানজটেরকারণে গাড়ি আসতে দেরি হয়। বিকেলের পর থেকে উত্তরাঞ্চলে যেতে মহাসড়কেরহেমায়েতপুর, সাভার, চন্দ্রা এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় বলে জানালেনবাস চালকরা। হানিফ পরিবহনের চালক রফিকুল হক জানান, রাজশাহী থেকে ফেরার পথেতিনি দেখেছেন উত্তরাঞ্চলমুখী যানবাহন কয়েকটি পয়েন্টে যানজটে পড়েছে। তারধারণা আগামী কয়েক দিন এই জট অসহনীয় আকার ধারণ করবে।

রাজধানীরসায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালেও ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে।যাত্রাবাড়ি চৌরাস্তা ও টার্মিনালের আশপাশ থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাসযাত্রী পরিবহন করছে। গতকাল সায়েদাবাদে দূরপাল্লার বিভিন্ন বাসে অতিরিক্তভাড়া দাবি করা হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। ঢাকা বাস-ট্রাক ওনার্সঅ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে একেক দিনের জন্য আগাম টিকিট বিক্রি হয়েছে প্রায় তিনলাখ। এই যাত্রীদের অর্ধেকের বেশি উত্তরাঞ্চলের। এরপরই দক্ষিণাঞ্চলেরযাত্রীরা রয়েছেন। তবে খেটে খাওয়া মানুষের বেশিরভাগ আগাম টিকিট কেনেননি।তারা টার্মিনালে এসে সাধারণ পরিবহনে ভ্রমণ করবেন। তবে আগাম টিকিটের চেয়ে এইশ্রেণির যাত্রীর সংখ্যা বেশি। এবার ঈদে সড়ক পথেই সবচেয়ে বেশি যাত্রী ভ্রমণকরবে বলে তাদের ধারণা।

রেলপথে ঘরে ফেরা: পরিবারের সাথে ঈদ আনন্দভাগাভাগি করতে ঘরমুখো মানুষ ট্রেনে চড়ে বাড়ি ফিরছে আনন্দ নিয়ে।বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ২২টি ট্রেন রাজধানীর কমলাপুররেলস্টেশন থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। পূর্ব ও পশ্চিম রেলে সব মিলিয়ে৩৩৫টি ট্রেনে পরিবহন করা হবে ঈদের যাত্রী। পূর্ব ও পশ্চিম রেলে ৮৮টিআন্তঃনগর ট্রেন, ৬২টি মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেন, ১৩ জোড়া বিশেষ ট্রেন যাত্রীপরিবহন করবে ৪০০ রেলস্টেশনে। এরমধ্যে কমলাপুর থেকে প্রতিদিন বিভিন্নগন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে ২৮টি আন্তঃনগর ট্রেন।

গতকাল সকাল ৬টা ৫৫মিনিটে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দিনের প্রথম ট্রেনটি ছাড়ে। সিলেটগামী এইট্রেনের নাম পারাবত। যুদ্ধজয়ের মতো করে গত ২০ জুলাই যারা আগাম টিকেট সংগ্রহকরেছিলেন তারা এই ট্রেনের যাত্রী। জানা গেলো, ট্রেনটি ৬টা ৪৫ মিনিটে ছাড়ারকথা ছিলো। তবে মাত্র ১০ মিনিট বিলম্ব মেনে নিয়েছেন যাত্রীরা। এরপর ১টার পরএকটা ট্রেন ছাড়তে শুরু করে। সুন্দরবন ট্রেনটি ৩৫ মিনিট দেরীতে স্টেশন ছাড়েবলে রেলস্টেশন কর্মকর্তারা জানান। বাকি সব ট্রেনই যথাসময়ে স্টেশন ছেড়েছে।