লিবিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মহেশপুরের মিলনের স্বপ্ন চুরমার :বাড়িতে শোকের মাতম

 

শাহনেওয়াজ খান সুমন: ‘আমরা খুব বিপদে আছি, বেনগাজিতে ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে, বোমা মারছে। বাইরে যাওয়া যাচ্ছে না, কখন কি হয়..!’ মৃত্যুর তিনদিন আগে স্ত্রীকে মোবাইলফোনে লিবিয়া প্রবাসী ঝিনাইদহের যুবক মিলন হোসেন শেষবারের মতো এ কথা বলেছিলেন। এখন এ কথাই ঘুরেফিরে কানে বাজছে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার মাথাভাঙ্গা গ্রামের গৃহবধূ বিলকিস খাতুনের। তিনি স্বামীকে বলেছিলেন বাইরে বের হওয়ার দরকার নেই।

এলাকাবাসী জানান, দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে যুদ্ধ বিধ্বস্ত লিবিয়ায় যান ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বাবলা মাথাভাঙ্গা গ্রামের মিলন হোসেন (৩০)। সেখানে কর্মরত অবস্থায় বুধবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হন তিনি। আর এ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই চুরমার হয়ে যায় মিলনের স্বপ্ন। মিলন হোসেনের এক বন্ধু স্ত্রী বিলকিসের আত্মীয় মালয়েশিয়া প্রবাসী আমির হোসেনের কাছে মৃত্যুর খরবটি পৌঁছে দেয়। আমির হোসেন বৃহস্পতিবার সকালে ফোন করে মিলনের পরিবারকে মৃত্যুর খবর দেন। এ খবর পাওয়ার পর থেকেই শোকে কাতর হয়ে পড়ছে পরিবারটি। বাড়িতে চলছে কান্নার রোল। মিলন মিয়ার বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলার কানবিল গ্রামে হলেও তিনি ছোট বেলা থেকে নানা বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বাবলা মাথাভাঙ্গা গ্রামে ফজলুর রহমান ওরফে ফজেল মিয়া নামে এক ব্যক্তির কাছে বড় হন। তিরি তার পালিত বাবা। মিলন হোসেন চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন। তার প্রকৃত বাবার নাম মৃত সদর উদ্দীন এবং মায়ের নাম রোকেয়া বেগম। মিলা নামে মিলনের সাড়ে তিন বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।

মিলনের স্ত্রী বিলকিস বেগম বলেন, চার বছর আগে কয়েক বন্ধুর সাথে পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য লিবিয়ায় যান মিলন। বেনগাজী বিমান বন্দরে পানি সরবরাহের কাজ করতেন তিনি। লিবিয়ায় কাজ করে বাড়িতে টাকা পাঠাতেন তিনি। সেই টাকা দিয়ে একটি আধাপাকা বাড়িও নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে খবর আসে লিবিয়ায় যে বাড়িতে মিলন হোসেন বসবাস করতেন সে বাড়িটি বোমা দিয়ে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে এবং সেখানেই মিলন হোসেনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে এ খবর শোনার পর স্ত্রী বিলকিস বেগম, মা রোকেয়া বেগম, বোন জেসমিন আক্তার, পালিত পিতা ফজলুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। মিলনের মা রোকেয়া বেগম ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই নির্বাক। তিনি ছেলেকে হারিয়ে হতবিহবল। যাকেই কাছে পাচ্ছেন তাকে জড়িয়ে ধরে তিনি মিলনের খবর জানতে চাচ্ছেন।

মিলনের পালিত পিতা ফজলুর রহমান জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মিলন মারা গেছে। আমার সংসার কে চালাবে। তিনি সরকারের কাছে দাবি করেন, তার ছেলের মৃতদেহ যেন দেশে তাড়াতাড়ি আনা হয়। মিলনের মামাতো ভাই আব্দুল মালেক জানান, মিলন ছিলো শান্ত প্রকৃতির। তার শ্বশুর ও পালিত পিতা অনেক কষ্টে অর্থ দিয়ে তাকে লিবিয়াতে পাঠান।

এ ব্যাপারে মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিয়াকত হেসেন জানান, তিনি মিলন নামে মহেশপুরের এক ছেলের মৃত্যুর খবর মিডিয়ার মাধ্যমে শুনেছেন বলে জানান। তবে এ ব্যাপারে সরকারিভাবে কোনো তথ্য তাদের কাছে এখনো আসেনি।মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাছিমা খাতুন জানান, মিলন লিবিয়াতে মারা যাওয়ার খবরটি পাওয়ার পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের পরিবারের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মিলনের লাশ আনার জন্য তার পরিবারের একটি আবেদন সংশ্লিষ্ট অফিসকে প্রদান করা হয়েছে।