লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ছেন আজ

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপারিশে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সম্মতির মাধ্যমে মন্ত্রিসভা থেকে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী অপসারিত হচ্ছেন আজ। তাকে দ্রুত অপসারণ করার জন্য আজ শনিবার সরকারি ছুটির দিনেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি প্রক্রিয়ায় লতিফ সিদ্দিকীর অপসারণের প্রস্তাবসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সকল নথিপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ইতোমধ্যে প্রস্তুত করেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন ভুঞয়া আজ সকালে অফিসে এসে এটি চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠাবেন। পরে ওই ফাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুপারিশ করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশের পর প্রস্তাবটি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অনুমোদন করবেন এবং পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করবে। পুরো প্রক্রিয়াটি আজ শনিবারের মধ্যেই চূড়ান্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন ভুঞয়া পবিত্র হজব্রত পালন শেষে গতকাল শুক্রবার রাতে দেশে ফিরেছেন। গত ৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘হজব্রত পালন শেষে রাষ্ট্রপতি দেশে ফিরলেই মন্ত্রিসভা থেকে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে অব্যাহতি দেয়া হবে। অন্যদিকে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করতে হলে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডাকতে হবে। দলের পদ থেকে কাউকে বাদ দিতে হলে গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ কার্যনির্বাহী কমিটির এ বৈঠক আগামীকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এ বৈঠকে দলের প্রেসিডিয়াম পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হলেও শুধুমাত্র প্রাথমিক সদস্যপদ রাখা হতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অবদানের কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। তবে বৈঠকে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা কঠোর ভূমিকা রাখলে প্রাথমিক সদস্য পদটুকুও কেড়ে নেয়া হতে পারে। আর সেটি হলে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মতো তার বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকীও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হবেন।

জানা গেছে, দলীয় প্রধানের প্রতি আনুগত্য ও নিষ্ঠার ব্যাপারে লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সামনের সারিতে থাকলেও শুধু তার লাগামহীন কথাবার্তা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে  তার পাশে এখন আর কেউ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আর প্রায় সকল নেতাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথাবার্তা, মধ্যমসারির নেতাদের প্রতিনিয়ত ধমক ও কটূক্তি করার কারণে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যে সম্পূর্ণ একা এখন লতিফ সিদ্দিকী।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (বিধি ও সেবা অধিশাখা) মো. আবদুল ওয়াদুদ জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাধারণত বিদেশ সফর শেষে দেশে ফেরার পরদিন ছুটির দিন থাকলেও অফিস করেন। গতকাল তিনি যেহেতু দেশে ফিরেছেন তাই আজ শনিবারও তিনি অফিস করতে পারেন।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে সেখানকার টাঙ্গাইল জেলা সমিতির এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী হজরত মুহাম্মদ (সা.), পবিত্র হজ, হজযাত্রী, তাবলিগ জামাত নিয়ে চরম আপত্তিকর মন্ত্রব্য করেন। হজ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। তবে তার চেয়েও হজ এবং তাবলিগ জামাতের বেশি বিরোধী। এ হজ যে কতো ম্যানপাওয়ার নষ্ট হয়। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোনো কাজ নেই। এদের কোনো প্রডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে। অ্যাভারেজে যদি বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ লোক হজে যায় প্রত্যেকের ৫ লাখ করে ৫শ কোটি টাকা খরচ হয়।’ তাবলিগ জামাতের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, ‘তাবলিগ জামাত প্রতি বছর ২০ লাখ লোকের জমায়েত করে। নিজেদের তো কোনো কাজ নেই। সারাদেশের গাড়িঘোড়া তারা বন্ধ করে দেয়।’

এ বক্তব্যের পর থেকেই লতিফ সিদ্দিকীর সকল কর্মকাণ্ড তাত্ক্ষণিক স্থগিত করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতি দেশে না থাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে সেটি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। সংবিধানের ৫৮ (১) ধারা অনুযায়ী, লতিফ সিদ্দিকী রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিলেই তা গৃহীত হবে। গতকাল শুক্রবার রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছে লতিফ সিদ্দিকীর কাছ থেকে কোনো পদত্যাগপত্র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পাননি। সরকার ও দলের পক্ষ থেকে তার কাছ থেকে পদত্যাগপত্র সংগ্রহের ব্যাপারেও কেউ আগ্রহ দেখাননি। পদত্যাগপত্র না আসায় এখন বিকল্প হিসেবে সংবিধানের ৫৮ (২) ধারা প্রয়োগ করে লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হচ্ছে। এই ধারা অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী যেকোনো সময় তাকে পদত্যাগের অনুরোধ করতে পারেন এবং এই অনুরোধ পালনে অসমর্থ হলে তিনি রাষ্ট্রপতিকে ওই মন্ত্রী নিয়োগের অবসান ঘটাতে পরামর্শ দেবেন।

এদিকে মন্ত্রিসভা থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে অব্যাহতির সিদ্ধান্তের পর থেকেই ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পদ পেতে দলীয় নেতৃবৃন্দের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। তবে আপাতত নতুন কাউকে এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন বলে একটি সূত্র আভাস দিয়েছে। এ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন জুনাইদ আহমেদ পলক। আর সজীব ওয়াজেদ জয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন।