লক্ষমাত্রা পূরণ হয়নি ॥ লাভের আশায় শুরু করলেও গুনতে হবে লোকসান

কেরুজ চিনিকলের ২০১৭-১৮ আখ মাড়াই মরসুম শেষ হবে আগামীকাল

দর্শনা অফিস: বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের বেধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রা এবারও পূরণ হচ্ছে না কেরুজ চিনিকলে। আখ মাড়াই ও রোপণে মুখ থুবড়ে পড়ার অবস্থা কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষের। লাভের আশায় আখ মাড়াই কার্যক্রম শুরু করলেও শেষ অবধি এবারও গুনতে হবে লোকসান। লোকসানের সঠিক অংক জানতে না পারলেও বরাবরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে। গত বছরের ১ ডিসেম্বর খরচ বাঁচাতে খানেকটা সাদামাটা পরিবেশেই কেরুজ চিনিকলের ২০১৭-১৮ আখ মাড়াই মরসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য কেরুজ সুগারসেচ ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান হাজি আলী আজগার টগর। এ মরসুমে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশেনের নির্ধারিত বেধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৮০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৫ হাজার ৮শ’ মেট্রিকটন চিনি উৎপাদন করতে হবে। ৭০ মাড়াই দিবসে চিনি আহরণের গড় হার নির্ধারিত ছিলো ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। ৮০ বছরের পুরোনো এ মিলটিতে বরাবরই চিনি আহরণের গড় হার নির্ধারণ করা হয়ে থাকে বেশি। সে হিসেব মতে আজ ৮১ মাড়াই দিবসে পা রাখবে কেরুজ চিনিকলটি। আগামীকাল ৮২ মাড়াই দিবসেই আখেরী হুইসেল বাজিয়ে ২০১৭-১৮ আখ মাড়াই মরসুমের ইতি টানা হতে পারে বলেই জানিয়েছেন চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন। গতকাল রোববার ৭৯ মাড়াই দিবস পর্যন্ত আখ মাড়াই করা হয়েছে ৭৫ হাজার ২৭০ মেট্রিকটন। ২ দিনে আরও ২৫০ টন আখ মাড়াই করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে চলতি মরসুমে আখ মাড়াইয়ের সর্বমোট ওজন দাঁড়াতে পারে ৭৮ হাজার মেট্রিকটন। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ২ হাজার মেট্রিকটন কম। চিনি আহরণের গড় হার ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারিত থাকলেও তার ধারে কাছে পৌঁছুনো সম্ভব হয়নি। ফলে এবারের মরসুমে চিনি আহরণের গড় হার ছিলো ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ৭৮ হাজার মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন হবে ৪ হাজার ১৫৭ মেট্রিকটন। ফলে নির্ধারিত উৎপাদনের ক্ষেত্রে ১ হাজার ৬৪৩ মেট্রিকটন চিনি উৎপাদন কম হবে। করপোরেশনের কর্তাবাবুরা ৭০ মাড়াই দিবস বেধে দিলেও তা ডিঙিয়ে পৌছিয়েছে ৮১ দিবসে। যা লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে ১১ দিন। এবারের মরসুমে মাঝেমধ্যে ছোটখাটো যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়লেও অন্যান্যবারের মতো বড় ধরণের ত্রুটির কবলে পড়তে হয়নি মিলটিকে। চলতি আখ মাড়াই মরসুমের শুরু থেকেই মিলের কমকর্তাদের আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টার ত্রুটি না থাকলেও লোকসান গোনা থেকে রেহায় পাচ্ছেনা। এদিকে আখ রোপনের ক্ষেত্রে মিলের কর্তকর্তা, কর্মচারি ও শ্রমিকদের মধ্যে হিড়িক পড়ে যায়। করপোরেশন থেকে আখচাষে বাধ্যতামূলক ঘোষণা দেয়ায় মিলের সাথে সংশ্লিষ্টরা চাকরি বাঁচাতে পরের জমি লিজ নিয়েও আখচাষ শুরু করে মাজায় গামছা বেধে। অবশেষে সে গুড়েও পড়লো বালি। সব চেষ্টা বিফলে গেলো। রোপন মরসুমের সময়সীমা শেষের দিকে পৌছুলে লক্ষ্যমাত্রার ধার কিনারেও পৌছানো সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ মেয়াদী ফসলে ক্রমাগত লোকসান ও হয়রানীতে অতিষ্ঠ কৃষকরা মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চাষিদের পাশাপাশি লাঙ্গল কোদাল নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সুগার করপোরেশনের নির্দেশে ঘুম থেকে উঠে মাঠমুখি ছুটেছেন। ২০১৭-১৮ আখ রোপন মরসুমে সর্বমোট ১২ হাজার ৫শ’ একর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। এর মধ্যে চিনিকলের নিজস্ব খামারে ১ হাজার ৬৪৫ একর এবং চাষীদের ১০ হাজার ৮৫৫ একর জমিতে আখ চাষ করা হবে। এ ছাড়া ৯ হাজার ৯শ’ একর নতুন এবং ২ হাজার ৬শ’ একর জমিতে মুড়ি আখ চাষের সিদ্ধান্ত ছিলো চুড়ান্ত। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চাষিদের সর্বাত্মক সহযোগীতা দেয়া হয়েছে। চাষিদেরকে আখের জমিতে সার প্রয়োগ, বীজ ক্রয়, কীটনাশক প্রয়োগ, নালাকাটা, আখবাধা প্রভৃতি কাজের জন্য প্রায় ৫ কোটি টাকা ঋণ প্রদানের কর্মসুচি গ্রহণ করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় ২০১৭-১৮ আখ রোপন মরসুমের সুচনা। আগামি ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে আখ রোপন কার্যক্রম। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সর্বমোট ৬ হাজার ২শ’ সাড়ে ৭৭ একর জমিতে আখ রোপন সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে কেরুজ চিনিকলের নিজস্ব জমি রয়েছে ১ হাজার ৩শ’ ১০ একর এবং কৃষকদের জমির পরিমাণ ৪ হাজার ৯শ’ সাড়ে ৬৭ একর। বর্তমানে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অর্ধেক রোপন সম্পন্ন হয়েছে। তবে বাকি আরও ১০ দিনে বেশ কয়েক একর জমিতে আখ রোপন হবে বলে জানা গেছে। সাড়ে ১২ হাজার একর জমিতে আখ রোপন করা গেলে সম্প্রতিকালের ২০১৮-১৯ আখ মাড়াই মরসুমে সম্প্রতিকালের রেকর্ড ভাঙা সম্ভব হতো বলে মন্তব্য করেছিলেন বেশ কয়েকজন আখচাষি। কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন বলেছেন, এলাকার অন্যতম অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি কেরুজ চিনিকলটি রক্ষা করতে বেশি বেশি আখচাষের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে আখচাষ ও চাষিদের সবধরণের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। সেই সাথে পূর্জি জটিলতা কাটিয়ে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকদের সেবা পৌছুনো হচ্ছে। ঘরে বসেই আখের মূল্য পেয়ে যাচ্ছে কৃষকরা। তিনি চাষিদের বেশি বেশি আখচাষের আহ্বান জানিয়েছেন।