রয়েল এক্সপ্রেস ও এইচআর পরিবহনের দুটি কোচের মুখোমুখি সংঘর্ষ ॥ হতাহত ৩০

দুর্ঘটনার শিকার জামাইকে সুস্থ করে ঢাকার বাসায় রেখে বাড়ি চুয়াডাঙ্গায় ফেরার পথে লাশ হলেন শাশুড়ি
স্টাফ রিপোর্টার: রয়েল এক্সপ্রেস ও এইচআর পরিবহনের দুটি কোচের মুখোমুখি সংঘর্ষে চুয়াডাঙ্গার অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার পতœী আম্বিয়া খাতুন (৫৫) নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন যাত্রী। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-পাটুরিয়া সড়কের মানিকগঞ্জ ঘিওরের বানিয়াজুরী মুন্নু অ্যাটোয়ারের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার পর কোচ দুটি পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। আহতদের মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে রাকিবের (২০) অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে তার বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এদিকে নিহত আম্বিয়া খাতুনের মরদেহ গতরাত ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের জীবননগর বাসস্ট্যান্ডপাড়ার বাড়িতে নেয়া হয়। নিকটজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। গতরাতেই জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি নেয়া হয়।
নিহত আম্বিয়া খাতুন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার সোহরাব উদ্দীনের স্ত্রী। ঈদুল আজহার পরদিন শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসা জামাই নিয়ামুল কবির জোহা চুয়াডাঙ্গায় দুর্ঘটনার শিকার হন। তাকে নিয়ে শাশুড়ি আম্বিয়া খাতুন ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তোলেন। ঢাকার বাসায় একমাত্র মেয়ে ও জামাতাকে রেখে তিনি গতকাল বাড়ি চুয়াডাঙ্গায় ফেরার পথে দূরপাল্লার কোচ রয়েল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন।
আমাদের মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি পুলিশের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে মহাসড়কের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী মুন্নু অ্যাটোয়ারের সামনে চুয়াডাঙ্গাগামী রয়েল এক্সেপ্রেস বাসের সাথে সাতক্ষীরা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী এইচআর পরিবহনের একটি বাসের মুখোমুখি সংর্ঘষ হয়। এতে বাস দুটির সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে। দুর্ঘটনায় আহত হন উভয় বাসের কমপক্ষে ৩০ যাত্রী। আহতদের মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে গুরুতর আহত আম্বিয়া খাতুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে মারা যান। পুলিশ দুর্ঘটনাকবলিত বাস দুটি আটক করেছে।
ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিতে গিয়ে নিহত আম্বিয়া খাতুনের পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন শেষে ৯ বছর আগে অবসরগ্রহণ করেন সোহরাব উদ্দীন। এক মেয়ে ও তিন ছেলে। মেয়ে জামাই ঢাকার মগবাজারে বসবাস করেন। এক ছেলে থাকেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। গত ঈদে মেয়ে সোহেলী আফরোজ পিয়া ও তার স্বামী নিয়ামুল কবির জোহা চুয়াডাঙ্গায় বেড়াতে আসেন। ঈদের পরদিন দুর্ঘটনায় আহত হন জামাই জোহা। তাকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রওনা হন ঢাকায়। এরপর ক’দিন ঢাকায় অসুস্থ জামাইয়ের সেবা সুস্থতার কাজেই ছিলেন। জামাই কিছুটা সুস্থ হয়ে ঢাকার বাসায় ফিরেছেন। মেয়ে-জামাই রেখে গতকাল সকাল সাড়ে ৭টায় আম্বিয়া বেগম বাড়ি চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে রয়েল এক্সপ্রেসের কোচে ওঠেন। কে জানতো স্বজনদের কাঁদিয়ে তাকে চলে যেতে হবে এভাবে?