রিভিউ আবেদন খালিজের পরপরই জামায়াতে ইসলামীর মিছিল

স্টাফ রিপোর্টার: ১৮ দলীয় জোটের অবরোধের মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ হওয়ায় জামায়াত মুহূর্তেই প্রতিবাদ মিছিল বের করে। ফাঁসির আদেশ বাতিলের দাবি জানিয়ে জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত জেলা-উপজেলাগুলোয় দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী লাঠিসোঁটা, শক্তিশালী বোমা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে মহিলা জামায়াত, আলমডাঙ্গায় জামায়াতে ইসলামী, মেহেরপুরে জামায়াত ইসলামী ও ছাত্রশিবির যৌথভাবে মিছিল বের করে। মেহেরপুরে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও আলমডাঙ্গা ও জীবননগর এবং ঝিনাইদহ ছিলো অনেকটাই শান্ত। মেহেরপুর অপ্রীতির ঘটনার বিস্তারিত পৃথক প্রতিবেদনে।

ঢাকার বাইরে বগুড়া, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, সিলেট, সীতাকুণ্ড, পাবনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, গাজীপুর, কুমিল্লা, ফরিদপুর ও নড়াইলসহ ২৭ জেলায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। এছাড়াও জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা মন্ত্রী-বিচারপতির বাড়ি, সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর- বোমাবাজি; গাছের গুঁড়ি ফেলে প্রায় অর্ধশত কিলোমিটার মহাসড়ক অবরোধ; রেললাইনে নাশকতা ও ট্রেন চলাচলে বাধাসহ নানা ধরনের নাশকতা চালিয়েছে। তাদের তাণ্ডব ঠেকাতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে অন্তত ৭০ জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধ সহস্র্রাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। (৩ পাতার ১ কলামে দেখুন)

দর্শনা অফিস জানিয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে দর্শনায় জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে দামুড়হুদা উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে বাসস্ট্যান্ড চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুরাতন বাজার মোড়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিক্ষোভ সমাবেশ। সমাবেশে বর্তমান সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করে বক্তব্য দেন জামায়াত নেতা আব্দুল গফুর, আব্দুল কাদের, গোলজার হোসেন, আবু বক্কর সিদ্দিক, আব্বাস আলী, অ্যাড. রাসেল, অ্যাড. আসাদুজ্জামান প্রমুখ।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর প্রচেষ্টার প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামীর ডাকা ৩ দিনের হরতালের গতকাল শেষ দিনে জীবননগরে জামায়াতে ইসলামীর মহিলাকর্মীরা ঝাড়ু মিছিল করে। বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াত-শিবিরকর্মীরাও। সকাল ১০টার দিকে উপজেলার বৈদ্যনাথপুর থেকে মহিলা জামায়াতের ঝাড়ু মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জীবননগর শহরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে হাসাদাহ বাজারে ফিরে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। একই সময়ে উপজেলা জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির লাঠি মিছিল বের। মিছিল শেষে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা আমির প্রভাষক খলিলুর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা সেক্রেটারি মাও. ইসরাইল হোসেন, পৌর আমির মাও. সাজেদুর রহমান, আন্দুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেন, উপজেলা সহকারী সেক্রেটারি ইব্রাহিম খলিল, পৌর সেক্রেটারি গোলাম রসুল, হাসাদহ ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, উথলী ইউনিয়ন আমির আসাবুল হক মল্লিক, সীমান্ত আমির আতিয়ার রহমান, হাসাদহ ইউনিয়ন আমির কামাল উদ্দিন, রায়পুর ইউনিয়ন আমির মাও. সাইদুর রহমান, উপজেলা ছাত্রশিবির সভাপতি ফারুক আহম্মেদ, শহর সভাপতি ফিরোজ হোসেন, উপজেলা সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, শহর সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান, হাফিজুর রহমান প্রমুখ।

দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। মানবতাবিরোধী অপরাধের দ্বায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের রিভিউ স্থগিত করায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এবং অবৈধ ট্রাইবুন্যাল বাতিলের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন জামায়াতের আমির প্রভাষক শরীফুল আলম মিল্টনের নেতৃত্বে এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি দেউলীর মোড় থেকে শুরু হয়ে উপজেলা চৌরাস্তার মোড় ঘুরে ব্রিজমোড়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের রিভিউ স্থগিত করায় বক্তরা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে নিন্দা জানান এবং অবৈধ ট্রাইবুন্যাল বাতিলের দাবি জানান। দামুড়হুদা উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাও. আব্দুস সাত্তার, সদর ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি মনিরুল আলম মুকুল, ওয়ার্ড সভাপতি শহিদুর রহমান, আশাদুল হক, আবুব কর, আবুল বাসার, মতিয়ার রহমান, ইকতিয়ার রহমান প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছেন, জামায়াত-শিবির গতকাল বিকেলে আকস্মিকভাবে আলমডাঙ্গা শহরে সশস্ত্র বিক্ষোভ মিছিল করেছে। শহরের আনন্দধাম এলাকা থেকে বের হয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি চারতলা মোড় হয়ে হাফিজ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মিছিলের উপস্থিত জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের অনেকের হাতে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র ছিলো। বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে মানুষজন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। অনেকে দোকানপাট বন্ধ করে দেন। ওই সময় শহরের সোনাপট্টি থেকে মিছিলকারীরা একটি ইজিবাইক ভাঙচুর করে। ক্যানালপাড়ার কালীপদ পালের ছেলে ধীরেন্দ্রনাথ পাল ইজিবাইকের মালিক। খুব দ্রুত মিছিলটি সম্পন্ন করে নেতা-কর্মীরা যে যার মতো সটকে পড়ে। ওই মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ইউসুফ আলী, পৌর আমির মীর আ. জলিল, পৌর নায়েবে আমির নজরুল ইসলাম, পৌর সেক্রেটারি রবিউল ইসলাম, জেলা অফিস সম্পাদক মামুন রেজা, উপজেলা প্রচার সম্পাদক শামসুল আরেফিন, দফতর সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস, ইউপি চেয়ারম্যান দারুস সালাম, কুমারীর ইউনিয়ন সভাপতি বিল্লাল হোসেন, ডাউকি সভাপতি আব্দুল মান্নান, উপজেলা শিবির সভাপতি আশরাফুল ইসলাম, পৌর শিবির সেক্রেটারি আশরাফুল হক প্রমুখ।