রিভিউর জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার: সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন তৈরি করতে কাজ করছেন অ্যাটর্নি জেনারেলসহ ১১ সদস্যের একটি কমিটি। রায়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ হিসেবে ‘রিভিউ’ প্রস্তুতির জন্য এ কমিটি কাজ করছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়টি অনেক বড়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা রিভিউর প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ লক্ষ্যে ১১ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে এ কমিটি কাজ করে যাচ্ছে। কমিটির মধ্যে অ্যাটর্নি জেনারেল ছাড়াও দুই অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও ৮ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রয়েছেন। গোপনীয়তার স্বার্থে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না বলে জানান মাহবুবে আলম।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আদালতের দৈনন্দিন কাজ শেষ করে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এ কমিটি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে আইনি তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করছে। সরকারের সিদ্ধান্তে যথাসময়ে রিভিউ করা হবে। এর আগে গত ১১ অক্টোবর রায়ের সার্টিফাইড কপি (সত্যায়িত অনুলিপি) তুলেছেন বলে অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়েছিলেন। আইন অনুযায়ী, রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে রিভিউ করতে হয়। গত ১১ অক্টোবর এ অনুলিপি পেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

প্রসঙ্গত, উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি গত ১ আগস্ট প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্ট। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। এর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় গত ১০ আগস্টের সংবাদ সম্মেলন আইনমন্ত্রী বলেছিলেন- মামলার ফ্যাক্ট অব ইস্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথা প্রধান বিচারপতি তার রায়ে বলেছেন। রায়ে জাতীয় সংসদ সম্পর্কে কটূক্তির পাশাপাশি পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোনো একক ব্যক্তির কারণে হয়নি, এমন বক্তব্যকে মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে অস্বীকার করার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। গত ১৮ আগস্ট রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, রায়ের সত্যায়িত কপির জন্য আবেদন করা হয়েছে। রায় ভালোভাবে পড়া হচ্ছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই রিভিউ আবেদন করা হবে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং তার কিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আদালত তার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে সংসদে আনা সংবিধান সংশোধন বাতিলের এ রায় দিয়েছেন। এর পর কী আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে, তা স্পষ্ট করা না হলেও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এই প্রক্রিয়ার কাজ তারা ইতোমধ্যে শুরু করেছেন। আইনমন্ত্রী এর আগে সুপ্রিম কোর্টের এ রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করবেন বলে সংসদেই জানিয়ে বলেছিলেন, তাতে তারা ‘কামিয়াব’ হবে বলে আশাবাদী।