রাজশাহীর চারঘাটে আওয়ামী লীগ জনসভায় খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

উনি ধ্বংসের রাণী, দেশের মানুষের শান্তি উনার সহ্য হয় না

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উনি (খালেদা জিয়া) গোলাপী রঙের শাড়ি পরে ঘুরে বেড়ান। সেই গোলাপী এখন কই? জাতীয় নির্বাচনের ট্রেন মিস করে তিনি এখন উপজেলা নির্বাচনের ট্রেনে চড়ে বসেছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা সদরের সরদহ পাইলট হাইস্কুলমাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিকভাবেই নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনে ৪০ ভাগেরও বেশি ভোট পড়েছে। নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রিপোর্টে এর প্রমাণ রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত সহিংসতা না চালালে আরো বেশি ভোটার ভোটকেন্দে যেতেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থাও বলেছে, আওয়ামী লীগের সাথেই বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ রয়েছেন।

তিনি প্রায় আধঘণ্টার বক্তব্যে তার সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং বিএনপি-জামায়াতের অপকর্ম তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধ্বংস ছাড়া বিএনপি-জামায়াত জোট আর কোনো রাজনীতি জানে না। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, উনি ধ্বংসের রাণী, দেশের মানুষের শান্তি উনার সহ্য হয় না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে রাজশাহীসহ সারাদেশে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে, কালো টাকা বানিয়েছে। আমরা ক্ষমতায় এসে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের মূলোত্পাটন করেছি। বাংলাদেশে আর সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থাকবে না। কাউকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে দেয়াও হবে না।

বিএনপি জামায়াতের হরতাল-অবরোধে মানুষ সাড়া দেয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩৪ দিন অবরোধ দিয়ে বিএনপি-জামায়াত সারাদেশে ২৩৫ জন সাধারণ মানুষ, ২৬ জন যাত্রী ও ৫৫ জন চালককে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। বিএনপি-জামায়াতের কাছে হিন্দু-মুসলমান কেউই নিরাপদ নয়। ওরা গাড়ি পুড়িয়েছে, পূজামণ্ডপ পুড়িয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের দুই গুণ, দুর্নীতি আর মানুষ খুন। বিএনপি-জামায়াত শুধু ধ্বংস করতেই জানে। আর আমাদের লক্ষ্য দেশের কল্যাণ। আগামীতে আমরা প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেবো। ইতোমধ্যে আমরা বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা চালু করেছি, বিনা মূল্যে ৩০ কোটি বই শিশুদের হাতে তুলে দিয়েছি। সারাদেশে বন্ধ কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। সেখানে ২৮ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় ফ্লাট নির্মাণ করে মানুষের আবাস গড়ে তোলা হবে। উপজেলার একটি স্কুলে ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস নির্মাণ করা হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম হয়েছিলো গোপালগঞ্জে। খালেদা জিয়ার সেজন্য মন খারাপ হয়। তাই গোপালগঞ্জের মানুষদের তিনি গোপালি বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বলি, গোপালিরাই কপালি হয়। স্থানীয় দাবি সর্ম্পকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্ষায় পদ্মার ভাঙন থেকে রাজশাহীকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এজন্য পদ্মা নদীতে ড্রেজিং ও বাম তীরে স্থায়ী বাঁধ তৈরি করা হবে।

চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহম্মেদ পলক এমপি, সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হাছান মাহমুদ এমপি, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এমপি, সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, সাবেক শিল্পপ্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি, রাজশাহীর সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, নাটোর সদরের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল, রাজশাহী-৪ আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক ও রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন বক্তব্য রাখেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে উপজেলায় আশ্রয়ন প্রকল্প-২, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) স্থাপত্য ভবন, রাজশাহী সরকারি কলেজের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট ছাত্রীনিবাস, প্রকৌশল ও জরিপ ইনস্টিটিউটের বর্ধিত ভবন, রাজশাহী (উত্তর) ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, বাঘা উচ্চ বিদ্যালয়, দুর্গাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, দুর্গাপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, পুঠিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, পবা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, মোহনপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লে¬ক্স এবং বাঘায় বিদ্যুতের ৩১/১১ কেভি সাবস্টেশন ও নাটোরে পল্লী বিদ্যুত সমিতির ১০ কেভিএ সাবস্টেশনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগ: গতকাল শনিবার সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীতে অবতরণ করেন। ৩১তম বিসিএস ব্যাচের (পুলিশ) ১৭৬ জন শিক্ষানবীশ সহকারী পুলিশ সুপারের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অভিবাদন গ্রহণ, প্যারেড পরিদর্শন এবং বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী শিক্ষানবীশ সহকারী পুলিশ সুপারদের পদক প্রদান এবং তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন।

ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের পেশাগত দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পাশাপাশি জনগণের প্রতি সুশীল আচরণ গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগ করেছে। পুলিশ সদস্যদের দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষানবীশ সহকারী পুলিশ সুপারদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে রাখতে হবে, আপনাদের কাছে বিপদগ্রস্ত মানুষ আসে সাহায্যের আশায়। তারা যাতে অযথা কোনো হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সেবা প্রদান করতে হবে।

এরপর দুপুরে প্রধানমন্ত্রী পুলিশ একাডেমীর অফিসার্স মেস প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করেন। পুলিশ একাডেমীর অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার ও পুলিশ একাডেমীর অধ্যক্ষ নাইম আহামেদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মাঝে প্রধানমন্ত্রী চারঘাটে সরদহ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন-পূর্ববর্তী, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সহিংসতায় আহতদের সাথে মতবিনিময় করেন।