রাজনীতি : চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে নির্বাচনী হালচাল

দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী আ.লীগের-৬ বিএনপির-৪ জামায়াত-১ ও জাতীয় পার্টি-১

দর্শনা অফিস: জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২০১৯ সালের শুরুতেই। দিনক্ষণ এখনো নির্ধারণ না হলেও নির্বাচনের বাকি রয়েছে প্রায় ১৭ মাস। এরই মাঝে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের যেন ঘুম হারাম হয়ে গেছে। অবশ্য এখনও পর্যন্ত বিএনপির মনোয়ন প্রত্যাশীদের তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অনেকের অভিমত, পূর্বের গড়া ভাবমুর্তি নিয়ে চূড়ান্ত পর্বে নামবে মাঠে। নেমেই বাড়াবে গতি। আর ক্ষমতাসীন দলের স্বয়ং সংসদ সদস্য থাকলেও কেউ আসছেন হেলিকপ্টারে, কেউ ঢাকা থেকে দামি গাড়ি হাকিয়ে ঘুরছেন চুয়াডাঙ্গা-২ নির্বাচনী এলাকা। তাদের তরফে দেয়া অধিকাংশ প্রেসবিজ্ঞপ্তিতেই মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। এসব দেখে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মন্তব্য, রাজনীতির ধরনই বদলে গেছে। আগে নেতার মনে যায় থাকতো মুখে অন্তত জনসেবার ফুলঝুরিই ঝরতো। তার মধ্যে কিছুটা হলেও ছিলো জনসেবা। এখন? নেতা মানেই যেন এমপি হওয়া।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ১০ম জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। চুয়াডাঙ্গা-২ নির্বাচনী এলাকায় পরপর ২ বার নির্বাচিত হন আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী হাজি আলী আজগার টগর। সে হিসেব মতো বর্তমান সরকারের মেয়াদকাল ৩ বছর ৭ মাস পেরিয়েছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জনমত সৃস্টির জন্যে ছুটছেন শহর ও গ্রামগঞ্জে। করছেন সভা-সমাবেশ, পথসভা ও গণসংযোগসহ কূশল বিনিময়। তুলনামূলকভাবে অন্যান্য দলের তুলনায় ক্ষমতাশীন দল আ.লীগের সাম্ভাব্য প্রার্থী সংখ্যা রয়েছে বেশি। একাধীক প্রার্থী মাঠে থাকায় কদর বাড়ছে তৃর্ণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। জাতীয় দিবস, ঈদ-পূজা ও বিশেষ দিনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ছবি সংবলিত দৃষ্টি নন্দন তোরণ, রঙ-বেরঙের বিলবোর্ড, ব্যানার ও পোস্টার সাটিয়ে প্রার্থীতা জানান দেয়া হয়ে থাকে। বেশ আগে-ভাগেই নির্বাচনের মাঠ চষতে শুরু করেছেন ক্ষমতাশীন দল আ.লীগের ৬, বিএনপির ৪, জামায়াতে ইসলামীর ১ ও জাতীয় পার্টির ১ জন।

আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের পরপর ২ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য চুয়াডাঙ্গা জেলা আ.লীগের সহসভাপতি হাজি আলী আজগার টগর, জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযাদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, দর্শনা পৌর মেয়র পৌর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান, জেলা আ.লীগের সহসভাপতি নজরুল মল্লিক, কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্মসম্পাদক আমার সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক হাসেম রেজা। এমপি আলী আজগার টগর নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের সাথে সোহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে নিজের অবস্থান আরও মজবুত করে রেখেছেন। জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আজাদুল ইসলাম আজাদ প্রবীণ নেতা হিসেবে এলাকায় রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। জেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব পালনকালে এলাকার উন্নয়নের মধ্যদিয়ে নিজের পরিচিতি ও অবস্থান আরও শক্ত করেছেন মাহফুজুর রহমান মঞ্জু। দর্শনা পৌরসভায় ২ বার মেয়র নির্বাচিত হয়ে জনপ্রিয়তার সাক্ষর রেখেছেন মতিয়ার রহমান। শিল্পপতি নজরুল মল্লিক সম্প্রতি সময়ে ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে নিজের পরিচয় তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। কয়েকবার হেলিকপ্টর যোগে নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে এসে চমক সৃস্টি করেছেন হাসেম রেজা। বিএনপির সমর্থন প্রত্যাশী ৪ জনের মধ্যে রয়েছেন- চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক শিল্পপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু, জেলা বিএনপির অন্যতম সদস্য হাজি ইঞ্জিনিয়ার মোখলেসুর রহমান তরফদার টিপু, ৩ বার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য হাজি মোজাম্মেল হকের ছেলে জেলা বিএনপির সদস্য শিল্পপতি আতিকুল হক মিথুন ও দর্শনা পৌর বিএনপির সভাপতি তরুণ শিল্পপতি মাহমুদুর রহমান তরফদার শাওন। এলাকার মসজিদ, মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনুদানের পাশাপাশি দলীয় কার্যক্রমে নিজের অবস্থান মজবুত করে রেখেছেন মাহমুদ হাসান খান বাবু। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনুদান ও নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে নিজের পরিচিতি তুলে ধরেছেন ইঞ্জিনিয়ার মোখলেসুর রহমান তরফদার টিপু। সাবেক সংসদ সদস্য জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাজি মোজাম্মেল হকের ছেলে হিসেবে আতিকুল হক মিথুনের পরিচয়ের নেই ঘাটতি। তরুণ সমাজ সেবক ও উদিয়মান শিল্পপতি মাহমুদুর রহমান তরফতার শাওন দর্শনা পৌর বিএনপির নেতৃত্বে মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করেছেন। জামায়াতে ইসলামীর একাধিক কোনো প্রার্থী না থাকায় জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি রুহুল আমীন বেশ আগেই দলের নমিনি নির্বাচিত হয়ে ফুরফুরে মেজাজে নির্বাচনী প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী দেলোয়ার হোসেন দুলু নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠ চষে পরিচিতি লাভ করছেন। নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসবে প্রার্থীর সংখ্যা ততোই বাড়তে পারে বলে ধারণা করছে নির্বাচনী এলাকার মানুষ।