রাজধানীতে যানবাহন ভাঙচুর সংঘর্ষ আগুন

ঢাকা অফিস: টানা ৬০ ঘণ্টা হরতালের আগের দিনই ঢাকা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন এলাকার জামায়াত-শিবিরের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ, যানবাহনে আগুন-ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আবার বোমা বহন করতে গিয়ে বিস্ফোরণে বাহক নিজেই গুরুতর আহত হয়েছেন। যাত্রাবাড়ীতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে ছাত্রশিবির।

১৮ দলীয় জোটের ডাকা ৬০ ঘন্টা হরতালের সমর্থনে গতকাল রোববার রাতে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ৫টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আগুনে দাদী-নাতনি ও বাসচালকসহ অন্তত ৫ জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। আহতদের গাজীপুর সদর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন- নেত্রকোনার দুর্গাপুর এলাকার শেখ জামাল উদ্দিনের স্ত্রী রহিমা খাতুন (৫০), তার নাতনি সুমি (১০)। অপর অগ্নিদগ্ধদের নাম জানা যায়নি। অপর ঘটনায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এর এরিয়া ম্যানেজার ইয়াকুব আলী (৪০) আহত হয়েছেন।

জয়দেবপুর থানার ভোগড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নাজমুল ইসলাম জানান, চান্দনা চৌরাস্তা ও এর আশেপাশ এলাকায় কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও স্থানীয়রা আগুন নেভায়।

হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল রোববার সকাল থেকেই হরতাল সমর্থনকারীরা যানবাহনে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে খিলগাঁও সি-ব্লকের সামনে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করে। তারা কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ধাওয়া দেয়। মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোঁড়া হয়। এ সময় পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। প্রায় ১০ মিনিট পুলিশ ও হরতাল সমর্থনকারীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলে। এক পর্যায়ে পালিয়ে যায় মিছিলকারীরা। একই সময়ে মগবাজার মোড়ে জামায়াত-শিবির মিছিল বের করে। তারা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ বেধে যায়। এক পর্যায়ে মিছিলকারীরা পালিয়ে যায়। মিছিলকারীরা চার-পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করে। বেলা সোয়া ২টার দিকে রাজউক ভবনের বিপরীত পাশের সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তাছাড়া সকাল ১০টার দিকে মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলোনির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জনতা ব্যাংকের একটি স্টাফ বাসে আগুন দেয় কয়েক যুবক। বেলা ১টার দিকে বিএনপি অফিসের পাশে হোটেল অরচার্ড প্লাজার সামনে কয়েক যুবক একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেয়। এতে গাড়িটি পুরোপুরি পুড়ে যায়। এ সময় তারা কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। রমনা অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল করিম জানান, আনোয়ার নামের ওই যুবক সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাইপের মধ্যে করে শক্তিশালী বোমা নিয়ে কাঁটাবন এলাকায় যান। তিনি ওই এলাকায় পরপর দুটি বোমা ছোড়েন। একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়, আরেকটি অবিস্ফোরিত ছিলো। তৃতীয় বোমাটি তার কাছে থাকার সময়ই বিস্ফোরিত হয়। আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। আনোয়ার হোসেনের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীপুর। তার পিতার নাম হেমায়েত উদ্দিন। আনোয়ার বাড্ডার আফতাবনগরে থাকেন। তিনি মৌচাকের আনারকলি মার্কেটের ফুটপাতে কসমেটিকসের ব্যবসা করেন। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয় ছাত্রশিবির। কার্যালয়ে থাকা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি এবং আসবাবপত্র পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মধ্য বাড্ডায় জামায়াতে ইসলামী মিছিল বের করে যানবাহন ভাঙচুর করতে থাকে। পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুঁড়লে মিছিলকারীরা পালিয়ে যায়। বিকেল ৩টার দিকে গুলিস্তান এলাকায় মেয়র হানিফ উড়ালসড়কের নিচে গুলিস্তান-মাওয়া রুটের ইলিশ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাসির উদ্দিন জানান, বাসটি মাওয়া থেকে গুলিস্তানে পৌঁছানোর পর যাত্রীরা যখন নামছিলেন, তখন যাত্রীবেশে কেউ বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঢাকার ধামরাইয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক ও ঢাকা জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদের নেতৃত্বে সন্ধ্যায় বের হওয়া ছাত্রদলের মিছিলে পুলিশ ব্যাপক হামলা ও লাঠিচার্জ করে। এতে পুলিশ ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিকেলে গাজীপুরের টঙ্গীর চেরাগআলী ও কলেজ গেট এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর ককটেল বিস্ফোরণ ও পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের লাঠিপেটায় গাজীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান টঙ্গী থানা বিএনপির সভাপতি এসএম শাহানশাহ আলমসহ ১০ জন আহত হন। হরতাল সমর্থকরা ইটপাটকেল ছুড়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলন্ত গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ধাওয়া দিলে মিছিলকারীরা চলে যায়। ঘটনাস্থল থেকে ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে। প্রায় ৩০ রাউন্ড শর্টগান ও গ্যাসগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।