রাজধানীতে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ : আহত ১৩

টানা অবরোধের ১২তম দিন : সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার

 

স্টাফ রিপোর্টার: বিক্ষিপ্ত, সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনার মধ্যদিয়ে বিরোধী জোটের ডাকা অবরোধের ১২তম দিন পার হয়েছে। অবরোধ চলাকালে বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। রাজধানীতে অন্তত ৮টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। রমনা এলাকায় পুলিশের গাড়িতে ককটেল ও পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৩ পুলিশ সদস্য। তাদের মধ্যে ৫ জনকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি ৮জনকে ভর্তি করা হয়েছে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে। বিভিন্ন জেলায় গ্রেফতার হয়েছেন ২০ দলের বেশকিছু নেতাকর্মী। বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা এবং নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলার প্রতিবাদে দেশের কয়েকটি জেলায় হরতাল পালিত হয়েছে। আজ হরতাল ডাকা হয়েছে আরও কয়েকটি স্থানে। এদিকে টানা অবরোধে দেশের অনেক এলাকায় নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

রাজধানীর রমনা পার্কের গেটে পুলিশের একটি বাস লক্ষ্য করে ককটেল ও পেট্রোলবোমা হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে পুলিশের এক উপপরিদর্শকসহ ১৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশ জানায়, গতকাল রাত ৮টার দিকে পিজি হাসপাতাল ও বারডেম হাসপাতালে দায়িত্ব পালন শেষে নিজস্ব বাসে পুলিশ সদস্যরা রাজারবাগের পুলিশ লাইন্সে ফিরছিলেন। বাসটি রমনা পার্কের রমনা রেস্টুরেন্টের গেটের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাত বাস লক্ষ্য করে একাধিক ককটেল নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এতে বাসচালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আইল্যান্ডের ওপর তুলে দেন। এ সময় আজাদ নামে এক উপপরিদর্শকসহ ১৩ পুলিশ সদস্য আহত হন। আহত অন্য পুলিশ সদস্যরা হলেন- কনস্টেবল লিখন, মোরশেদ, মতিয়ার ও শামীম। এদের মধ্যে শামীমের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে। ঘটনার পর সহকর্মী ও পথচারীরা তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে ভর্তি করে। বাকি ৮জনকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) শিবলী নোমান বলেন, দুর্বৃত্তদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।

অপরদিকে অন্যান্য দিনের মতো গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। গতকাল দুপুরে পল্টন মোড় এলাকায় একাধিক ককটেল বিস্ফোরিত হয়। বেলা আড়াইটার দিকে উত্তর বাড্ডার ফুজি টাওয়ারের সামনে একাধিক ককটেল বিস্ফোরিত হয়। ফায়ার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় যাত্রাবাড়ী থানাধীন রায়েরবাগ পুনম সিনেমা হলের সামনে ঢাকা-কুমিল্লা রুটের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি)’র সুলতানা ইসলাম নামে এক ছাত্রী আহত হন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি অবনী শঙ্কর রায় জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মাদ বলেন, সুলতানার আঘাত তেমন গুরুতর নয়। বাসটিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সময় সে জানালা দিয়ে লাফ দেয়ায় তার পায়ে আঘাত লাগে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার পর প্রক্টরিয়াল বডির সহায়তায় তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

এদিকে সকাল ৭টায় কাফরুল বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় ওই বাসের চালক ও হেলপার নিজেরাই বাসটির আগুন নিভিয়ে ফেলেন। বিকেল ৪টায় দারুস সালাম থানাধীন টেকনিকেল মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ২টি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৩ ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সন্ধ্যায় ওই এলাকায় আরও একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। এ সময় সন্দেহভাজন একজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নিউ মার্কেট থানাধীন সিটি কলেজের সামনে একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। তবে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ওই আগুনের ঘটনার সম্বন্ধে তারা অবগত নন বলে জানিয়েছেন। সন্ধ্যায় হাতিরপুল বাজারে একটি ট্রাকে আগুন দেয়া হয়। প্রায় একই সময়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি সড়কেও একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, গণতন্ত্র পূনরুদ্ধারের দাবীতে গতকাল শনিবার সকালে মেহেরপুর শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে মেহেরপুরের ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থেকে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে শহরের বড়বাজারে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলের নেতৃত্ব দেন মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক এমপি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাসুদ অরুন। পৌর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, জেলা বিএনপির যুগ্মসম্পাদক মাহাবুবুর রহমান, জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক আব্দুর রহিম, জেলা ছাত্রদলের নেতা আহমেদ রাজিব খান, সোহেল হোসেনসহ ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা মিছিলে অংশ নেন।